শনিবার ৪ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হোমল্যান্ড লাইফের আইন কর্মকর্তা জুবায়েরকে অপসারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ১১ জুন ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   380 বার পঠিত

হোমল্যান্ড লাইফের আইন কর্মকর্তা জুবায়েরকে অপসারণ

গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগে অবশেষে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার (আইন কর্মকর্তা) মো. জুবায়ের রহমানকে অপসারণ/ টারমিনেশন করেছে কর্তৃপক্ষ।

ইতিপূর্বে হোমল্যান্ড লাইফের গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ ও নানা দুর্নীতির অভিযোগে দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি প্রত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রকাশিত অভিযোগের প্রেক্ষিতেই আইন কর্মকর্তাকে অপসারণ করা হয়েছে।

এছাড়াও হোমল্যান্ড লাইফের আইন কর্মকর্তাসহ ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যানের বরাবর বেশ কিছু সুনিদিষ্ট অভিযোগসহ একাধিক আবেদন জানিয়েছেন কোম্পানির ১২ পরিচালক। তাদের অনেকগুলো অভিযোগে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন “কোম্পানির যে সকল মামলা চলমান আছে তার বিবরণ এবং প্রত্যেক মামলার বিপরীতে মামলার শুরু থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মামলা অনুযায়ী আইনজীবী ফি, দাপ্তরিক ও টিএ/ডিএ এবং অন্যান্য খরচ যৌক্তিক ভাউচার ছাড়াই এমডি, কোম্পানি সচিব ও আইন কর্মকর্তা জুবায়েরের স্বাক্ষরে বিপুল টাকা ব্যয় করা হয়েছে। যাহা কোম্পানির কর্মচারী কর্তৃক আত্মসাৎ বলিয়া আমরা মনে করি”। এই ধরনের আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে আইন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ওই সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

গত ২৮ মার্চ দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকায় আইন কর্মকর্তাসহ ৩ কর্মকর্তাকে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে অপসারণে আইডিআরএ’র কাছে ১২ পরিচালকের আবেদন শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এছাড়া আইডিআরএ’র পক্ষ থেকেও হোমল্যান্ড লাইফের অনিয়ম ও দুর্নীতি উদঘাটনে অডিট টিম গঠন এবং পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন।

এদিকে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতেই গত ১ জুন হোমল্যান্ড লাইফের ডেপুটি ম্যানেজার (আইন কর্মকর্তা) মো. জুবায়ের রহমানকে অপসারণ / টারমিনেশন করেছে হোমল্যান্ড লাইফ কর্তৃপক্ষ। কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলের স্বাক্ষরে জারি করা অপসারণ/ টারমিনেশনের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে,‘আপনাকে ( জুবায়ের ) কোম্পানিতে প্রয়োজন নেই বিধায় পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তক্রমে ০১/০৬/২০২৩ ইং থেকে চাকরিচ্যুত/ টারমিনেশন করা হলো। এমতাবস্থায়, আপনার দেনা-পাওনার বিষয়ে প্রধান কার্যালয়ে হিসাব বিভাগের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া যাচ্ছে। আরও উল্লেখ্য যে, অত্র কোম্পানিতে দায়িত্বে থাকাকালীন আপনার দ্বারা আর্থিকসহ যে কোন ধরনের অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে, এই পত্র উক্ত অভিযোগ থেকে আপনাকে দায়মুক্ত করবে না।’

অপরদিকে চাকরিচ্যুতির বিষয়ে জুবায়ের রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এটা পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত। আমার কাজ তাদের ভালো লাগে নাই, আমাকে তাদের প্রয়োজন নেই। চাকরিচ্যুতির চিঠিতে উল্লেখ করা ‘কোম্পানিতে দায়িত্বে থাকাকালীন আপনার দ্বারা আর্থিকসহ যে কোন ধরনের অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে, এই পত্র উক্ত অভিযোগ থেকে আপনাকে দায়মুক্ত করবে না।’ এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলার শুরুতেই তিনি উচ্চস্বরে বলেন, চিঠি যেটা দিয়েছে সেটা রেগুলার ফরমেট করা। এরপর তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলতে থাকেন, ওটা আসমান থেকে পড়ে আপনার (সাংবাদিক) হাতে আসে নাই। আপনি যে পরিচয় দিয়েছেন কার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমাকে ফোন দিয়েছেন সেটাও আমি জানি। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, আমার পরিবারেও অনেক বড় বড় সাংবাদিক আছে। আমি কিন্তু ঢাকা শহরে এতিম না। এই জিনিসটা মনে রাইখেন। আপনি আমাকে কেন ফোন করেছেন? পরে তার বিরুদ্ধে প্রাপ্ত নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নানা বিষোদগার শুরু করেন এবং এক পর্যায়ে ফোনের লাইন কেটে দেন।

উল্লেখ্য, গত ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ ইং তারিখে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের কাছে আবেদনে হোমল্যান্ড লাইফের আইন কর্মকর্তাসহ প্রভাবশালী ৩ কর্মকর্তার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেন এবং গ্রাহক, কর্মকর্তা/কর্মচারী ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থে’ ওই কর্মকর্তাকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন কোম্পানির ভাইস-চেয়ারম্যান, উদ্যোক্তা ও স্বতন্ত্রসহ মোট ১২ পরিচালক। তাদেরকে অপসারণ ও শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
১২ পরিচালকের এই আবেদেন প্রেক্ষিতে গত ২৮ মার্চ দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি পাঠকদের জন্য পুনরায় তুলে ধরা হলো:

আবেদনকারী পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন, হোমল্যান্ড লাইফের ভাইস চেয়ারম্যান জামাল মিয়া, পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক, পরিচালক কামাল মিয়া, আব্দুর রব, ফয়জুল হক, জামাল উদ্দিন, আব্দুল হাই, আব্দুল আহাদ, শামীম আহমদ, এমাদুল ইসলাম, শওকতুর রহমান, ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী। আবেদনের অনুলিপি অর্থমন্ত্রী এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবরও পাঠানো হয়েছে।

আইডিআরএ চেয়ারম্যানের কাছে করা ওই আবেদনে হোমল্যান্ড পরিচালকরা মুখ্য নির্বাহীসহ হোমল্যান্ডের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, “(১)অফিস নির্বাহী কর্মকর্তা (মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, আইন কর্মকর্তা ও হিসাব কর্মকর্তা) সকল ধরনের গ্রাহক লেনদেনে সম্পৃক্ত। আমরা এ কাজে সরাসরি যুক্ত নই। আমাদেরকে এ বিষয় না জানালে আমরা বোর্ডে উপস্থাপন করে জানানোর চাপ দেই। এই আক্রোশে তারা আমাদের নামে মাগুরার আদালতে মিথ্যা মামলা করিয়ে আমাদের অসম্মানিত করেছে। (২) দায়েরকৃত মামলার বিষয়ে আদালতে যোগাযোগ করে জানতে পারি আমাদের নামে সমন এসেছিল। আমাদের সন্দেহ হয় যে, তারা ওই সমন আমাদের না দেখানোয় এবং সমনের বিষয় গোপন করেছিল বলেই আদালত ওয়ারেন্ট দিলে আমাদের (পরিচালকদের) কারাগারে যেতে হয়েছিল।

(৩) যেদিন পুলিশ আমাদের গ্রেপ্তার করে সেদিন পুলিশ আমাদের মৌখিকভাবে বলেছে যে, কখন পুলিশ আসলে আমাদের গ্রেপ্তার করা যাবে সে বিষয়ে এই নির্বাহীগণ গোপনে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেছিল। (৪) মামলা বিষয়ক সকল তথ্য তারা গোপন করায় পরিচালকবৃন্দের নিকট অবিশ্বাস গভীর হয়েছে। এর ফলে কোম্পানির পরিচালকবৃন্দ পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হবেন মর্মে আশঙ্কা করছি। (৫) ভবিষ্যতে এরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় ব্যক্তি নিরাপত্তায় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।”

আইডিআরএ চেয়ারম্যানের কাছে হোমল্যান্ড লাইফের ১২ পরিচালকের করা ওই আবেদনে আরো বলা হয়, “কোম্পানির বেশিরভাগ পরিচালক সন্দেহ করেন যে, এই নির্বাহীগণ তথ্য গোপন করে কোম্পানির কোটি কোটি টাকা লুটপাট করিতেছে। তারা বহাল থাকায় কোন তদন্ত বা নীরিক্ষা দ্বারা তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছেনা। তারা নিয়মিত দুর্নীতির প্রমাণ মুছে ফেলছে। তাদের অসহযোগিতার কারণে এই কোম্পানিতে কোন নিরপেক্ষ তদন্ত করাও সম্ভব নয়। তারা প্রায়ই দুর্নীতির প্রমাণ গায়েব করিতেছে এবং আমরা আয়-ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে কোন কিছুই তারা জানায় না। তারা কয়েক পরিচালকের আশকারায় দুঃসাহসী হয়ে আরো বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

তারা গ্রাহকের টাকা গ্রহণ করে এবং দাবি পরিশোধ করে। কিন্তু কার কাছ থেকে কত টাকা নেয় এবং কাকে কত টাকা দাবি পরিশোধ করতে হবে সে সকল সিদ্ধান্ত তারাই নেয় এবং এমনকি দাবি পরিশোধে পরিচালকদের বা বোর্ডের কোন অনুমতিও নেয় না। প্রকৃতপক্ষে তারা দাবি পরিশোধ না করার অপরাধে দায়ি হওয়া সত্ত্বেও তারা আসামী হয় না; অথচ নিরীহ পরিচালকরা মামলাভুক্ত হচ্ছেন। তারা কারসাজি করে কোম্পানির নিরপরাধ পরিচালকদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য নীরিহ গ্রাহকদের উৎসাহিত করে পরিচালকদের শায়েস্তা করার পথ নিয়েছে। এমন অমানুষ নির্বাহীগণের এই কোম্পানিতে থাকার প্রয়োজন নাই।”

হোমল্যান্ড পরিচালকদের আবেদনে বলা হয়, “গ্রাহক-লেনদেনে সম্পৃক্ত নির্বাহী কর্মকর্তাদের মামলায় জড়িত না হওয়া বা তাদের জবাবদিহিতা ব্যতীত সরাসরি কোম্পানির পরিচালকদের বিরুদ্ধে মামলায় জড়িতকরণ বিষয় এবং তাদের দ্বারা মামলাকারীর কাছে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ তথ্য-বিনিময়ের কারণে আমাদের মনে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। তারা এই কোম্পানিতে থাকিলে আরো অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে। উপরোক্ত দশ টি কারণে এই মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, আইন কর্মকর্তা ও হিসাব কর্মকতার বিরুদ্ধে যে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে সে কারণে তাদের এই কোম্পানিতে থাকা গ্রাহক ও পরিচালকদের জন্য আর ভাল হবে না। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার শেল্টারের কারণে দুর্নীতিবাজ আইন কর্মকর্তা ও হিসাব কর্মকতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে না। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে অপসারণ করা হলে কোম্পানির আইন কর্মকর্তা ও হিসাব কর্মকতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপনার দ্বারা আদেশ হইলে আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিচালক বোর্ড সভায় তাদের অপসারণে রেজুলেশন নেয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। এমতাবস্থায়, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের গ্রাহকের স্বার্থে বর্ণিত দুর্নীতিবাজ ও নিরীহ পরিচালকবৃন্দকে মামলাভুক্ত করার ক্লিকবাজিতে জড়িত মর্মে সন্দেহযুক্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে অপসারণের জন্য বিনীত আবেদন করছি।”

মুখ্য নির্বাহীসহ তিন কর্মকর্তাকে অপসারণের আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মো. হান্নান মিয়া বলেন, ‘শুনেছি এসব বিষয় নিয়ে আইডিআরএ তদন্ত কমিটি করেছে। হোমল্যান্ড পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকেও তিন পরিচালকের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন কি না কমিটি সে বিষয়ে তদন্ত করবে। তবে সহযোগিতার অভাবে তারা এখনো তদন্ত করতে পারছেন না।’ পরিচালকদের ঐক্য না থাকায় নেপথ্যের কারিগররা এসব কলকাঠি নাড়ছে। তাদেরকে আপনারাও চিনেন আমরাও চিনি।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৯:০২ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১১ জুন ২০২৩

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।