রবিবার ১৯ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতি বছর ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে: গ্লোফিই

দুর্নীতি-অর্থপাচার প্রতিরোধ ব্যর্থতায় সরকারের অর্জন ম্লান হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২   |   প্রিন্ট   |   76 বার পঠিত

দুর্নীতি-অর্থপাচার প্রতিরোধ ব্যর্থতায় সরকারের অর্জন ম্লান হচ্ছে

ঘুষ, দুর্নীতি আর অর্থ পাচার প্রতিরোধের ব্যর্থতায় সরকারের অনেক উন্নয়ন খাতের অর্জন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। অর্থপাচার প্রতিরোধ ও পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনার জন্য হাইকোর্টের কড়া নির্দেশনা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নানা তৎপরতা সত্বেও কাক্সিক্ষত সফলতা আসছে না।

প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রিত শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নানা কৌশলে আমদানি-রফতানিসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পাশাপাশি হুন্ডির আড়ালে এসব অর্থপাচার সহজেই পাচার হচ্ছে। গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (গ্লোফিই) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ২০২২ সালের ১০ মে ‘সময় মিডিয়া লিমিটেডে’ প্রকাশিত খবরে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে আমদানি-রফতানিসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কারসাজি আর হুন্ডির আড়ালে অর্থপাচার করছে পাচারকারী সিন্ডিকেট।

এদিকে ২০২২ সালের পুরো বছরই অর্থ পাচার, দুর্নীতি বন্ধে বছর জুড়ে সোচ্চার ছিলেন উচ্চ আদালত। বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে এবং সর্বস্তরে দুর্নীতি বন্ধে বিভিন্ন সময়ে নির্দেশনা, রুল জারিসহ নানা মন্তব্য করেন আদালত। চাঞ্চল্যকর পি কে হালদারসংশ্লিষ্ট অর্থ পাচার মামলা, কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আদালত পাড়া ছিল সরগরম।

গত ৮ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ বলেছেন, বেসিক ব্যাংকের টাকা লুটপাটকারীদের ‘শুট ডাউন’ করা উচিত। গত ২৬ অক্টোবর হাইকোর্ট অর্থ পাচার ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে দুদকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার কার্যক্রমে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন আপনারা ঘুমিয়ে আছেন। হাইকোর্ট বলেন, অর্থ পাচার ও দুর্নীতির ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স। কোনো দুর্নীতিবাজ বা অর্থ পাচারকারীকে ছাড় দেওয়া হবে না।

গত ১১ আগস্ট হাইকোর্ট বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার জবাব চেয়েছেন। অর্থপাচার হওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে; যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড চায়নাসহ আরও বেশ কয়টি দেশের নাম রয়েছে। আদালত পাচার করা টাকা ফেরত আনতে তিন মাসের মধ্যে আলোচিত ১০টি দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংস্থাটির আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) নির্দেশ দেন।

সূত্র মতে, সুইস ব্যাংকের কাছ থেকে তথ্য পেতে সরকার সঠিক চ্যানেলে যোগাযোগ করেনি বলে ঢাকায় সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতের এক বক্তব্য পত্রিকায় প্রকাশিত হলে আদালত সেটি আমলে নিয়ে এই প্রতিবেদন চায়। এরপর আদালতে দুদক এবং বিএফআইইউর পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ হলফনামা আকারে তথ্য জমা দেয়। ওই হলফনামায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় বিএফআইইউ প্রধানকে তলব করা হয়। আদালতের আদেশ অনুসারে বিএফআইইউ ফের প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে বলা হয়, বিদেশে অর্থ পাচারে জড়িতদের চিহ্নিত করা ও পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার জন্য প্রস্তাবিত রিসার্চ সেলে লোকবল পদায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করা হয়েছে। এটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

দুদকের সিনিয় আইনজীবী খুরশীদ আলম একাধিকবার গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারকারীদের সিন্ডিকেটের জড়িত প্রভাবশালী কতিপয় সংসদ সদস্য, বড় ব্যাংকার, সরকারী সাবেক ও বর্তমান আমলা, চাকরিজীবী এবং প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা। তাদের ক্ষমতা এবং প্রভাবের কারণে এই অপরাধ বন্ধ করা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, কাগজে কলমে ব্যাংকিং খাত এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি আছে। কিন্তু সেই নজরদারি যথেষ্টভাবে সক্ষমতার সঙ্গে কাজ করছে না।

আইনজীবী খুরশীদ আলম বলেন, টাকা পাচারের মাধ্যমে পুরো দেশকে আর্থিকভাবে অচল করে দেওয়া হচ্ছে, পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে। যারা টাকা পাচার করছে তাদের কয়েকজনকে যদি উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয় তাহলে পরবর্তীতে সবাই টাকা পাচার করতে ভয় পাবে। ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৪ বছরে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার তথ্য প্রকাশ করেছে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশ দেশ থেকে পাচার হওয়া কয়েক লাখ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ২১ কোটি টাকা ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে।

এদিকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আদালত প্রতিবেদনটি দেখে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনতে সরকার টু সরকার চুক্তি করতে নির্দেশ দিয়েছে। এটি বিএফআইইউর প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল না। এ কারণে নির্দেশ দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘পরবর্তী প্রতিবেদন দিতে আমরা আদালতের কাছে সময় চেয়ে আবেদন করলে আগাম ৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে।’ টাকা ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্য প্রমাণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা গ্রহণের জন্য এটি করা প্রয়োজন উল্লেখ করে তার যৌক্তিকতা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অবহিত করেছে বলেও জানানো হয়েছে।
অর্থ ফেরত আনার কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, পাচার করা অর্থ ফেরত আনা সম্পর্কিত মামলায় তথ্য-প্রমাণ বিদেশি রাষ্ট্র থেকে যথাসময়ে না পাওয়ার প্রেক্ষাপটে অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে বিদেশে পাচার করা সম্পদ ফেরত আনার বিষয়ে গঠিত টাস্কফোর্সের ষষ্ঠ সভা হয় ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি। সভায় পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্যপ্রমাণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা গ্রহণের জন্য ৬-৭টি দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনগত সহায়তা চুক্তি (এমএলএ চুক্তি) করার বিষয়টি পর্যালোচনার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, বিএফআইইউ ও বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের অংশগ্রহণে সভা আয়োজন করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পি কে (প্রশান্ত কুমার) হালদার ও তার সহযোগীরা ২০০৯-২০১৯ সালের মধ্যে চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চ জানতে চান, পি কে হালদারকে গ্রেফতার করে বিদেশ থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তা জানাতে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ ও দুদকে নির্দেশ দিয়ে ছিলেন আদালত।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৬:৫৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11222 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।