শুক্রবার ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের বার্ষিক প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন

নানা অনিয়ম ঘটিয়ে শিব শঙ্করের বিদায়

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২   |   প্রিন্ট   |   138 বার পঠিত

নানা অনিয়ম ঘটিয়ে শিব শঙ্করের বিদায়

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমাখাতের প্রতিষ্ঠান ঢাকা ইন্স্যুরেন্সে কোম্পানি লিমিটেডে প্রচলিত বীমা আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি ঘটেছে নানা অনিয়ম। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) আইন লঙ্ঘন করে যথাযথভাবে নিয়োগ অনুমোদন না নিয়েই ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শিব শঙ্কর সাহা স্বাক্ষর করেছিলেন প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক প্রতিবেদনসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ও দলিলে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অনুমোদন নেয়ার আগেই তিনি নিজের বেতন-ভাতার পাশাপাশি ড্রাইভারকেও বেতন দিয়েছিলেন। অথচ বীমা আইনে অনুমোদন ছাড়া এমন গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, দলিলে স্বাক্ষর ও বেতন-ভাতা গ্রহণে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অনুমোদনের আগে বেতন ভাতা নেওয়া বীমা আইনের লঙ্ঘন এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর বিধানের পরিপন্থী। আইডিআরএ’র স্মারক নং-

৫৩.০৩.০০০০.০৩২.১১.০১৭.১৯.০১ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তারপরও প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা শিবশঙ্কর সাহার নানামুখী অনিয়ম বিতর্কের সৃষ্টি করছে গোটা বীমাঙ্গনে।
সিইও নিয়োগের বিষয়ে আইডিআরএ’র এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা তো প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োগ সংক্রান্ত বিধান প্রতিটি বীমা কোম্পানিকে জানিয়ে দিয়েছি। কোম্পানিও যদি তারপর আইনের বিধান লঙ্ঘন করে তাহলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং আমরা কারো কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ২০২১ সালের ১ মার্চ ঢাকা ইন্স্যুরেন্সে সিইও পদে যোগদান করেন শিবশঙ্কর সাহা। পরবর্তীতে তার নিয়োগ অনুমোদনের জন্য যাবতীয় নথিপত্র আইডিআরএ প্রেরণ করে। নথিপত্র অনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হবার আগেই তিনি কোম্পানি থেকে যাবতীয় আর্থিক এবং অন্যান্য সুবিধা ভোগ করেন। পরবর্তীতে ৩ বছরের জন্য দায়িত্বভার পেলেও দেড় বছরও দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। বিদায় নেন ২০২২ সালের ১২ জুন। ঢাকা ইন্স্যুরেন্সে যোগদানের পূর্বে তিনি পিপল্স ইন্স্যুরেন্সে মুখ্য নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করেন। পিপলস ইন্স্যুরেন্সে দায়িত্ব পালনকালে নানা অবহেলা ও অব্যবস্থাপনা কারণে ১৮৮ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের দায়ভার কোম্পানির উপর বর্তায়। যে কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করার উদ্যোগ নেয়া হলে পিপল্স ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদের কাছে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরিচালনা পর্ষদ তাকে চাকরিচ্যুত না করলেও তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

বিনিয়োগকারী সূত্রে আরো জানা যায়, শিব শঙ্কর সাহা ঢাকা ইন্স্যুরেন্সে নিয়োগপ্রাপ্ত হন ২০২১ সালে অথচ তিনি অঙ্গতিপূর্ণ তথ্য সংবলিত ২০২০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেছিলেন। বার্ষিক প্রতিবেদন একটি কোম্পানির এক বছরের কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরে। স্বাক্ষরকালীন সময়ে তার নিয়োগ কর্তৃক অনুমোদিত হয়নি। তারপরও তিনি সিইও’র প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করে নিজেই আইন লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতা শুরু করেছিলেন।

এছাড়া বীমা আইন ও প্রবিধি অনুযায়ী আইডিআরএ কর্তৃক সিইও অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত কোন ব্যক্তি বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন না। এমনটি করা হলে তা অবৈধ এবং আইনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হয়, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে যদি কোন কোম্পানিতে সিইও নিয়োগ বা নবায়ন করতে হয় সেক্ষেত্রে নতুন নিয়োগ বা নবায়ন প্রস্তাব সিইও’র চলতি দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিন আগেই আইডিআরএ’র কাছে পাঠাতে হয়। পরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তা অনুমোদন অথবা বাতিল করে।

প্রতিষ্ঠানটির একজন বিনিয়োগকারী বলেন, আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পাবার আগে দায়িত্ব পালন করে তিনি কোম্পানি থেকে যে বেতন-ভাতা নিয়েছিলেন তা অবৈধ। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের টাকা এভাবে তছরূপ করার কোন ক্ষমতা তিনি রাখেন না। তাছাড়া বার্ষিক প্রতিবেদনে তার স্বাক্ষরের ফলে এর যথার্থতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এমনকি নানা ভুল তথ্য ও অসঙ্গতির জন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে লিখিত অভিযোগ করা হলে পুনরায় বার্ষিক প্রতিবেদন ছাপানোসহ কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে কোম্পানির উপর আর্থিক জরিমানা হলে এর অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল ও কোম্পানির অ-তালিকাভুক্তিসহ রেজিস্ট্রেশন বাতিলের হুমকিতে পরবে।

তিনি আরো বলেন, কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ২০২১ সালের ১ মার্চ নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ২০২০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের বিভিন্ন পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর করে আইন লঙ্ঘন করেছেন। বার্ষিক প্রতিবেদনেও করেছেন নানা ভুল আর অনিয়ম। তিনি বলেন, প্রতিবেদনে ক শ্রেণিভুক্ত পরিচালক শ্রী বিশ্বজিৎ সাহাকে উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে উপস্থাপন করলেও এম. মফিজুল ইসলামকে সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রতিনিধি হিসেবে দেখানো হয়েছে। অথচ বোর্ড অব ডাইরেক্টরস তালিকায় বিশ্বজিৎ সাহাকে ভট অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের প্রতিনিধি হিসেবে দেখানো হয়েছে। প্রতিবেদনের এক পৃষ্ঠায় উদ্যোক্তা পরিচালক অপর পৃষ্ঠায় প্রতিনিধি যা বার্ষিক প্রতিবেদনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনে বেমানান। তিনি বলেন, বিশ্বজিৎ সাহার সুপারিশে শিব শঙ্কর সাহাকে ঢাকা ইন্স্যুরেন্সে নিয়োগ দেয়া হয়। যার ফলে বিশ্বজিৎ সাহাকে খুশি করার প্রয়াসে তিনি তাকে উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে উপস্থাপন করে আইনের ব্যতয় ঘটিয়েছেন।

এছাড়া ডিক্লারেশন অন ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টস সিইও অ্যান্ড সিএফও হেডে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসারের স্বাক্ষর দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে তারা উল্লেখ করেছেন ভায়োলেশন অব দ্য কোর্ড অব কনডাক্ট পরিপালন করেছেন, কিন্তু প্রতিবেদনে আইন পরিপালন না করেও পরিপালন করেছেন বলে টিক চিহ্ন দিয়ে আইনের লঙ্ঘন করেছেন। পরিচালকদের বর্ণনা দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো পরিচালকের ছবি ছাড়া তেমন কোনো বর্ণনা প্রতিবেদনে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকার পক্ষ থেকে ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের প্রাক্তন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা শিব শঙ্কর সাহার কাছে মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি মিটিং আছি বলে ফোনকল কেটে দেয়। পরে তাকে আরো বেশ কয়েকবার মোবাইল ফোনে কল দেয়ার পরও তিনি কল রিসিভ করেননি।

এতো অনিয়মের বিষয়ে ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আহসান উল্লাহকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা আইনের মধ্যে থেকে সব কিছু করেছি। আমাদের এখানে আইনের কোন ব্যত্যয় হয়নি। বার্ষিক প্রতিবেদনে অনুমোদনহীন একজন মুখ্য নির্বাহীর স্বাক্ষর ও ভুল তথ্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমাদের যে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে তা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে। তারা তো কোন ভুল ধরেনি। ভুল থাকলে তো তারা আমাদের জরিমানা করতে পারতো।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৪:২৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।