
বিশেষ প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 176 বার পঠিত
আইন অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে বীমা দাবি নিষ্পত্তির বিধান থাকলেও নানা অজুহাতে বছরের পর বছর শত শত কোটি টাকার পুনঃবীমা দাবি নিষ্পত্তি না করে ঝুলিয়ে রেখেছে খোদ রাষ্ট্রায়ত্ত পুনঃবীমা কোম্পানি সাধারণ বীমা কর্পোরেশন। ফলে যথা সময়ে গ্রাহকের বীমা দাবি পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে বেসরকারি নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো। ভাঙতে হচ্ছে স্থায়ী আমানত। ক্ষেত্রবিশেষে ব্যাংক ঋণ নিয়েও গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করতে হচ্ছে কোনো কোনো কোম্পানিকে। অন্যদিকে যথা সময়ে দাবি না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়ায় বীমার প্রতি আস্থা কমছে গ্রাহকদের। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে নন-লাইফ কোম্পানিগুলোর পাঠানো অনিরীক্ষিত তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের কাছে পুনঃবীমা দাবি বাবদ কোম্পানিগুলোর পাওনা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। বিপরীতে পুনঃবীমা প্রিমিয়াম বাবদ কোম্পানিগুলোর কাছে কর্পোরেশনের পাওনা রয়েছে এক হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা। এসব পাওনা সমন্বয় করা হলেও সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের কাছে কোম্পানিগুলোর পাওনা দাঁড়ায় অন্তত হাজার কোটি টাকা। যদিও বছরটিতে কোম্পানিগুলোর এই পুনঃবীমা দাবির পরিমাণ মাত্র ৫৭৪ কোটি টাকা বলে দাবি করেছে কর্পোরেশন।
এই বিপুল পরিমাণ পুনঃবীমা দাবি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে চলতি বছরের ২০ মে একটি ত্রিপক্ষীয় সভা করে আইডিআরএ। আইডিআরএ’র তৎকালীন চেয়ারম্যান ও সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় ১০ দফা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যার অষ্টম দফায় বলা হয়, কর্পোরেশন ও নন লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো পুনঃবীমা সংক্রান্ত দেনা পাওনার বকেয়া প্রিমিয়াম ও বকেয়া বীমা দাবির হিসাব ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত করবে এবং একটি ঐকমত্যে পৌঁছাবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। উল্টো ট্রিটি ক্যান্সেল করার মতো ঘটনা ঘটেছে। সভায় ৯০ দিনের মধ্যে বীমা দাবি নিষ্পত্তি, বীমা আইনের বিধি-বিধানের আলোকে লস এডজাস্টমেন্ট এবং অডিট রিপোর্ট ও ব্যালেন্সশিটের ফিগার দেখে লস এডজাস্টমেন্ট না করার সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। কোম্পানি সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানটি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে পুনঃবীমার প্রিমিয়াম আদায়ে যতটা তৎপর; তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি ‘অনীহা’ বীমা দাবি পরিশোধে। বিদেশি রি-ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো যেখানে শুধুমাত্র সার্ভে রিপোর্ট ও লস ইন্টিমেটেডের ভিত্তিতে পুনঃবীমা দাবির অর্থ পরিশোধ করে দেয়। সেখানে নানা অপ্রয়োজনীয় নথিপত্র চেয়ে দাবি নিষ্পত্তি নিয়ে টালবাহানা করে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন।
আইডিআরএ অনুষ্ঠিত ত্রিপাক্ষিক ওই সভায়ও এসব বিষয় তুলে ধরেন নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর মুখ্য নির্বাহীরা। ওই সভার কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, সভায় পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নিবাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান বলেন, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন অনেক ক্ষেত্রে কালক্ষেপণ করে বীমা দাবি নিষ্পত্তি না করে ফেরত প্রদান করছে। সাধারণ বীমা কর্পোরেশন যতক্ষণ পর্যন্ত না অপপবঢ়ঃধহপব দিচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ডেবিট নোটও পাঠাচ্ছেন না, ফলে কোম্পানি পুনঃবীমা প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে পারছে না।। তিনি আরও বলেন, বীমা দাবি নিষ্পত্তির আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে ফায়ার ব্রিগেড রিপোর্ট। বীমা দাবি নিষ্পত্তিতে ফায়ার ব্রিগেড রিপোর্ট বাধ্যতামূলক নয়। আগুন লাগার প্রমাণক হিসেবে কোম্পানিসমূহ ফায়ার ব্রিগেড রিপোর্ট সংরক্ষণ করে থাকে। তিনি ফায়ার ব্রিগেড রিপোর্টের দরকার নেই বলে সভায় অভিমত প্রকাশ করেন। এছাড়াও, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন নতুন নতুন বাড়তি অনেক কাগজপত্র চায় যা প্রকারান্তরে অপ্রয়োজনীয় ও সময় সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায় বলে তিনি দাবি করেন।
গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ ফরহাদ আব্বাস হোসেন বলেন, বীমাকারী কোম্পানিসমূহ যেভাবে বীমা দাবি নিষ্পত্তি করছে সেটার লস এডজাস্টমেন্ট রিপোর্টটিকেই সাধারণ বীমা কর্পোরেশন প্রমাণক হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। ফায়ার ব্রিগেড ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে কি না সেটার একটা ফিজিক্যাল এভিডেন্স নিয়ে সেটাকেই সাধারণ বীমা কর্পোরেশন গ্রহণ করতে পারে। ফায়ার ব্রিগেড রিপোর্ট সংগ্রহ করা সময় ও ব্যয় সাপেক্ষ হয়ে পড়েছে। তিনি পুনঃবীমা দাবী পরিশোধ সহজ করার দাবি করেন ওই সভায়।
এশিয়া ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইমাম শাহীন সভায়- বীমা দাবি নিষ্পত্তিতে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের বোর্ডের অতিরিক্ত দলিল-দস্তাবেজের চাহিদাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন যে সকল কাগজপত্রের চাহিদা প্রদান করে যার সাথে বীমা দাবি নিষ্পত্তি সংক্রান্ত বিদ্যমান আইনের কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ বিদেশি পুনঃবীমাকারীরা, যাদের সাথে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনও পুনঃবীমা করে থাকে, তারা শুধুমাত্র সার্ভে রিপোর্ট ও লস ইন্টিমেটেডের ভিত্তিতে পুনঃবীমা দাবির অর্থ পরিশোধ করে থাকে। তিনি বীমা দাবি নিষ্পত্তিতে বাড়তি ও অপ্রয়োজনীয় তথ্যাদি চাওয়ায় কারণে বীমা দাবি নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হচ্ছে যা বীমা আইনের সাথে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেন।
রূপালী ইন্স্যুরেন্সের উপদেষ্টা পি কে রায় বলেন, ফেকাল্টিটিভের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় ফেকাল্টিটিভের প্লেসমেন্ট সাধারণ বীমা কর্পোরেশন দিতে পারছে না কিংবা দিতে দিতে ১০/১৫ কিংবা এক মাস সময় লেগে যায়। এই সময়ের মধ্যে যদি ক্লেইম হয়ে যায় তবে তার দায় কার? সাধারণ বীমা কর্পোরেশন যদি প্রিমিয়াম পরিশোধের সময়সীমা বেঁধে দেয় এবং সেই সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলো প্রিমিয়াম পরিশোধ করে তাহলে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের বীমা দাবি পরিশোধ করতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। পুনঃবীমা বীমা দাবি নিষ্পত্তির জন্য তিনি আলাদা একটি চেক লিস্ট তৈরির অনুরোধ করেন। যে চেক লিস্ট অনুযায়ী কোম্পানিগুলো দলিলাদি দাখিল করবেন। যদিও সম্প্রতি ওই চেকলিস্টের একটি খসড়া তৈরি করে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসেসিয়েশনের মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। খসড়া চেকলিস্টেও অনেক অপ্রয়োজনীয় নথিপত্র দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে অংশীজনরা জানিয়েছেন।
ওই সভায় উপস্থিত নন-লাইফ বীমা খাতের অংশীজনরা আরো বলেন, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন পুনঃবীমা প্রতিষ্ঠান হিসেবে যেভাবে বীমা দাবি নিষ্পত্তি করছে সেটি কোনো আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। তাই বীমা আইন সংশোধনে এই বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সাধারণ বীমা কর্পোরেশন কোম্পানিগুলোর সাথে পিএসবির অংশটাও এডজাস্টমেন্ট করে। পিএসবির এই অর্থ নগদ দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন তারা। সাধারণ বীমা কর্পোরেশন যে সমস্ত কোম্পানির নিকট পুনঃবীমা প্রিমিয়াম বকেয়া পাবে না, সেসমস্ত কোম্পানির বীমা দাবিও সাধারণ বীমা কর্পোরেশন পরিশোধ করছে না মর্মে অভিযোগ উত্থাপন করেন। এই সমস্যার কারণ হিসেবে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের পরিচালনা পর্ষদকে দায়ী করেন এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের বীমা গ্রাহক সুরক্ষা গাইডলাইন সাধারণ বীমা কর্পোরেশনকে মেনে চলার অনুরোধ জানান সংশ্লিষ্টরা। আন্তর্জাতিক রীতি হচ্ছে প্রিমিয়াম ও বীমা দাবি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পরিশোধ করা। সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সাথে দেনা পাওনার হিসাব ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করার আগ্রহ প্রকাশ করেন সভায় উপস্থিত অংশীজনরা।
সভায় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ খালেদ হোসেন বলেন, বীমা একটা চুক্তি। সেই চুক্তি অনুযায়ী যেখানে যেভাবে বলা রয়েছে সেখানে সেভাবে মেনে চলা উচিত। তিনি আরও বলেন, কান্ট্রি লিমিট সাধারণ বীমা কর্পোরেশন করে থাকে; কিন্ত কান্ট্রি লিমিট সাধারণ বীমা কর্পোরেশন করতে পারে কি না কিংবা পারলেও কতটুকু করতে পারবে সে বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। বিশেষকরে বৈদেশিক পুনঃবীমা, রিটেনশন ও ট্যারিফ নিয়ে পরবর্তীতে একটি সভার আয়োজন করার তিনি প্রস্তাব করেন।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের তৎকালীন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, মানুষ বীমা করছে ঝুঁকি নিরসনের জন্য। সে ঝুঁকি নিরসন হবে যদি বীমা দাবি সঠিক সময়ে সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করা যায়। তিনি বলেন, সকল বীমা দাবি নিষ্পত্তিতে ফায়ার ব্রিগেড রিপোর্ট শুধুমাত্র অগ্নি দুর্ঘটনার প্রমাণক হিসেবে প্রয়োজন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে অগ্নিকান্ডের ক্ষতি নির্ধারণের জন্য ফায়ার ব্রিগেড রিপোর্টের প্রয়োজন হতে পারে। ফায়ার ব্রিগেড রিপোর্টের জন্য বীমা দাবি বছরের পর বছর ঝুলে থাকবে সেটা কাক্সিক্ষত নয়। তিনি বলেন, বীমা দাবি নিষ্পত্তিতে বীমা গ্রহীতার অপ্রয়োজনীয় দলিল দস্তাবেজ ও বাড়তি কাগজপত্র চেয়ে বীমা দাবি নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা বাড়ানো বীমা খাতের জন্য মঙ্গলজনক নয়। বীমা দাবি নিষ্পত্তিতে দাখিলকৃত দলিলাদি ভুল কিংবা সত্য প্রমাণিত না হলে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন বীমা দাবি খারিজ করার এখতিয়ার রাখে। তবে এটা একটা আইন- বিধি অনুসরণ করে হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়ম- কানুন অনুসরণ করা উচিত। আবার সার্ভে রিপোর্টের ক্ষেত্রে তিনি ভালো মানের সার্ভেয়ার নিয়োগ দেয়ার পরামর্শ দেন। এজন্য পুনঃবীমা সংক্রান্ত বীমা দাবি নিষ্পত্তিতে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনকে একটি নীতিমালা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের চেকলিস্ট তৈরির পরামর্শ দেন।
সভায় উপস্থাপিত তথ্য বিশ্লেষণে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ও বীমা কোম্পানিসমূহের দেনা-পাওনার হিসাবে ব্যাপক তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। সভায় সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ হারুন অর রশিদ বলেন, ফার্স্ট ইন্টিমেটেড সার্ভে রিপোর্টে বীমা দাবীর পরিমাণ অনেক বেশি হয়। তিনি আরও বলেন, বছরের পর বছর বীমা দাবি বকেয়া থাকার কারণ হচ্ছে- বীমা দাবি নিষ্পত্তির জন্য কোম্পানিসমূহের কাক্সিক্ষত সহযোগিতার অভাব। তারা সঠিকভাবে নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজনীয় দলিলাদি দাখিল করতে পারছে না। সার্ভে রিপোর্ট না পাওয়া আরেকটি বড় কারণ। সার্ভে রিপোর্ট দাখিল করার জন্য কোম্পানিসমূহকে বার বার তাগাদা দিতে হয়। এছাড়া বীমাকারী প্রতিষ্ঠান পুনঃবীমা প্রিমিয়াম সঠিক সময়ে পরিশোধ না করলে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের পক্ষে বীমা দাবি পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। এসব কারণে বীমা দাবি নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হয় বলে তিনি সভাকে অবহিত করেন।
ত্রিপক্ষীয় ওই সভায় বিস্তারিত আলোচনা শেষে ১০ দফা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যার মধ্যে রয়েছে- বীমা আইন, বিধি, প্রবিধান, সার্কুলার অনুসরণপূর্বক বীমা/পুনঃবীমা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে; সাধারণ বীমা কর্পোরেশন চুক্তিবদ্ধ বীমাকারীর পুনঃবীমা প্রিমিয়াম আদায় ও পুনঃবীমা দাবি নিষ্পত্তির জন্য সেপ্টেম্বর ২০২৪ এর মধ্যে একটি নীতিমালা তৈরি করবে; পুনঃবীমা দাবির জন্য সাধারণ বীমা কর্পোরেশন প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের একটি চেক লিস্ট তৈরি করবে; বীমা ও পুনঃবীমা চুক্তির বিষয়ে বীমাকারী ও পুনঃবীমাকারীকে আবশ্যিকভাবে চুক্তি পরিপালন করতে হবে;
বীমা আইনের বিধি-বিধানের আলোকে লস এডজাস্টমেন্ট করতে হবে এবং অডিট রিপোর্ট ও ব্যালেন্সশিটের ফিগার দেখে লসএডজাস্টমেন্ট করা যাবে না; সকল প্রতিষ্ঠানকে বীমা গ্রাহক সুরক্ষা গাইডলাইন, ২০২৪ ও বীমা দাবি ব্যবস্থাপনা গাইডলাইন, ২০২৪ মেনে চলতে হবে; বীমা আইন অনুযায়ী ৯০ দিবসের মধ্যে বীমা দাবি নিষ্পত্তি করতে হবে; সাধারণ বীমা কর্পোরেশন এবং অন্যান্য বীমাকারী কোম্পানিগুলো পুনঃবীমা সংক্রান্ত দেনা পাওনার বকেয়া প্রিমিয়াম ও বকেয়া বীমা দাবির হিসাব ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখের মধ্যে চূড়ান্ত করবে এবং একটি ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে; বীমাকারী প্রতিষ্ঠানকে বীমা দাবি নিষ্পত্তির জন্য যথাসময়ে সার্ভেয়ার নিয়োগ দিতে হবে এবং একই সার্ভেয়ারকে বারংবার নিয়োগ প্রদান বন্ধ করতে হবে; পুনঃবীমার ক্ষেত্রে বীমাকারী প্রতিষ্ঠানকে বীমা দাবির দ্রুততম সময়ের মধ্যে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের নিকট প্রয়োজনীয় দলিলাদি দাখিল করতে হবে।
তবে খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইডিআরএ’র ত্রিপাক্ষিক ওই সভায় গৃহীত এসব সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা সাধারণ বীমা কর্পোরেশন প্রতিপালন করছে না। বীমা কোম্পানিগুলোর পাওনা না দিয়েই উল্টো পুনঃবীমা প্রিমিয়ামের জন্য চাপ দিচ্ছে, নোটিশ অব ক্যান্সেলন পর্যন্ত দিয়েছে। আইনগতভাবে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন এটি পারে না। প্রথমত, তাদের কাছে পাওনা বীমা দাবির অর্থ কোম্পানিগুলোকে পরিশোধ করতে হবে। এরপর প্রিমিয়ামের জন্য চাপ দিতে হবে।
বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির (বিজিআইসি) মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহমেদ সাইফুদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের উচিত ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির কাছে কোম্পানিগুলোর দাবি বাবদ যা পাওনা আছে তা প্রিমিয়ামের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করে রিশিডিউল করা। কোম্পানিগুলোর কাছে পাওনা থাকলে তারা সে অনুযায়ী পরিশোধ করবে। আর নতুন ট্রিটি পেমেন্ট নিয়মানুয়ী কোম্পানিগুলো দিতে থাকবে। এ ধরনের ব্যবস্থা না করে ট্রিটি ক্যান্সেল করে দেয়া হচ্ছে। আইনগতভাবে এটি কতটা যৌক্তিক? তারা বীমা দাবি নিষ্পত্তি না করে ঝুলিয়ে রাখার কারণে আমরা যথাসময়ে গ্রাহকের দাবি শোধ করতে পারছি না। এতে বীমার প্রতি গ্রাহকের অনীহা সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের জিডিপিতে নন-লাইফ বীমার কন্ট্রিবিউশন আরো কমবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাত সংশ্লিষ্ট একাধিক অংশীজন ব্যাংক বীমা অর্থনীতিকে বলেন, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন কোন কোন দাবি নিষ্পত্তি করতে এক যুগ পরে এসেও নতুন নতুন ডকুমেন্টস চায়; যা কোম্পানিগুলোর জন্য সংগ্রহ করা কঠিন। এভাবে করলে কখনোই দাবি নিষ্পত্তি হবে না। কোনো কোনো দাবির ক্ষেত্রে সার্ভেয়ার রিপোর্ট দেয়ার পরেও কর্পোরেশন দাবির অর্থ হ্রাস করেন। সার্ভেয়ার চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়ার পর এর সুযোগ নেই। কিন্তু এটি হচ্ছে। অনেক সময় গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক প্রতিবেদন চাওয়া হয়, যেখানে ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ থাকবে। নানা জটিলতার কারণে এটি অনেক প্রতিষ্ঠানই এসব বার্ষিক প্রতিবেদনে আনে না। কিন্তু কর্পোরেশন চায়। যদিও বীমা দাবির সঙ্গে এই প্রতিবেদন কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক নয়।
খাত সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সাধারণ বীমার দায়িত্বশীল জায়গা থেকে পঞ্চাশ শতাংশের বেশি পুনঃবীমা গ্রহণে অনীহা দেখানো হয়। নির্ধারিত অংশের বাকিটা বিদেশে পুনঃবীমার জন্য বলা হয়। যা মূলত বিদেশে অর্থ পাঠানোর দিকেই উৎসাহিত করে। একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবসা না নিয়ে এভাবে বিদেশে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত করতে পারে কি না সেই প্রশ্নও তুলেছেন তারা।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের যদি সক্ষমতা না থাকে তাহলে পুনঃবীমা শর্তে পরিবর্তন আনারও দাবি তোলেন তারা।
কোম্পানিগুলোর এসব অভিযোগ ও পুনঃবীমা দাবি নিষ্পত্তিতে ব্যর্থতাসহ সংম্লিষ্ট বিষয়ে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের বক্তব্য জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ হারুণ-অর-রশিদের সঙ্গে ফোনে কথা বলার চেষ্টা করলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠালেও তার কোনে জাবাব দেননি তিনি।
Posted ২:২৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
bankbimaarthonity.com | rina sristy