বৃহস্পতিবার ২ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না জাল টাকার কারবারিদের

আদম মালেক   |   বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   394 বার পঠিত

প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না জাল টাকার কারবারিদের

বেপরোয়া জাল টাকার কারবারিরা। কোনোভাবেই তাদের প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। অভিজাত গুলশান-বনানীসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে গোপনে চলছে জাল টাকা তৈরির এ কর্মযজ্ঞ। ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরেও সক্রিয় এ চক্র। মাঝে মধ্যে গ্রেফতার হলেও জামিনে বেরিয়ে এসে ফের এ অবৈধ কারবারে জড়িয়ে পড়ে বলে গোয়েন্দা সূত্রের দাবি।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে অর্ধ-শতাধিক গ্রæপ জাল টাকা তৈরি এবং বিপণনে জড়িত। আগে প্রতিটি উৎসবের আগে জালনোট তৈরির চক্র সক্রিয় থাকলেও এখন তাদের তৎপরতা সারা বছর। ভেজাল টাকা নিখুঁত করার ব্যাপারে প্রতিযোগিতাও চলে। যেই চক্রের টাকা যত নিখুঁত, দামও তত বেশি। আর এসব কাজে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত বলে তথ্য মিলেছে।

গত সপ্তাহে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও মগবাজারে পৃথক অভিযানে বিপুল পরিমাণ জাল টাকাসহ গ্রেফতার হয়েছে দুটি চক্রের সদস্যরা। চলতি বছরে এ সংক্রান্ত শতাধিক মামলা হয়েছে। গোয়েন্দারা বলছেন, গ্রেফতারের পর চক্রের সদস্যরা সহজেই জামিন পাওয়ায় আরো বেপরোয়া হয়ে জাল টাকা তৈরি ও বাজারজাত করছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গত ১ ডিসেম্বর ২০ লাখ টাকার জালনোটসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সুমন মিয়া (৩০), বিপ্লব হোসেন (৩২) মো. রাজিব শিকদার (৩৫)।

এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ কমিশনার বায়েজীদুর রহমান জানান, মোহম্মদপুর থানার ঢাকা উদ্যানের সামনে থেকে গ্রেফতারকৃত সুমনের কাছ থেকে ১০ লাখ জাল টাকা উদ্ধার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিপ্লবের কাছ থেকে ৬ লাখ রাজিবের কাছ থেকে আরো ৪ লাখ জাল টাকা উদ্ধার করা হয়। একই চক্রের এ তিন সদস্য জব্দকৃত ২০ লাখ জাল টাকা প্লাস্টিকের বাজারের ব্যাগে বহন করছিল।

গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর মগবাজার থেকে দুই লাখ টাকার জালনোটসহ দু’জনকে গ্রেফতার করে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উত্তরা বিভাগ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- হানিফ গাজী (৪৬) ও ইয়াছিন মোল্লা ওরফে আব্দুল হান্নানকে (৫৩)। ডিএমপির জনসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি) ওয়ালিদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, গ্রেফতারের পর তারা দুজন এ চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকারও করেছেন। পরে দুই জালনোট কারবারির বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা হয়।

জাল টাকা তৈরি ও বিপণনের কাজে জড়িত চক্রের সদস্যরা তিনভাগে বিভক্ত। একটি গ্রæপ অর্ডার অনুযায়ী জালনোট তৈরি করে, অপর গ্রæপ টাকার বান্ডিল পৌঁছে দেয়, আরেক গ্রæপ এসব টাকা বাজারে ছড়িয়ে দেয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত তিন ধরনের জালনোটের অস্তিত্ব মিলেছে। এর মধ্যে ‘ওয়াশ নোট’ নামের জালনোটের কদর সবচেয়ে বেশি। আসল ১০০ টাকার নোট দিয়ে এটি তৈরি করা হয়। ১০০ টাকার নোট প্রথমে রাসায়নিক দিয়ে সাদা করা হয় এবং পরে প্রিন্টারের মাধ্যমে ৫০০ টাকার জালনোট বের করা হয়। এক লাখ টাকা মূল্যমানের এই ‘ওয়াশ নোট’ বিক্রি হয় ৪০-৫০ হাজার টাকা।

এ ছাড়া আর্ট পেপারে তৈরি জাল ১০০টি এক হাজার টাকার নোট বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। তৃতীয়ত. খসখসে কাগজে তৈরি এক লাখ টাকা মূল্যমানের ১ হাজার টাকার জালনোট ২৫-৩০ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাঝে মধ্যেই জালনোটের কারবারিকে গ্রেফতার করে। এ চক্রগুলো সহজেই জামিন পাওয়ার সুযোগে দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে জাল টাকা তৈরি ও বাজারজাত করছে। গোয়েন্দারা বলছেন, এ চক্রের সঙ্গে জড়িতরা ধরা পড়ার পর সহজেই জামিনে বেরিয়ে আসে। এতে জাল টাকার অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করা যাচ্ছে না। বরং দিনের পর দিন বেপরোয়া গতিতে বাড়ছে জাল টাকার ব্যবসা।

সূত্রগুলো বলছে, জাল টাকা ব্যবসায়ী একজন যখন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে কারাগারে যায়, তখন ওই পরিবারের অন্য সদস্যরা এ ব্যবসায় যুক্ত হয়ে পড়ে। যদি কারো স্বামী পুলিশের হাতে ধরা পড়ে, তাহলে তার স্ত্রী বা ভাই অথবা বোন যুক্ত হয়ে যাচ্ছে জাল টাকা ব্যবসায়। আবার পিতা ধরা পড়লে তার সন্তানরা ক্রমান্বয়ে জড়িয়ে পড়ছে এ কাজে। এতে জাল টাকার ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে জাল টাকা চক্রের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ রয়েছে। শুধু তাই নয়, এর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযানও চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গ্রেফতার করা হচ্ছে জাল টাকাসহ চক্রের সদস্যদের। তবে গ্রেফতার অভিযানের পরেও চক্রের মূলহোতারা বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাল টাকা কারবারিরা ১০০০, ৫০০ ও ১০০ টাকার নোট বেশি জাল করছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও যথাযথ তদন্ত হয় না। কিছু মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হলেও দুর্বল তদন্তের কারণে আসামিরা জামিন পেয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে আসামি শনাক্ত না হওয়ায় আদালত মামলা খারিজ করে দেয়।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।