শুক্রবার ৭ মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x
সাধারণ বীমা কর্পোরেশন

ফ্যাসিস্টের সহযোগী হারুন এখনও এমডি পদে বহাল

  |   শনিবার, ০১ মার্চ ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   229 বার পঠিত

ফ্যাসিস্টের সহযোগী হারুন এখনও এমডি পদে বহাল

ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের পতনের পরেও রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে বহাল তবিয়তেই রয়ে গেছেন আওয়ামী লীগের একচেটিয়ে এজেন্ডা বাস্তবায়নে এগিয়ে থাকা অতিরিক্ত সচিব মোঃ হারুন অর রশিদ।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুন অর রশিদ পেশাগত দায়িত্ব পালনে যতটা না আন্তরিক ছিলেন তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যতিব্যস্ত ছিলেন আওয়ামী লীগ আর শেখ পরিবারের তোষামোদিতে। এই তোষামোদির মাধ্যমে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নির্বাহী পরিচালক থেকে বাগিয়ে নেন সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ। ২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পাওয়ার পর যোগ দিয়েই কর্পোরেশনে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন তিনি। আইডিআরএ’র নির্বাহী পরিচালক থাকাকালে আলোচিত বীমা কোম্পানি সোনালী লাইফের সিইও’র কাছ থেকে নিয়মিত বখরা নেয়ার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।

সূত্র বলছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় গোটা দেশ যখন ক্ষোভে উত্তাল তখনও তিনি ব্যস্ত ছিলেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজে। সাধারণ বীমা কর্পোরেশন থেকে নানা অজুহাতে আর্থিক অপচয়ের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি রিইন্স্যুরেন্স ট্রিটি নবায়ন না করে অনেক নন লাইফ বীমা কোম্পানিকে বিদেশে পুনঃবীমা করতে বলছেন তিনি। এতে মূলত বিদেশে ডলার পাঠানোকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। যা বীমা খাতের জন্য দীর্ঘ মেয়াদের ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলা হচ্ছে, আগস্টের শুরুতে শেখ হাসিনার পতনের শেষ মুহূর্তে ৪ তারিখে শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উদযাপনের জন্য এক লাখ ৬৭ হাজার টাকা খরচের অনুমোদন দেন তিনি। এর অংশ হিসেবে দেড় লাখ টাকার অগ্রিম চেকও অনুমোদন করেন তার বিভাগের জুনিয়র অফিসার ও জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা আরিফুর রহমানের নামে। এসব অর্থ ছাড় দেয়ার সময় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে গিয়ে বিলম্ব হওয়ায় এক কর্মকর্তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করে দেয়ার অভিযোগও আছে হারুনের বিরুদ্ধে।

শেখ হাসিনার পলায়নের কারণে শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী শেষ পর্যন্ত পালন করা না হলেও সেই অর্থ কী কাজে খরচ হয়েছে তারও হদিস নেই। এরপর অগ্রিম তোলা সেই অর্থও সমন্বয় করা হয়েছে সুকৌশলে। শেখ হাসিনা যেদিন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় সেদিন বিকেলে ধানমন্ডির আবাহনী ক্লাব মাঠে শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তক অর্পণসহ তার জীবনী নিয়ে আলোচনার পরিকল্পনার গুরু ছিলেন হারুন।

সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের নানা অনিয়মের বরপূত্র তারই সহযোগী শাহ আলম। জেনারেল ম্যানেজার পদমর্যাদার এই কর্মকর্তাকে দিয়েও নানা অনিয়ম নির্বিঘ্নে করিয়ে থাকেন হারুন অর রশিদ। শেখ হাসিনা পরিবারের জন্য অন্তপ্রাণ এই কর্মকর্তা শেখ মুজিবের ৪৯তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের জন্যও লক্ষাধিক টাকার বিল করেন। ডিজিটাল ব্যানার, স্ট্যান্ড ব্যানার, ড্রপ ডাউন ব্যানারসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য এক লাখ ১৫ হাজার টাকা খরচ করেন তিনি। ভ্রমণ ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ও বিবিধ খাত দেখিয়ে কয়েকজনের যোগসাজসে আত্মসাত করেন সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের অর্থ।

অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হারুন পেশাগত কাজে তেমন বিচক্ষণ না হলেও পদ-পদবী বাগিয়ে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানোর কাজে বেশ পাকা। স্বৈরাচারের দোসরদের সঙ্গে যোগসাজসে এর আগেও তিনি সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। আইডিআরএ-তে দায়িত্ব পালনের সময় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে ব্যর্থ এ কর্মকর্তা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বাগিয়ে নেন সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ।

আইডিআরএ দায়িত্ব পালনের সুবাদে সখ্যতা হয় তখনকার আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারীর সঙ্গে। সেই জয়নুল বারী এখন সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান। তার সঙ্গে আগে থেকে ভালো জানা-শোনার সুযোগে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনে একচেটিয়া দাপট চালিয়ে যাচ্ছেন হারুন অর রশিদ। স্বৈরাচারের দোসর হওয়ার পরও অন্তর্বর্তী সরকার সেদিকে নজর দেয়নি। তিনিও বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় আড়াল করতে সমর্থ হয়েছেন। নিজের তাগিদ থেকে নয়, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি দিবস উদযাপনে বাধ্য হয়েছেন বলে নিজ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে তুলে ধরেন। আর এখন নিজেকে বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা হিসেবে জাহির করতে ব্যস্ত। সেই সুবাদে সচিব পদে পদোন্নতির অপেক্ষায় তিনি। হারুন-অর রশিদ শিগগিরই সচিব পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন এমন গুঞ্জনও রয়েছে। এ অবস্থায় স্বৈরাচারের চিহ্নিত দোসর হারুন অর রশিদ কীভাবে সচিব পদে পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন তা নিয়েও বিস্মিত খোদ তার কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে হারুন অর রশিদের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।

 

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৮:৫৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০১ মার্চ ২০২৫

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।