শুক্রবার ৩ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাড়তি ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ে প্রশ্নের মুখে ঢাকা ইন্স্যুরেন্স

বিবিএনিউজ.নেট   |   মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   597 বার পঠিত

বাড়তি ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ে প্রশ্নের মুখে ঢাকা ইন্স্যুরেন্স

সম্পদ পুনর্মূল্যায়নের পর পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতির বিপরীতে আয়করের জন্য কোনো প্রভিশন রাখা হয়নি। কোম্পানির গ্র্যাচুইটি ফান্ডেও নিয়ম মেনে অর্থ স্থানান্তর করা হয়নি। সেইসঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নির্দেশিত সীমার বেশি ব্যবস্থাপনা ব্যয়ও করা হয়েছে। এসব অভিযোগ উঠেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে। বিষয়গুলোতে আপত্তি দিয়েছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ম্যাবস অ্যান্ড জে পার্টনারস।

তথ্যমতে, ২০১৮ সালে সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন করেছে ঢাকা ইন্স্যুরেন্স। অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড মেনে পুনর্মূল্যায়নের সময় কোম্পানির বিদ্যমান সব সম্পদ বিবেচনায় নেওয়া হয়। কিন্তু ঢাকা ইন্স্যুরেন্স দুটি জমির মধ্যে একটির পুনর্মূল্যায়ন করিয়েছে। মিউটেশন প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় রাজধানীর ওয়ারির টয়েনবি সার্কুলার রোডের প্রায় ২৬ শতক জমির পুনর্মূল্যায়ন না করে ক্রয়মূল্যকেই ওই জমির বর্তমান মূল্য হিসেবে দেখানো হয়েছে। আর সম্পদ পুনর্মূল্যায়নের পর ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আয়করের জন্য প্রায় ৭৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা প্রভিশন রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু সম্পদ পুনর্মূল্যায়নের পর আয়করের জন্য কোনো প্রভিশন রাখেনি কোম্পানিটি, যে কারণে এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান।

ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আবুল হাশিম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘জমির মিউটেশন প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে আছে। এটা করে জমিটির ভ্যালুয়েশন করানো হলে কোম্পানির সম্পদ বেড়ে যাবে। এজন্য আমরা কাজ করছি। নিরীক্ষকের আপত্তির পর ভ্যালুয়েশন রিজার্ভের আয়করের জন্য প্রভিশন রাখার পদক্ষেপ নিয়েছি। আগামীতে নিয়ম মেনে ওই খাতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখা হবে।’

এদিকে কোম্পানিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পৃথক গ্র্যাচুইটি ফান্ড রয়েছে। ফি-বছর প্রদানযোগ্য গ্র্যাচুইটির পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে ওই ফান্ডে অর্থ স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু ঢাকা ইন্স্যুরেন্স কোনো ধরনের হিসাবনিকাশ না করে মাত্র এক লাখ টাকা ওই ফান্ডে হস্তান্তর করেছে। এটিও বিদ্যমান নিয়ম-কানুনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

সম্পদ পুনর্মূল্যায়নের পর আয়করের প্রভিশন না রাখা ও গ্র্যাচুয়িটি ফান্ডে অর্থ স্থানান্তরে গরমিলের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে বাড়তি ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের অভিযোগও উঠেছে। ওই বাড়তি ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের বিষয়টিকেও সামনে এনেছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ম্যাবস অ্যান্ড জে পার্টনারস।

তথ্যমতে, ২০১৮ সালে প্রায় ১৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা নৌ-বিমা প্রিমিয়াম আয় করেছে ঢাকা ইন্স্যুরেন্স। বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নির্দেশনা অনুযায়ী, সাধারণ বিমা কোম্পানি হিসেবে ওই প্রিমিয়ামের আয় থেকে তিন কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যবস্থাপনা ব্যয় করার কথা। কিন্তু সর্বশেষ সমাপ্ত বছরে চার কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে ঢাকা ইন্স্যুরেন্স। অর্থাৎ নৌ-বিমা ক্ষেত্রে নিন্ত্রয়ক সংস্থার বেঁধে দেওয়া সীমার চেয়েও প্রায় ৮০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা বেশি ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে কোম্পানিটি।

নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্যমতে, সম্পদ পুনর্মূল্যায়নের পর রিজার্ভের বিপরীতে আয়করের জন্য প্রভিশন, দাবি বিবেচনায় গ্রাচ্যুয়িটি ফান্ডে অর্থ স্থানান্তর ও বাড়তি ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের প্রভাব কোম্পানির আয়-মুনাফার ওপর পড়েছে। তাই ওই তিন বিষয়ে আপত্তি তুলেছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে কোম্পানির তরফে কোনো ব্যাখা আর্থিক প্রতিবেদনে দেওয়া হয়নি।
ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা একিউএম ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘আমরা এর আগের ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের নির্দেশনা মেনে কাজ করছিলাম। আর্থিক বছরের শেষদিকে এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দেওয়া নতুন নির্দেশনা এসেছে, যে কারণে ওই আর্থিক বছরে নতুন নির্দেশনা পুরোপুরি কার্যকর করা যায়নি। আগামীতে ব্যবস্থাপনা ব্যয় নির্দেশিত সীমার মধ্যে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের আপত্তিগুলো আমরা গুরুত্বসহ নিয়েছি। এসব বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, ২০০০ সালে সাধারণ বিমা ব্যবসা শুরু করে ঢাকা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। এরপর ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। প্রায় ৪০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনি ওই কোম্পানিটির প্রায় চার কোটি এক লাখ শেয়ারের মধ্যে ৬১ দশমিক ৩৫ শতাংশই উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে। এর বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৬ দশমিক ৭১ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে শূন্য দশমিক ০৯ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ ২৮ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৩:৫৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।