বিবিএনিউজ.নেট | শনিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট | 769 বার পঠিত
বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার খান আতাউর রহমান ১৯২৮ সালের ১১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। খান আতা নামে পরিচিত এই গুণীজন একাধারে সুরকার, গায়ক, সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার, প্রযোজক, সংলাপ রচয়িতা ও কাহিনীকার ছিলেন। তার কাজ বাংলাদেশি সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্রকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছে। খান আতা মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইরের রামকান্তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম জিয়ারত হোসেন খান, মায়ের নাম যোহরা খাতুন। মা আদর করে ডাকতেন ‘তারা’ নানার পরিবার ছিল মাজারের খাদিম। ধর্মীয় উরসে তার মামা নানারকম আধ্যাত্মিক সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। এইসব ঘটনা তার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
১৯৩৭ সালে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ঢাকা জিলা সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় প্রথম হন তিনি। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানি পরিচালক আখতার জং কারদারের পরিচালনায় ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ অবলম্বনে নির্মিত ছবি ‘জাগো হুয়া সাভেরা’তে মূল ভূমিকাতে অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র জীবনের সূত্রপাত হয়। তার বিপরীতে ছিলেন তৃপ্তি মিত্র নামের ভারতীয় অভিনেত্রী। এ ছবির সহকারী পরিচালক ছিলেন জহির রায়হান। চলচ্চিত্রে তিনি ‘আনিস’ নামটি ব্যবহার করতেন। তার অভিনীত প্রথম বাংলা ছবি এহতেশাম পরিচালিত ‘এদেশ তোমার আমার’ মুক্তি পায় ১৯৫৯ সালে। এই ছবিতে তিনি সঙ্গীত পরিচালক হিসেবেও কাজ করেন।
১৯৬০ সালে জহির রায়হানের সঙ্গে গড়ে তোলেন লিটল সিনে সার্কেল। তার অভিনীত অন্যান্য উল্রেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো- কখনো আসেনি (১৯৬১), কাঁচের দেয়াল (১৯৬৩), সাত ভাই চম্পা (১৯৬৮), মনের মত বউ (১৯৬৯), জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০), আবার তোরা মানুষ হ (১৯৭৩) ও সুজন সখী (১৯৭৫)। তার প্রথম পরিচালিত ছবির নাম ‘অনেক দিনের চেনা’ (১৯৬৩) মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাস্তবতা নিয়ে তৈরি করেন ‘আবার তোরা মানুষ হ’ (১৯৭৩) মুক্তিযুদ্ধের উপর ১৯৯৪ সালে তিনি ‘এখনো অনেক রাত’ নামের একটি ছবি তৈরি শুরু করেন। ১৯৯৭ সালে ছবির কাজ শেষ হয়। কিন্তু সেন্সর বোর্ড ছবির ৭ টি স্থানে দৃশ্য কেটে ফেলার নির্দেশ দেয়ায় ক্ষুব্ধ হন তিনি। তার পরিচালিত অন্যান্য ছবির মধ্যে রয়েছে- রাজা সন্ন্যাসী, নবাব সিরাজউদ্দৌলা (১৯৬৭), সাত ভাই চম্পা (১৯৬৮), অরুণ বরুণ কিরনমালা (১৯৬৮), জোয়ার ভাটা (১৯৬৯), মনের মত বউ (১৯৬৯), সুজন সখী (১৯৭৫), দিন যায় কথা থাকে, আরশীনগর ও পরশ পাথর। এছাড়া তিনি ‘কবি জসীম উদ্দীনের জীবনী’, ‘গঙ্গা আমার গঙ্গা’ ও ‘গানের পাখি আব্বাস উদ্দিন’ নামে ৩টি তথ্যচিত্রও নির্মাণ করেন। গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে ১৯৬২ সালে ‘সূর্যস্নান’ ছবিতে কলিম শরাফীর কন্ঠে তিনি উপহার দেন ‘পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া রে’। ১৯৬৩ সালে জহির রায়হানের ‘কাঁচের দেয়াল’ ছবিতে ‘শ্যামল বরণ মেয়েটি’ গানটি খুবই জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৬৯ সালে জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিতে তিনি ‘এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে’ শিরোনামের কালজয়ী গানটি লিখেন ও কন্ঠ দেন। ১৯৭০ ও ৮০ এর দশকে উপহার দেন সাবিনা ইয়াসমীনের কন্ঠে ‘এ কি সোনার আলোয়’ ও শহনাজ রহমতুল্লাহের কন্ঠে ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে এর মতো গান’. চলচ্চিত্র, আধুনিক ও দেশাত্মবোধক মিলিয়ে তিনি প্রায় ৫০০ গানের রচিয়তা। গীতিকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো- এ দেশ তোমার আমার (১৯৫৯), কখনো আসেনি (১৯৬১), সঙ্গম (১৯৬৪), বাহানা (১৯৬৫), নবাব সিরাজউদ্দৌলা (১৯৬৭), অরুণ বরুণ কিরনমালা (১৯৬৮), সাত ভাই চম্পা (১৯৬৮), জোয়ার ভাটা (১৯৬৯), মনের মত বউ (১৯৬৯), জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০), আবার তোরা মানুষ হ (১৯৭৩) ও সুজন সখী (১৯৭৫)। ‘সূর্যস্নান’ ছবির গীতিকার হিসেবে এবং ‘কাঁচের দেয়াল’ ছবির সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে পাকিস্তান ফিল্ম ফেস্টিভালে ১৯৬৫ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পান। মুক্তিযুদ্ধে তার উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে দেশাত্মবোধক গান লিখেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ করে সাহায্য করেন। এছাড়া তার চলচ্চিত্র ও গানে দেশ ও মানবতার কথা বারে বারে উঠে এসেছে। খান আতাউর রহমান তিনবার বিয়ে করেন। লন্ডনে থাকাকালীন সময়ে তিনি শার্লি নামক এক ইংরেজ নারীকে বিয়ে করেন। বাংলাদেশে আমিন নামে এক ছেলে হওয়ার পরে তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর তিনি সঙ্গীত শিল্পী মাহবুবা হাসনাতকে বিয়ে করেন। তাদের মেয়ে কন্ঠশিল্পী রুমানা ইসলাম। ১৯৬৮ সালে প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী নিলুফার ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন। খান আতা এবং নিলুফারের ছেলে আগুন বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় সঙ্গীতশিল্পী।
Posted ৪:০২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed