শুক্রবার ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বীমা ব্যবসা-শিক্ষিত জনশক্তি ও আর্থিক বুনিয়াদ

মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ   |   রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   690 বার পঠিত

বীমা ব্যবসা-শিক্ষিত জনশক্তি ও আর্থিক বুনিয়াদ

বীমা শিল্প এখন বিকাশমান। বীমা নিয়ে অতীতে অনেক নেতিবাচক কথা হলেও সেটা অনেকটা কমে এসেছে। এখন দরকার এই শিল্প বিকাশে দক্ষ হাতে নার্সিং করা, যার উদ্যোগ ইতিমধ্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছেন।

এতদিন আমাদের অনেকের কাছেই অজানা ছিল যে, বাংলাদেশের স্থপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আমাদের মতো বীমা জগতেরই একজন সদস্য ছিলেন, তিনি ষাট দশকে আলফা বীমা কোম্পানিতে ১ মার্চ থেকে কর্মরত ছিলেন। তাই ১ মার্চকে সরকারের পক্ষ থেকে বীমা দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে রইলো শত সহস্র বিনম্র ভালোবাসা।

প্রকান্তরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই শিল্পের উন্নয়নের জন্য যা করণীয় তা তিনি করবেন এবং শিল্পের শৃঙ্খলা বজায় রেখে সরকারি রাজস্ব খাতে অবদান রাখার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, বীমাশিল্পে যারা জড়িত রয়েছেন তাঁর প্রতিটি কথা বাস্তবায়নে নিরলস চেষ্টা করে যাবেন।

আমাদের অর্থমন্ত্রীর মুখে শুনেছি যে, তিনি ছাত্রাবস্থায় বীমার উপর একটি বই লিখেছিলেন। ছাত্র অবস্থায় বইটি প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলে তার অত্যন্ত প্রিয় একজন শিক্ষকের নামে তা প্রকাশ করেছিলেন এবং শিক্ষক যৌথ লেখক হিসেবে তার নাম যুক্ত করে তাঁকে সম্মানিত করেছিলেন।

আমি যখন ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে মাস্টারস্ ডিগ্রিতে পড়ি তখন আমার ইন্স্যুরেন্স টার্ম পেপার ছিল। রি-ইন্স্যুরেন্স শিখার জন্য ১৯৮১ সনে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের পুনঃবীমা বিভাগে প্রায় এক মাস ইন্টার্নশিপ করে হাতে কলমে শিখে রিপোর্ট জমা দিয়ে ওই বিষয়ে পাস করতে হয়েছিল। ওই সময় সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন মোরশেদ স্যার। সে সময়ের পুনঃবীমার বিভাগের কর্মকর্তারাও আমাদের বিশেষভাবে সহায়তা করেছিলেন। তাছাড়া সিরাজুল ইসলাম স্যারও আমাদের উৎসাহ দিয়েছিলেন যিনি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের প্রধান ছিলেন, এখন পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত আছেন।

১৯৮৪ সালে ভাগ্যের টানে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি কোর্স কমপ্লিট করে গ্রামীণ ব্যাংকের অডিট ডিপার্টমেন্টে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে যোগদান করি। গ্রামীণ ব্যাংক সবেমাত্র প্রজেক্ট থেকে ব্যাংক হিসেবে প্রেসিডেন্ট এরশাদ স্বীকৃতি দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট এরশাদের দূরদর্শিতায় এবং আমার শ্রদ্ধেয় স্যার ড. মুহাম্মদ ইউনুসের দক্ষতা, দূরদর্শী মানবিক মূল্যবোধের কারণে গ্রামীণ ব্যাংক আজ বিশ্বের বুকে একটি উদাহরণ হয়ে আছে। যার মডেল পৃথিবীর অনেক দেশেই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। স্যার এই কাজের যথাযোগ্য স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশকে পৃথিবীর মানচিত্রে এক বিরল মর্যদায় বসিয়েছেন।

আমার বাবার শরীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটার কারণে গ্রামীণ ব্যাংকের কাজে গ্রামগঞ্জে ঘোরা বাদ দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের ওসিএ প্রফেশনের এক বন্ধুর হাত ধরে ১৯৮৬ সালে প্রগতি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগদান করি। আমি প্রগতি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মিহির দা, আমার শ্রদ্ধেয় স্যার মীর হোসেনের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। যিনি আমাকে হাতেকলমে শিখিয়েছন ইন্স্যুরেন্স কি, কীভাবে ডক্যুমেন্ট ইস্যু করতে হয়, বীমা গ্রহীতাদের সাথে কীভাবে আচরণ করতে হয়, পত্রালাপ করতে হয়, Telex ঞবষবী-এর Wording কিভাবে লিখতে হয়। অবলিখন, পুন:বীমা, দাবী সংক্রান্ত কাজ তাঁর কাছ থেকেই শিখেছি। এক কথায় তিনি আমার ইন্স্যুরেন্স গুরু।

দেখতে দেখতে বীমাশিল্পে ৩৪টি বছর কিভাবে কেটে গেলো টেরও পেলাম না। ২৮ বছর বিভিন্ন কোম্পানিতে বীমার বিভিন্ন শাখায় কাজ করে অবশেষে ২০১৩ সনের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে কর্মরত আছি। বীমা ব্যবসা এখন আর পেশা নয় এটা অর্থনৈতিক উন্নতি ও গ্রাহকসেবার নেশা। সে প্রেক্ষিতেই দীর্ঘদিন বীমাশিল্পের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকার কারণে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কিছুটা শেয়ার করার জন্য এই লেখা। কেউ আমাকে বিজ্ঞ বা সমালোচক বলে ভুল বুঝবেন না, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ৬১-৬২নং সার্কুলারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বিভিন্ন সময় কর্তৃপক্ষ ও বিআইএর মতামত প্রকাশ করেছিলাম পরবর্তীতে অনেক কিছুই সংশোধিত হয়ে ৬৪-৬৫নং সার্কুলার পূর্ণাঙ্গতা পেয়েছে। আশা করি, নন-লাইফ বীমাশিল্পে কর্মরত কর্মকর্তারাও আমার এই ভাবনার সাথে অনেকাংশে একমত হবেন।

বীমা ব্যবসা একদিনে হয় না, দীর্ঘ সাধনার ফল। যারা দীর্ঘদিন ধৈর্য সহকারে টিকে থাকতে পারে তারাই বীমায় সফলকাম হতে পারে। কি লাইফ, কি নন-লাইফ। ঝরে পড়া লোকের সংখ্যাই অধিক, গুটি কয়েক লোক কেবল সাফল্যের হাসি হাসতে পারে। এই কারণেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বা শিক্ষিত তরুণ-তরুণী বীমাশিল্পে কাজ করতে আগ্রহী হয় না। কেহই তার জীবন থেকে কয়েকটি বছর ট্রাই অ্যান্ড এরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায় না। সবাই চায় নিশ্চিত চাকরি, দুটো পয়সা কম তাতে অসুবিধা নেই্, শান্তি চাই। টার্গেট-বিহীন নিশ্চিন্ত ঘুম চাই।

বর্তমানে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে মার্কেট কারেকশন চলছে। নিয়ম নৈতিকতার মধ্যে বীমাশিল্পে কর্মরত কয়েক লাখ কর্মী কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বীমা পরিবারের বেশ কয়েকজন উচ্চ শিক্ষিত জনবল বীমা শিল্পে মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। এদের বিকাশ কিন্তু একদিনে হয়নি, এদের পেছনে তাদের বাবা-মার অবদান অনেক । তাঁরাই তাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং পথের নির্দেশনা দিয়েছেন। নিশ্চয়ই তারা ভাগ্যবান যে উত্তরসূরি সৃষ্টি করতে পেরেছেন।

ইদানীং কিছু মেধাসম্পন্ন ছেলেমেয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়ে তাদের পূর্বসূরিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চাঁন কিন্তু এই ক্ষেত্রে বাঁধা হলো তারা পরিচালকদের সন্তান নন, তারা ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা অধস্তন কারো সন্তান। আগেই বলেছি মার্কেট কারেকশন চলছে একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা অধস্তনের প্রচুর বীমা ব্যবসা রয়েছে কিন্তু তিনি তা থেকে বেনিফিট নিতে পারছেন না বা কোম্পানি তার ব্যবসার জন্য আলাদাভাবে মূল্যায়িত করছে না, তাহলে তার ব্যবসার বেনিফিশিয়ারি কে হবেন? তাহলে তৃতীয় কোনো পক্ষকে দাঁড়া করলে তো সেই আগের অবস্থা অর্থাৎ ড্যামি সৃষ্টি করতে হয়, তার চেয়ে কারো ব্যবসার জন্য তাঁর ছেলেমেয়েদের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে কীভাবে সহায়তা করা যায়, তা আমাদের ভেবে দেখতে হবে।

কোম্পানির জন্য যারা ধ্যানজ্ঞান রেখে নির্দিষ্ট বেতনের বিনিময়ে কাজ করছেন, তাদের সন্তানেরা বাবা-মার বা কারো স্নেহের সহযোগিতার মাধ্যমে যোগ্যতর হিসেবে বীমাশিল্পে জায়গা করে নিতে চাইলে অবশ্যি কোনো বাধা থাকার কথা নয়। আর থাকলেও তা বীমাশিল্পের স্বার্থে শিক্ষিত জনবল সৃষ্টির লক্ষ্যে তা বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। কর্মীর হাতকে শক্তিশালী করে শিল্পে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টির প্রয়াস নিতে হবে।

একজন ডেস্ক কর্মী সারাদিন তাঁর কাজ করেও তাঁর কানেকশন বা প্রফেশনালিজমের কারণে তাঁর মেধা, শিক্ষা, যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদির মাধ্যমে কোম্পানির জন্য ব্যবসা সংগ্রহ করলে, কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁর কিছু চাওয়া পাওয়া থাকতেই পারে। গিভ অ্যান্ড টেকের দুনিয়ায় তার প্রাপ্যটা তাকে না দিলে সে ব্যবসা আনবে কেন? সে যদি ব্যবসা না আনে কোম্পানি ব্যবসা হারাবে আর সে তার ব্যবসা তৃতীয়পক্ষ কারো কাছে বিক্রি করবে বা অন্যের নামে দেখিয়ে বা অন্য কোম্পানিতে ব্যবসা দিয়ে সে ঠিকই বেনিফিট নিয়ে নিবে। এটা বন্ধ করতে হলে উন্নয়ন কর্মকর্তার মতো তাদের ব্যবসা আহরণে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কোন পন্থা বের করার সময় এসেছে। এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে ভেবে দেখতে হবে।

পৃথিবীব্যাপী বীমা ব্যবসায় যারা উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন তাদের আয় আনলিমিটেড। তাদের নিয়োগই দেয়া হয় এইভাবে, ব্যবসা আনতে পারলে টাকা পাবে, না আনতে পারলে পাবে না। পৃথিবীতে সকল কাজেরই বিনিময় মূল্য আছে। পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। বর্তমান ডিজিটাল যুগে পরিশ্রম, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, মেধা ইত্যাদির মাধ্যমেই অর্থনীতির চাকা ঘূর্ণায়মান রাখতে হয়।

যদি এমন হয় উন্নয়ন কর্মকর্তাদের টার্গেট দিয়ে বাজারে ছেড়ে দেয়া হলো, মাস শেষে টার্গেট পূরণ না হলেও তাদের পূর্ণ বেতন দেয়া হবে, তবে কি কেউ টার্গেট পূরণে বা ব্যবসা আনতে সচেষ্ট হবেন? এর ব্যতিক্রমও হতে পারে। হাতে গোনা কয়েকজন হয়তো টার্গেট পূরণ করবেন আর বাকিরা তাঁর সুবিধা ভোগ করবেন। এইভাবে কতদিন চলবে? কথায় আছে বসে খেলে রাজার ধনও এক সময় শেষ হয়ে যায়। এক সময় কোম্পানিও দেউলিয়া হয়ে যাবে, এভাবে ফ্রি বেতন দিতে থাকলে।

তাই উন্নয়ন কর্মকর্তাদের টার্গেটের বিপরীতে আনুপাতিক একটা পারসেনটেজ বেসিস ধরে যে যত টার্গেট নিতে চায় সে অনুপাতে বেতন নির্ধারণ করে দিতে হবে। টার্গেট পূরণ করলে পূর্ণ বেতন এবং টার্গেট পূরণ না হলে আনুপাতিক হারে বেতন পাবে। যা এখন আমাদের দেশের সকল কোম্পানিতে চালু আছে। আরো উল্লেখ্য যে, কোন অবস্থায়ই পারসেনটেজ হিসেবে এককালীন অর্থ কাউকে দেয়া যাবে না, এতে কোম্পানি সর্বোপরি সরকারি রাজস্ব আয়ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। খয়রাতি সাহায্যে বেশিদিন চলা যায় না। এই দৃষ্টিভিঙ্গ নিয়ে সকলকে অবশ্যি এগিয়ে যেতে হবে। তা না হলে দেশের আর্থিক বুনিয়াদ বিনির্মাণে বীমা খাত পিছিয়ে পড়বে।

বীমা এখন আর পেশা নয়, এটা নেশাও বটে। বীমা পেশাজীবীরাই এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরামর্শক হিসেবে কাজ করে বীমাকারী এবং বীমাগ্রহীতাদের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন সৃষ্টি করে ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প তথা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে বেগবান করছেন। বিদেশের তুলনায় আমাদের বীমা শিল্প অনেকটাই পিছিয়ে আছে। তাই বীমা পেশাজীবিদের আর্থিক বুনিয়াদকে শক্ত অবস্থানে দাঁড়া করাতে কর্তৃপক্ষের সবিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

কথায় কথায় আমরা বিদেশের বীমাশিল্পের সুনাম করে থাকি আর আফসোস করি, আমরা কেন সে পর্যায় যেতে পারি না। বিদেশে বীমা একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে চলে। উন্নত দেশে যারা বীমা ব্যবসা করেন তাঁরা যে কদর পান আমাদের দেশে তার উল্টো। কারণ তাদের কমিটম্যান্টের দাম আছে কিন্তু আমাদের নেই। তাদের দেশে সর্বক্ষেত্রে বীমা বাধ্যতামূলক বলে সেবাও সে মতোই বীমা কোম্পানীগুলো দিয়ে থাকে। আমাদের দেশেও তা অসম্ভব নয়। শুধুমাত্র নিয়ম কানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং তা মেনে চলা।

আমাদের নিয়ম কানুন এমনভাবে তৈরি করতে হবে যা সকলের পক্ষে মানতে কোন অসুবিধা না হয়। শুধু একটি বিষয়ই আমার কাছে বিস্ময় বলে মনে হয় অনেকদিন ধরে আমরা নন-লাইফ বীমা কোম্পানির উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন কাঠামো ও অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু সকল কোম্পানীর আর্থিক অবস্থা একই অবস্থানে নয় বলে তা কার্যকর করা যাচ্ছে না বা তৈরী করা সম্ভব হচ্ছে না।

আবার এজন্টের কথায় আসি নন-লাইফ বীমায় এজেন্টের ভূমিকা কি তা স্পষ্ট নয়। একজন উন্নয়ন বা ডেক্স কর্মকর্তা তাদের কাজের পাশাপাশি এজেন্ট হতে পারবে কিনা তাও স্পষ্ট নয়। একজন ব্যক্তি এসএসসি পাস হলেই এজেন্ট হতে পারে। এই এজেন্ট দিয়ে বীমাশিল্প কি উপকৃত হবে তাও বুঝি না। বীমাশিল্প যদি এজেন্ট নির্ভর হয়, এদের মধ্য থেকে এক সময় যোগ্য কর্মকর্তা খোঁজে পাওয়া মুশকিল হবে। তাই সব সময় বিদেশের ভাবধারায় না চলে আমাদের দেশের উপযোগী আইন তৈরি ও প্রতিপালনে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকতে হবে।

তাই আমাদের বীমা শিল্পকে বিদেশের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে অবশ্যি আমাদের উন্নয়ন কর্মকর্তা বা এজেন্ট যে কোন একটি বেছে নিয়ে এক খাতের খরচকেই প্রাধান্য দিতে হবে। তবেই বীমা কোম্পানির আর্থিক সলভ্যান্সি আসবে এবং সবাই সেবামূলক মনোভাব নিয়েই কাজ করবে। আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, বীমা শিল্পে আর উন্নয়ন কর্মকর্তা বা এজেন্ট নয় যারা বীমায় কাজ করবেন তাঁরা বীমা কর্মকর্তা হিসাবে অভিহিত হবেন।

উন্নয়ন কর্মকর্তা বা এজেন্ট এই দ্বৈত ব্যবস্থা থেকে বের হতে পারলেই বীমা শিল্পে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। যার সুবিধাভোগী দেশের সকল জনগণ হবেন। এই ব্যাপারে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত দেশের আর্থিক বুনিয়াদকে উচ্চমাত্রায় নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।

আমাদের প্রত্যেকেই মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, একজন শিক্ষকের সন্তান, একজন ডাক্তারের সন্তান, একজন ইঞ্জিনিয়ার-এর সন্তান, একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের সন্তান, একজন উকিলের সন্তান বা একজন ব্যাংকারের সন্তান যোগ্যতা অর্জন করে তাদের পিতা বা মাতার পেশায় আসতে পারে, তাহলে একজন বীমা পেশাজীবীর সন্তান কেন বাবা-মায়ের পেশায় আসতে পারবে না? নিশ্চয়ই আসবে আর যদি বীমা আইনে কোন বাধা থাকে তাহলে তা পরিবর্তন করে যোগ্যতরদের স্থান করে দিতে হবে। আমাদের সন্তানদের যথাযথ প্রতিপালন করতে যে কোনো অনুকূল সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। শিল্পের উন্নয়নে সকলের সম্মিলিত প্রয়াস থাকা অত্যন্ত জরুরি নতুবা বীমা শিল্পে নতুন শিক্ষিত প্রজন্ম আগ্রহী হবে না।

আমাদের দেশে বীমাশিল্পের যথাযথ বিকাশের তেমন ইনষ্টিটিউট গড়ে উঠেনি। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমী, একাডেমী ফর লার্নিং এবং বাংলাদেশ ইনষ্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স ডিপার্টমেন্ট থেকেও তেমন শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে না। তাই বর্তমানে বীমাশিল্পে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে প্রনোদনা সৃষ্টি করে দক্ষ জনশক্তি তৈরির উদ্যোগ সকল বীমা কোম্পানি ও কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।

আর বেশি দূরে নয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগ এবার অবশ্যি সফল হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বীমা পেশাজীবীরাও মান-সম্মান নিয়ে আর দশটা দেশের বীমা কর্মীদের মতো নিজ পেশার স্বীকৃতি পাবে। এই আশাবাদ ব্যক্ত করেই লেখার যবনিকা টানলাম।

লেখক : মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, ইসলামী কমাশিয়াল ইন্স্যুরেন্স কো. লি.

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:৩৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।