বুধবার ১ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যাংকের অনাদায়ী সুদ ছাড়িয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা

আদম মালেক   |   শনিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   331 বার পঠিত

ব্যাংকের অনাদায়ী সুদ ছাড়িয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা

খেলাপির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অনাদায়ী সুদের পরিমাণ। খেলাপি ঋণ থেকে সুদ আদায় শূন্য কখনো সামান্য। এ কারণে বড় হচ্ছে অনাদায়ী সুদের বোঝা। গত সেপ্টেম্বর শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অনাদায়ী সুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ প্রদত্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

এ ব্যাপারে সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, একটি ব্যাংকের অনাদায়ী সুদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া মানেই ব্যাংকের সামগ্রিক মুনাফা কমে যাওয়া। অনাদায়ী সুদের পরিমাণ যত বেড়ে যাবে ব্যাংকের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তত বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। সেক্ষেত্রে ব্যাংকের মুনাফা হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি।

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে যদি যোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনায় রাখতো, তাহলে হয়তো এ ঋণের পরিমাণ এমন হারে বাড়তো না। কিন্তু ব্যাংকগুলোর পরিচালনায় কিছু সমস্যা বা পদ্ধতিগত অব্যবস্থাপনার জন্য তা কাটিয়ে উঠতে পারছে না। এ কারণেই অনাদায়ী সুদের হার বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, অনাদায়ী সুদের সবচেয়ে বড় বোঝা বহন করছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির অনাদায়ী সুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ছয় হাজার ২৫৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, এক বছর আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে যা ছিল পাঁচ হাজার ২৯ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বৃদ্ধি পায় এক হাজার ২৩০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে অনাদায়ী সুদের প্রবৃদ্ধি হয় ২৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অপর রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। এ ব্যাংকে জমা হওয়া সুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার হাজার ২৮২ কোটি টাকা, এক বছর আগে যা ছিল তিন হাজার ৭৫০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এ ব্যাংকেও বৃদ্ধি পায় ৫৩১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এ খাতে সুদ জমা হওয়ার একটি কারণ হচ্ছে করোনা মহামারী। এই সময়ে অনেকেই ব্যাংকঋণের অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না। কিন্তু ব্যাংকগুলোকে প্রতি তিন মাস অন্তর সুদের এ হিসাবটি জমা দিতে হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে। করোনাকালে মানুষের সুবিধার্থে সকল প্রকার ঋণের বিপরীতে কিস্তি জমা দানের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি ডিসেম্বর পর্যন্ত সুবিধাটি অব্যাহত থাকবে। এ সময়ের মধ্যে ব্যাংক কোনো গ্রাহককে ঋণের অর্থ ফেরত চাইতে বাধ্য করতে পারবে না। সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সামর্থ্যবানরাও ব্যাংকঋণ পরিশোধে অনীহা দেখাচ্ছেন।

তথ্য অনুযায়ী, অনাদায়ী সুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয়। তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে অনাদায়ী সুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৫৭৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকের ৩১৪ কোটি টাকা, বিশেষায়িত ব্যাংকের এক হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ২২২ কোটি ৪৬ লাখ এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এক হাজার ১০৪ কোটি টাকা।

ব্যাংক খাতে অনাদায়ী সুদের পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়ে বেসরকারি খাতের পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হালিম চৌধুরী বলেন, এটি ব্যাংকের বিনিয়োগকৃত অর্থের ধার্যকৃত সুদ। ধার্যকৃত সুদের যে অংশটুকু আদায় হয় না, তা অনাদায়ী সুদ হিসেবে দেখাতে হয়। ঋণখেলাপিদের কাছেই এ অর্থ পাওনা রয়েছে। এটি আদায় হলেই আয় খাতে দেখানো হবে। কিন্তু করোনাকালে অনেক ব্যবসায়ী অর্থ পরিশোধ করছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার মাধ্যমে সুযোগটি দেয়ায় সামর্থ্য থাকার পরও অনেকে দিচ্ছেন না। যদিও অনাদায়ী সুদের প্রকৃত পরিমাণ আগামী বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষ হলে জানা যাবে বলে মনে করেন এই ব্যাংকার।

তথ্যমতে, অনাদায়ী সুদ হচ্ছে ব্যাংকের সম্ভ্যাব্য সুদ আয়। অনেক ব্যাংকই এটিকে আয় দেখিয়ে আর্থিক প্রতিবেদন ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখান। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যাংক ও শেয়ারহোল্ডাররা। এটি বন্ধ করতে সুদ আদায় না হলে তা আয় বা মুনাফা খাতে না দেখাতে নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে সুদ আদায় না হলে তা আয় খাতে স্থানান্তর করতে পারে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার অর্থই হলো অনাদায়ী সুদের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়মের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই ঋণ শ্রেণিকরণ, প্রভিশনিং ও পুনঃতফসিল সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবুও ব্যাংকিং খাতে অনদায়ী সুদের বোঝা বড় হচ্ছে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১:১১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।