শুক্রবার ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যাংক ও এনবিএফআইয়ের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা

বিবিএনিউজ.নেট   |   রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   627 বার পঠিত

ব্যাংক ও এনবিএফআইয়ের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা

সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সাথে ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) অসম প্রতিযোগিতা চলছে। সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় একই পণ্য এবং কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংকের পণ্যের মতো সেবা না দিতে পারায় ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ফলে বেশির ভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন নিভু নিভু করে জ্বলছে।

একটি শীর্ষস্থানীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক জানান, সময় এসেছে ব্যাংক ও এনবিএফআইয়ের সেবার মধ্যে পার্থক্য করে দেওয়ার। ব্যাংকগুলো কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে কিন্তু আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পারে না। সেক্ষেত্রে এমন কিছু ঋণ থাকা উচিত, যেগুলো এনবিএফআই পারবে, ব্যাংক পারবে না। ব্যাংক ও এনবিএফআইয়ের মধ্যে যে লেভেল পেস্নয়িং ফিল্ড নেই, সেদিকে নজর দেওয়ার সময় এসেছে। এনবিএফআইগুলোকে বলা হয় লিজিং কোম্পানি। তাই লিজিং প্রোডাক্টটা শুধু লিজিং কোম্পানিকেই করতে দেওয়া উচিত। লিজ ফাইন্যান্স বা মধ্যমেয়াদি ফাইন্যান্সের কাজ লিজিং কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। ব্যাংকের তো অনেক প্রোডাক্ট আছে। একটা প্রোডাক্ট চলে গেলে ব্যাংকের কোনো সমস্যা হবে না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এনবিএফআইয়ের অর্থের তিনটি উৎসের দুটিই ব্যাংক। তাদের প্রশ্ন সেক্ষেত্রে ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা এনে, ব্যাংকের গ্রাহকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে তারা কীভাবে টিকে থাকবে। কিন্তু তাই করতে হচ্ছে। সময় এসেছে মানি মার্কেটের পেস্নয়ারদের খাতওয়ারি ও মেয়াদভিত্তিক ভাগ করে দেওয়ার। ব্যাংক অর্থায়ন করবে স্বল্পমেয়াদি বা এক থেকে ছয় বছর পর্যন্ত, সাত থেকে ১০ বছর পর্যন্ত লিজিং কোম্পানি এবং ১০ বছরের ওপরে পুঁজিবাজার থেকে নেওয়া উচিত। অর্থনীতি ঠিক রাখতে হলে আর্থিক খাত ঠিক রাখতে হবে এবং এজন্য এনবিএফআইগুলোর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকের কাছ থেকে লোন নিয়ে তাদের ব্যবসা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ব্যাংকের সুদেরহার অনেক বেশি। ফলে কস্ট অব ফান্ড বেড়ে যায় বা বেশি হয়। এখনে মার্কেট প্রতিযোগিতায় লিজিং এবং ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ডের মধ্যে একটা বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি হয়। যে কারণে এনবিএফআইয়ের লাভের পরিমাণ কমে যায় বা ব্যাংকের তুলনায় কম লাভ করতে পারে। এটা তাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিয়ে বর্তমানে ৩৪টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন হচ্ছে ৩টি। কিছু কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান শুধু মেয়াদি আমানত গ্রহণ করলেও তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান তলবি আমানতও গ্রহণ করে থাকে। সারা দেশে এসব প্রতিষ্ঠানের শাখা রয়েছে ৫৩২টি। এর মধ্যে কমপক্ষে ছয়টি প্রতিষ্ঠান গ্রাহক থেকে কোনো আমানত নিতে পারে না, যাদের বলা হয় ‘নন-ডিপোজিটরি’ প্রতিষ্ঠান।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত সরকারি সিকিউরিটিজ ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসহ শিল্প ও নির্মাণ খাতে অর্থায়ন করে থাকে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের কাছ থেকে মেয়াদি আমানত সংগ্রহ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প খাতে ঋণ প্রদানসহ সাম্প্রতিক সময়ে পরিবহণ ও যোগাযোগ এবং বিদুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা খাতগুলোও অর্থায়ন করছে।

এদিকে, কঠিন সময় পার করছে দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই লিজিং কোম্পানি। নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রায় অর্ধেক অব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভয়াবহ সংকটে নিমজ্জিত। যেন দেখার কেউ নেই। গ্রাহকের কাছে এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণের সর্বশেষ স্থিতি ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর বেশির ভাগ বিতরণ করা হয়েছে আবাসন খাতে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমানত প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে, সে সঙ্গে বাড়ছে ব্যাংক থেকে নেওয়া ধার। এতে তাদের ঋণ বিতরণ ও লিজ অর্থায়নের পরিমাণ বাড়ছে। সে সঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থার বিষয়টি সময়ে সময়ে আলোচনায় এলেও নন-ব্যাংক আর্থিক খাত অস্তিত্বহীন হচ্ছে অনেকটা নীরবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবেই এ খাতের ১২টি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। এর মধ্যে ৬টি প্রতিষ্ঠান নামেই বেঁচে আছে। খেলাপি ঋণ, মূলধন সংকট, প্রভিশন ঘাটতি, গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে না পারাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর মতো আপতত কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

জানা গেছে, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কী মানের, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৪ সাল থেকে প্রতি বছরই এসব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নিয়ে ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট নামে একটি প্রকাশনা বের করে বাংলাদেশ ব্যাংক। খেলাপি ঋণ, প্রভিশন সংরক্ষণ, মূলধন পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন সক্ষমতা বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাল, হলুদ ও সবুজ এ তিনটি শ্রেণিতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ প্রকাশনায় দেখা গেছে, ১ থেকে ৫ পর্যন্ত অর্থাৎ ভালো থেকে খারাপ বিবেচনা করে ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে শ্রেণিকরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি প্রতিষ্ঠানকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া হলুদ তালিকায় বা সহনীয় অবস্থায় রয়েছে ১৮টি প্রতিষ্ঠান। মাত্র ৪টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ভালো বা সবুজ তালিকায়। অর্থাৎ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থাই খুব খারাপ।

অন্যদিকে, নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বর্তমান মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তারল্য সংকট। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে আছে তাতে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিদিনের নিয়মিত বিজনেস অপারেশন করতে পারছে না।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:৫৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।