শুক্রবার ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ভরা মৌসুমেও চায়ের বিপণন নিয়ে শঙ্কা

বিবিএনিউজ.নেট   |   রবিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   390 বার পঠিত

ভরা মৌসুমেও চায়ের বিপণন নিয়ে শঙ্কা

করোনা সংক্রমণের প্রভাবে বছরের প্রথমার্ধে পণ্য বিপণন ও সরবরাহে স্থবিরতা নেমে এসেছিল। পরবর্তী সময়ে তা কাটিয়েও উঠেছে বিভিন্ন শিল্প খাত। তবে ভরা মৌসুম হলেও শীতে করোনা সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকায় এখনো চা বিপণন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। অন্যদিকে নিলামেও পর্যাপ্ত দাম উঠছে না পণ্যটির। ফলে অনেক বাগান মালিক এখনো উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে কম মূল্যে পণ্য বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থায় চায়ের বিপণন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে বর্ষা মৌসুমে চা উৎপাদন হলেও পণ্যটি বিপণনের ভরা মৌসুম শীতকাল। চলতি বছরের মাঝামাঝিতে করোনার কারণে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি থাকায় চা দোকান, ফুটপাতের চা স্টল বন্ধ থাকায় চায়ের বিপণন অর্ধেকে নেমে আসে। দেশে সর্বোচ্চ চা বিপণন ফুটপাত ও চা স্টলকেন্দ্রিক হওয়ায় উৎপাদন সত্ত্বেও অর্ধেকে নেমে আসে বিক্রি। চলতি শীতে কভিড-১৯-এর কারণে চায়ের স্টলগুলোর ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে আসায় চা বিপণনে বড় ধরনের সংকট তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন চা সংশ্লিষ্টরা।

বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদের মহাসচিব এম শাহ আলম বলেন, করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত খাতের অন্যতম চা উৎপাদন ও বিপণন খাত। উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে দেশের প্রতিটি বাগানকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়। কিন্তু করোনার কারণে এখনো দেশে চায়ের বিপণন কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়নি। ফলে চলতি শীতে ভরা মৌসুমে পর্যাপ্ত বিক্রি না হলে দেশের চা উৎপাদন শিল্প অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে দেশের চা শিল্পের ক্ষতির বিষয়ে প্রণোদনাসহ সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিতে এরই মধ্যে দাবি তুলেছে বাংলাদেশীয় চা সংসদ। বাংলাদেশ চা বোর্ড ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দেয়া সংগঠনটির এ-সংক্রান্ত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের চা শিল্পের ওপর কভিড-১৯ মহামারীর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। দেশের দোকানপাট, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, চায়ের স্টল, অত্যাবশ্যকীয় সেবা, যানবাহন ও জনগণের চলাচল সীমিত হওয়ায় চায়ের অভ্যন্তরীণ ভোগ অনেক হ্রাস পেয়েছে। ফলে নিলামে চায়ের বাজার মূল্য অত্যন্ত নিম্নমুখী হওয়ায় বিগত নিলামগুলোতে বিক্রয়ের জন্য পাঠানো চা অবিক্রীত থেকে গেছে। কভিড-১৯-এর কারণে চট্টগ্রামের সাপ্তাহিক নিলাম কেন্দ্রে এপ্রিল ২০২০ মাসে অনুষ্ঠেয় ৪৬ ও ৪৭ নম্বর নিলাম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপুল পরিমাণ চা অবিক্রীত থেকে যায়। যার ফলে বর্তমান বছরে চায়ের মূল্য গত বছরের তুলনায় ৪৭ দশমিক ৩১ শতাংশ (প্রতি কেজিতে হ্রাস পেয়েছে ৯৮ দশমিক ৮৫ টাকা) হ্রাস পেয়েছে। বহু চা বাগান উৎপাদন খরচের অনেক নিচে চা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। তাই বাগানগুলো লোকসান গুনছে বিধায় বিক্রীত চায়ের মূল্য দ্বারা ব্যাংকঋণ সময়মতো পরিশোধ করতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারীর এ চরম দুর্যোগের সময় কর্মসংস্থান বজায় রাখার জন্য চা বাগানগুলোর কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। কিন্তু চলতি মূলধনের অভাবে বেশিদিন বাগান চালু রাখা সম্ভব না-ও হতে পারে। সেজন্য স্বল্প সুদে চলতি মূলধন ও উন্নয়নমূলক ঋণ সরবরাহের জন্য সরকারের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।

বাগান মালিকদের পাশাপাশি শঙ্কায় রয়েছে দেশের চা বিপণনকারী কোম্পানিগুলোও। চা দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা যায় বলে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে বিক্রি কমে যাওয়ায় সংগ্রহ কমিয়ে দেয় কোম্পানিগুলো। তবে দেশে জুলাই থেকে সাধারণ ছুটি উঠে যাওয়ার পর ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুটা শুরু হলেও চায়ের চাহিদাও বাড়তে থাকে। সাধারণ ছুটিকালীন চায়ের দাম রেকর্ড পরিমাণ কমে গেলেও পরবর্তী সময়ে গত কয়েক মাস ধরে চায়ের বাজার ধারাবাহিকভাবে বেড়ে যায়। তবে চলতি শীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় চায়ের চাহিদা ও দাম ফের কমতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

চা বিপণনকারী একাধিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা জানিয়েছেন, দেশে চা বিপণনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে টি স্টল, ফুটপাতের দোকান, রেস্তোরাঁ, অফিস-আদালত ইত্যাদি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে স্কুল-কলেজ বন্ধ রয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে শহরাঞ্চলে মানুষের চলাচল সীমিত থাকায় ফুটপাতের টি স্টলও আগের তুলনায় কম। তাছাড়া করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় বড় প্রকোপ শুরুর আশঙ্কায় অপ্রয়োজনে মানুষের আনাগোনা কমে যাওয়ায় চায়ের খুচরা বিক্রিও কমে আসছে। এ কারণে সম্প্রতি নিলাম থেকে মৌসুমের জন্য চা মজুদে অনাগ্রহী বিপণন কোম্পানিগুলো। এতে ভরা মৌসুমেও চায়ের দাম গড় দাম কেজিপ্রতি ২০০ টাকার নিচে রয়েছে।

দেশে চা বাগান রয়েছে ১৬৭টি। প্রতি বছর গড়ে নয় কোটি কেজির বেশি চা উৎপাদন করে দেশীয় বাগানগুলো। দেশীয় চাহিদার সমপরিমাণ চা উৎপাদন করায় গত কয়েক বছর ধরে দেশে চা আমদানি শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। পাশাপাশি দেশীয় চাহিদা মেটানোর পর বিশ্ববাজারেও বাংলাদেশের চা রফতানি আগের তুলনায় কয়েক গুণ বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। তবে করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউনসহ সংকটময় পরিস্থিতি থাকায় দেশীয় চাহিদা ও বিশ্ববাজারে রফতানি নিয়ে বিপাকে রয়েছে উৎপাদক ও বিপণন কোম্পানিগুলো।

ম্যাগনোলিয়া ব্র্যান্ডের উপমহাব্যবস্থাপক এসএম ইকবাল বলেন, চা উৎপাদকদের মতো বিপণন কোম্পানিগুলোও করোনাভাইরাসের কারণে সংকটের মধ্যে রয়েছে। দেশের চা বিপণনের একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক রয়েছে। মার্কেটিং চ্যানেলে হাজার হাজার কর্মীও নিয়োগ দেয়া আছে। বিক্রি কমে গেলে এসব কর্মীকে ছাঁটাই করা ছাড়া উপায় থাকে না। আবার ছাঁটাই করলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পণ্যের বিক্রয় আধিপত্য ধরে রাখাও কঠিন। সব মিলিয়ে মহামারীর এ সময়টায় চা খাতের উদ্যোক্তারা কঠিন সময় পার করছেন। পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে অনেক ছোট ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তা ব্যবসা বন্ধ করে দেবেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ৩০ নভেম্বর ২৭ নং নিলামে চা উত্তোলন হয়েছিল ৩০ লাখ ১২ হাজার ৭৪০ কেজি, যা পূর্ববর্তী বছরের একই নিলামের তুলনায় প্রায় সাড়ে সাত লাখ কেজি কম। অনুষ্ঠিতব্য ২৮তম নিলামেও আগের বছরের তুলনায় কম চা পাঠাচ্ছেন বাগান মালিকরা। ২০১৯ সালের ২৮তম নিলামে ৪৪ লাখ ৫৮ হাজার ৫৩১ কেজি চা নিলামে বিক্রির জন্য প্রস্তাব করা হলেও আগামী নিলামে চা পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে মাত্র ৩০ লাখ ৯৩ হাজার ৬০ কেজি। আর্থিক সংকট ছাড়াও বাজারে চায়ের পর্যাপ্ত চাহিদা না থাকায় বাগান মালিকরা বিনিয়োগ সাশ্রয় করতে উৎপাদন কমিয়েছেন বলে জানা গেছে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৪:৪০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11168 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।