শনিবার ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিল্পঋণের চড়া সুদে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত

বিবিএনিউজ.নেট   |   রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   560 বার পঠিত

শিল্পঋণের চড়া সুদে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত

সুদহার নির্ধারণে কিছু ব্যাংক এখনো ইচ্ছামাফিক চলছে। শুধু ক্রেডিট কার্ডই নয়, বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্রশিল্পের মেয়াদি ঋণেও চড়া সুদ নিচ্ছে তাঁরা। কয়েক মাস ধরে ক্ষুদ্রশিল্পের মেয়াদি ঋণে ২০ শতাংশেরও বেশি সুদারোপ করে আসছে দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি বেসরকারি ব্যাংক। চতুর্থ প্রজন্মের আরেকটি ব্যাংকও একই খাতের ঋণে ২০ শতাংশ পর্যন্ত সুদারোপ করছে। আরো কয়েকটি ব্যাংক নিচ্ছে ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত। অন্যদিকে বড় ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারাও ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে এখনো ১৪ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গুনছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের মার্চ মাসের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খাতওয়ারি সুদের হার নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চ মাসে বেসরকারি ও বিদেশি পাঁচটি ব্যাংক শিল্পে অর্থায়িত মেয়াদি ঋণের সুদহার বাড়িয়েছে। এ সময়ে সুদহার কমিয়েছে মাত্র দুটি। আর অপরিবর্তিত ছিল ৫২টির সুদহার। ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এখন সুদের হার কমার কথা। কিন্তু উল্টো তা বেড়েই চলেছে। এ ছাড়া রয়েছে নানা রকম গোপন চার্জ। ফলে বাস্তবে সুদহার আরো বেশি হচ্ছে। এতে নতুন শিল্প স্থাপন ও চলমান শিল্প সম্প্রসারণে অনেকেই আগ্রহ হারাচ্ছেন। তবে ব্যাংকাররা বলছেন, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বেশি হওয়ায় তাঁদের আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রে বেশি সুদ দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ায় নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ বাবদ বড় অঙ্কের বিনিয়োগযোগ্য তহবিল আটকে গেছে। এতে সুদের হার কমানো সম্ভব হচ্ছে না।

জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের প্রফিট যেখানে ৫ শতাংশ হয় না, সেখানে এত চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা কঠিন। এতে নতুন কোনো উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে না। পুরনোরাও ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য।’ তিনি বলেন, বিনিয়োগে অন্যতম বাধা হিসেবে কাজ করে ব্যাংকের এই উচ্চ সুদহার। এর জন্য গত কয়েক বছর বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। তাই প্রধানমন্ত্রীর সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পাশাপাশি কিছু ব্যাংক সুদের হার কমিয়েছে। তবে যারা এখনো উচ্চ সুদারোপ করছে তাঁদের বিষয়ে পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, মার্চ মাসে যে পাঁচটি ব্যাংক নতুন করে ঋণের সুদহার বাড়িয়েছে তার মধ্যে একটি বিদেশি খাতের এবং অন্য চারটি বেসরকারি খাতের। যে দুটি ব্যাংক ঋণের সুদহার কমিয়েছে সে দুটিও বেসরকারি খাতেরই ব্যাংক। এ ছাড়া বাকি ৫৩টি ব্যাংকের সুদের হার এ মাসে অপরিবর্তিত ছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ মাসে বড় ও মাঝারি শিল্পের মেয়াদি ঋণে সর্বোচ্চ ১৪ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদারোপ করেছে এমন ব্যাংকের সংখ্যা ছিল ১০টি। আর এগুলোর সবকয়টিই বেসরকারি খাতের। এ ছাড়া একই খাতে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৩ শতাংশের মধ্যে সুদ নিয়েছে আরো ৩৮টি ব্যাংক। এ তালিকায় বেসরকারি খাতের ৩১টি, বিদেশি খাতের ছয়টি ও রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের একটি ব্যাংক রয়েছে। বাকি ৯টি ব্যাংকের ঋণের সুদহার এক অঙ্কের ঘরে ছিল। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের পাঁচটি, বিদেশি খাতের চারটি, বিশেষায়িত খাতের দুটি ও বেসরকারি খাতের একটি ব্যাংক ছিল।

অন্যদিকে এ মাসে ক্ষুদ্রশিল্প খাতে মেয়াদি ঋণে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত সুদারোপ করেছে এমন ব্যাংকের সংখ্যা ছিল ২০টি। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের ১৯টি। অন্যটি ছিল বিদেশি খাতের। এ ছাড়া একই শিল্প খাতে ১০ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিয়েছে আরো ২৬টি ব্যাংক। এ তালিকায় বেসরকারি খাতের ১৮টি, বিদেশি খাতের সাতটি ও রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের একটি। প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, শিল্পের চলতি মূলধন খাতে দেওয়া ঋণেও অনেক ব্যাংকের সুদহার ১৫ থেকে ১৮ শতাংশের ঘরে রয়েছে। মার্চে এ তালিকায় ছিল ১৫টি ব্যাংক; যার সবই বেসরকারি খাতের।

ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাংকের মালিকরা সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা, বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষিত নগদ জমা বা সিআরআর সংরক্ষণের হার কমানো এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে স্বল্পমেয়াদি ধারের নীতিনির্ধারণী ব্যবস্থা রেপোর সুদহার কমানোসহ বিভিন্ন সুবিধা আদায় করে। এসব সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যই ছিল সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে সুলভ বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করা, যাতে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হয়।

সূত্র জানায়, নানা সুবিধা পাওয়ার পর ব্যাংকের উদ্যোক্তারা গত বছরের জুন মাসে সিঙ্গেল ডিজিট বা সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণের ঘোষণা দেন এবং একই বছরের ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর হওয়ার কথা জানানো হয়; কিন্তু ১ জুলাই থেকে সরকারি চার ব্যাংক ছাড়া কোনো ব্যাংকই তা কার্যকর করেনি। পরে একই বছরের ২ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থসচিব, সব ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করেন সরকারের বিদায়ী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:২৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11188 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।