শনিবার ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেসরকারি ব্যাংকিং খাতে ২৫ বছর

সাউথ ইস্ট ব্যাংকের নজরকাড়া সাফল্যের নেপথ্যে যিনি

গোলাম ফারুক   |   বৃহস্পতিবার, ০৮ জুলাই ২০২১   |   প্রিন্ট   |   351 বার পঠিত

সাউথ ইস্ট ব্যাংকের নজরকাড়া সাফল্যের নেপথ্যে যিনি

সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেড দেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি সফল বেসরকারি ব্যাংক। দেশে বেসরকারি খাতে ব্যাংক স্থাপনের অনুমতি প্রদানের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই প্রতিষ্ঠা লাভ করে এই ব্যাংক। অর্থাৎ ১৯৯৫ সালের এক মাহেন্দ্রক্ষণে সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশে তখন ব্যক্তিখাতের বিকাশের জোর তৎপরতা শুরু হয়েছিল। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সাউথ ইস্ট ব্যাংক গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয় এবং শুরু হয় অগ্রযাত্রা। নতুন নতুন সেবা এবং উদ্ভাবনী শক্তি দ্বারা ব্যাংকিং সেক্টরে একটি ভিন্নতর অবস্থান তৈরি করে নিতে সমর্থ হয় ব্যাংকটি।

পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে সাউথ ইস্ট ব্যাংক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। এর পর থেকেই বিনিয়োগকারীদের আস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এ ব্যাংকের শেয়ার। এর প্রেক্ষাপটে ২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই ২০ বছরে ব্যাংকের প্রধান প্রধান সূচকের অগ্রগতি পর্যালোচনা করলেই বিষয়টি বোধগম্য হবে :

২০০০ সাল থেকে প্রথম চার বছর এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমেÑ আবদুল্লাহ ইউসুফ হারুন, এমএ কাসেম, আজিম উদ্দিন আহমেদ ও রাগীব আলী।
২০০৪ সালে সাউথ ইস্ট ব্যাংক কিছুটা সংকটে পতিত হয়। সেই সময় ব্যাংকের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন আলমগীর কবীর এফসিএ। সেই থেকে প্রায় ১৭ বছর তিনি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। তাঁর দক্ষ এবং গতিশীল নেতৃত্বে সাউথ ইস্ট ব্যাংক সকল সমস্যা অতিক্রম করে বর্তমানে ঈর্ষণীয় উচ্চতায় আসীন হয়েছে।

২০০৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্যাংকসমূহের পারফরমেন্স তুলনামূলকভাবে পর্যালোচনা করে দেখা যায়Ñ

আমানত: (কোটি টাকার অঙ্কে)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

উপরে বর্ণিত ২০ বছরের পারফরমেন্স পর্যালোচনায় দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্যাংকের তুলনামূলক বিচারে সাউথ ইস্ট ব্যাংকের অবস্থান কোথায় তা সহজেই অনুমেয়। সাউথ ইস্ট ব্যাংক তার সৃজনশীল কার্যক্রমের মাধ্যমে তার শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছে।

আমানত, মোট অ্যাসেট ও শেয়ারহোল্ডার ইক্যুইটিতে ডাচ-বাংলা ব্যাংক প্রথম অবস্থানে থাকলেও তার খুব নিকটেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সাউথ ইস্ট ব্যাংক। ঋণ ও অগ্রিম এ সাউথ ইস্ট প্রথম অবস্থানে রয়েছে। অন্যান্য ব্যাংক এক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে।

২০২০ সালে সাউথ ইস্ট ব্যাংকের পারফরমেন্স পর্যালোচনা করে দেখা যায়
বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা, সরকার নির্দেশিত সিঙ্গেল ডিজিট ইন্টারেস্টে ঋণদান কার্যক্রম সাউথ ইস্ট ব্যাংক খুব সফলভাবে বাস্তবায়ন করে চলেছে। ফলে ব্যাংকের ঋণ ও অগ্রিম ২৫৩৫ কোটি টাকা বাড়লেও সুদ থেকে অর্জিত আয় কমেছে ৪০৪ কোটি টাকা।

ব্যাংক আমানত ব্যয় ২২১ কোটি টাকা কমিয়ে এবং ইনভেস্টমেন্ট আয় ১৪৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩৬৬ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে এবং কমে যাওয়া সুদ আয় ৪০৪ কোটি টাকার মধ্যে একটি ভারসাম্য এনেছে।

যে কারণে ব্যাংকের পরিচালন আয় কমেছে মাত্র ৭৯ কোটি টাকা।

কোভিড-১৯ আক্রান্ত অর্থনীতিতে সরকারের নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক শ্রেণিকৃত ঋণসংক্রান্ত কিছু কঠোর নীতিমালা শিথিল করেছে। ফলে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলে তা নন-পারফর্মিং লোনের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। যারা গৃহীত ঋণের কিস্তি নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করতে পারছেন না, তারা এ বছর ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হননি। ২০২০ সালে সাউথ ইস্ট ব্যাংকে নতুন করে কেউ ঋণখেলাপি হননি বললেই চলে।

অন্যান্য ব্যাংকের অবস্থাও অনেকটাই একই রকম। ২০২০ সালে নতুন করে কেউ ঋণখেলাপি হননি। ফলে খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলো নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি পেয়েছে। তারা প্রভিশন সংরক্ষণ অথবা সন্দেহজনক ঋণকে উপেক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। তারপরও যেসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে, তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ সুবিধা নিয়ে সেই প্রভিশন ঘাটতি পরবর্তী কয়েক বছরে বিলম্বিত বা ডেফার্ড করেছে। এক্ষেত্রে সাউথ ইস্ট ব্যাংক এক বিস্ময়কর ব্যতিক্রম। সাউথ ইস্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪৪৩ কোটি টাকা কমলেও প্রভিশন করা হয়েছে ৫১০ কোটি টাকা, যা তুলনামূলকভাবে আগের বছরের চেয়ে ৫৩ কোটি টাকা বেশি। আগের বছর প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়েছিল ৪৫৭ কোটি টাকা।

বর্তমানে সাউথ ইস্ট ব্যাংকের প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ৭২০ কোটি টাকা, সেখানে প্রভিশন রাখা হয়েছে ২ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ উদ্বৃত্ত প্রভিশনের পরিমাণ এক হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর কবীর এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক। তিনি এমন কিছু হতে দিতে রাজি নন, যাতে আমানতকারীদের সংরক্ষিত আমানতের অর্থ ঝুঁকির মধ্যে পতিত হয়। তিনি আমানতকারীদের স্বার্থ সবসময় প্রাধান্য দিয়ে আসছেন। আর এটাই সাউথ ইস্ট ব্যাংকের সাফল্যের অন্যতম রহস্য। এর ফলে ব্যাংকের অন্তর্নিহিত আর্থিক শক্তি সুদৃঢ় হয়েছে এবং আমানতকারীরা এখানে আমানত সংরক্ষণ করে নিরাপদ বোধ করছেন।

২০২০ ব্যাংকের ইন্টারেস্ট আয় ৪০৪ কোটি টাকা কমে যাওয়া সত্ত্বেও ১৪৫ কোটি টাকার ইন্টারেস্ট আয় ইনকামে না এনে সাসপেন্স অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকের সাসপেন্স অ্যাকাউন্টে স্থিতি বৃদ্ধি পেয়ে এক হাজার ৭৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। ফলে ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি সবল হয়েছে এবং আমানতকারীদের আমানতের ঝুঁকি হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের অন্যতম জটিল সমস্যা হচ্ছে খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। কিন্তু সাউথ ইস্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সমস্যা অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। এই ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণের হার ৩ দশমিক ১০ শতাংশ, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের কাছাকাছি। এ ছাড়া ক্যাপিটাল এডিক্যুয়েসি ১৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। ক্যাপিটাল উদ্বৃত্ত ৫৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ সার্বিক বিবেচনায় সাউথ ইস্ট ব্যাংক একটি শক্তিশালী মূলধন কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।
ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি নিট অ্যাসেট ভ্যালু ২৪.৯৮ টাকা, যা সংখ্যালঘু শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থকে সুনিশ্চিত করেছে।

আলমগীর কবীর তালিকাভুক্ত কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভাকে ‘শেয়ারহোল্ডারস ডে’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পথিকৃৎ। সাউথ ইস্ট ব্যাংকে সংখ্যালঘু শেয়ারহোল্ডাররা প্রাণ খুলে তাদের মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ পান এবং উত্থাপিত প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দিয়ে এজিএম-এর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়, যা এই সেক্টরে জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

 

 

 

 

 

 

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৩:৩৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ জুলাই ২০২১

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।