বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট গ্রেফতার একজন

সাধারণ বীমায় ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে ২৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ

আবুল কাশেম কবিরাজ    |   রবিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২১   |   প্রিন্ট   |   351 বার পঠিত

সাধারণ বীমায় ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে ২৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ

টানা সাড়ে ১০ বছর পর ঘুম ভেঙেছে সাধারণ বীমা করপোরেশনের (এসবিসি)। ইতোমধ্যে ২৬ কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেছে ওই সংস্থার নিউমার্কেট শাখা-৯ এর সাবেক ব্যবস্থাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে একটি চক্র। দুর্বল মনিটরিং ও কার্যক্রমে ডিজিটালাইজড অ্যাকাউন্স না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে জালিয়াতিসহ কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা। অবশেষে একটি বেনামী অভিযোগে ১০ বছর পর টনক নড়ে প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের।

এদিকে এসবিসির মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম মো. আবদুল বারেক এই প্রতিবেদককে বলেন, আবুল কাশেমের জালিয়াতির বিষয়ে ২০২০ সালে অক্টোবরে অভিযোগ পাওয়ার পর চার সদস্যে তদন্ত টিম গঠন করা হয়।

কমিটির প্রধান ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার খসরু দস্তগীর আলম। কমিটির অপর তিনজন সদস্য হলেন- ম্যানেজার মিনিময় চাকমা, সহকারী ম্যানেজার মো. নাজিম উদ্দিন এবং সহকারী ম্যানেজার মো. ইব্রাহিম। এ কমিটি ২০২০ সালে ১২ অক্টোবর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। কমিটির তদন্তে এসবিসির অডিট অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগের ব্যবস্থাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।

এ বিষয়ে মো. আবদুল বারেক আরো বলেন, ২০২১ সালে ১৯ আগস্ট আবুল কাশেমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পুরো বিষয়টি দেখার দায়িত্ব এ প্রতিষ্ঠানের দায় ও অডিট শাখার। আগে বছরে একবার অডিট হতো, এখন বছরে চারবার অডিট করার বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এতো বছর ধরে এ জালিয়াতি চলতে থাকলেও এসবিসির কাছে কেন ধরা পড়েনি, সে এক বিরাট রহস্য! যেহেতু এটা একটা ব্যক্তিগত জালিয়াতি, তাই এসবিসির পক্ষে তা বোঝার কোনো উপায় ছিল না। তবে ধরা পড়ার পর ব্যবস্থা নিতে আমরা দেরি করিনি।

আইন ভেঙে সরকারি সম্পদের বীমায় বেসরকারি কোম্পানি

ডিজিএম মো. আবদুল বারেক আরো বলেন, অভিযুক্ত আবুল কাশেম নিজের জালিয়াতির মাধ্যমে সাধারণ বীমার প্যাড, মানি রশিদ, সিল তৈরি করেছেন। তার কাছে সব সময় একটি ব্যাগ থাকতো। ওই ব্যাগের ভেতর এসব রাখতেন। এটা নজিরবিহীন ঘটনা।

সূত্র মতে, এ অপরাধটি দুর্নীতি দমন কমিশনের তফসিলভুক্ত হওয়ায় এসবিসি কর্তৃপক্ষ অনুসন্ধান ও তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নথিপত্রসহ অভিযোগটি দুদকে পাঠিয়ে দেন। দুদকের পক্ষ থেকে সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক ২০২০ সালে ৯ নভেম্বর এসবিসির নিউমার্কেট শাখা-৯ এর সাবেক ব্যবস্থাপক আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।

দুদক ২০২০ সালের ৯ নভেম্বরের সাধারণ বীমা করপোরেশনের সাবেক ম্যানেজার ও শাখা প্রধান মো. আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে ডকুমেন্ট তৈরি করে বীমা প্রিমিয়ামের প্রায় ২৬ কোটি ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ২০৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করে।

মামলায় উল্লেখ রয়েছে, এসবিসির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ভয়াবহ জালিয়াতি এবং অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি উঠে আসে। গত বছর ২৮ নভেম্বর তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে চিঠি পাঠিয়ে ’এসবিসিকে’ বীমা প্রিমিয়াম প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) এবং গত বছর ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিভিন্ন প্রকল্পের প্রিমিয়ামের টাকার বিল, পলিসি, কাভার নোট, মানি রসিদ ইত্যাদি চাওয়া হয়।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯-২০১০ সময়ে অভিযুক্ত আবুল কাশেম এসবিসির নিউমার্কেট শাখার ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিলেন। নিউমার্কেটের আশপাশে অনেক ব্যাংকের শাখা থাকলেও তিনি অনেক দূরে এক্সিম ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখায় একটি ভুয়া হিসাব খোলেন। ওইসময় মিথ্যা তথ্য প্রদান ও জালিয়াতির আশ্রয় নেন আবুল কাশেম। তিনি এসবিসির ২০১০ সালের ২০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ৪৯২তম পর্ষদ সভার রেজুলেশনও জাল করেন। ওই রেজুলেশনে দেখান যে, এক্সিম ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখায় ‘চলতি হিসাব’ খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর বোর্ড সভার এ সিদ্ধান্তের জাল কাগজপত্র তৎকালীন এক্সিম ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখায় ব্যবস্থাপককে জানিয়েছিলেন তিনি।

এ হিসাবটিতে জমা হয় এযাবৎ ২৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে বিভিন্ন সময়ে তুলে নিয়েছেন ২৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এগুলো বিউবো, বিসিএসআইআর, বুয়েটসহ বিভিন্ন প্রকল্পের প্রিমিয়ামের টাকা। এসবিসির সঙ্গে নৌ-বীমা করার অংশ হিসেবে প্রকল্পগুলো থেকে এ টাকা আসে। এসবিসির অনুমোদন ছাড়া এবং অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার করার উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগতভাবে ব্যাংক হিসাব খোলেন আবুল কাশেম।

গত ২৯ জুলাই সাধারণ বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপক মো. আবুল কাশেমকে গ্রেফতার করে দুদক।

পরে তদন্ত শেষে ২০২১ সালে ১৬ নভেম্বর দুদকের চার্জশিটে ৩৫ জনকে আসামিরা করা হয়। চার্জশিট ভুক্ত আসামিরা হলেন- সাধারণ বীমা করপোরেশনের মো. আবুল কাশেম (সাময়িক বরখাস্ত), মো. জহিরুল ইসলাম, মুসা আহমেদ, মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, ড. শেলিনা বেগম, মো. জসিম উদ্দিন আখন্দ, উপেন্দ্র চন্দ্র দাস, এএফএম আশরাফুল আলম, কাজী আসরাফুল হক, সাহানারা আফরোজ, মো. আমিরুল ইসলাম, মো. আলতাফ হোসাইন, ফয়েজ আহাম্মদ,মো. আওলাদ হোসেন, গৌতম কুমার দেবনাথ; মো. আসাদুজ্জামান খান, চুনী লাল দেবনাথ, মেহবুব মোর্শেদ, মো. রইছ উদ্দিন, মো. আবুল বাসা চৌধুরী, কাজী আহসান উল্লাহ, অজিত কুমার ঘোষ, মো. মিজানুর রহমান সরকার, মো. নরুল আলম, মো. আনোয়ার হোসেন, ড. স্বপন কুমার রায়, ড. শিরীন আক্তার জাহান, ড. মুহাম্মদ শাহরিয়ার বাসার, ড. মালা খান মোহাম্মদ নাজিম জামান, ড. মো. তুষার উদ্দীন, দিপা ইসলাম, মিসেস নাসরিন আক্তার, মোছেনা বেগম ও মো. মিলন।
এদিকে সাধারণ বীমা কোম্পানির প্রিমিয়ামের ২৬ কোটি ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ২০৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলায় সাতজন ডক্টরেট ডিগ্রিধারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার ৮ সপ্তাহের জামিন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট।

জামিনপ্রাপ্ত ওই সাত আসামি হলেন- ড. স্বপন কুমার রায়, ড. শিরীন আক্তার জাহান, ড. মো. শাহরিয়ার বাশার, ড. মালা খান, ড. মোহাম্মদ নাজিম জামান, ড. তুষার উদ্দিন ও ড. দীপা ইসলাম। মামলায় এই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ: তারা জালিয়াতির মাধ্যমে বীমা কোম্পানির প্রিমিয়ামের ডকুমেন্ট তৈরি করে ২৬ কোটি ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ২০৩ টাকা টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

গত২৫ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ তাদের জামিন আবেদন শুনানি গ্রহণ করে ৮ সপ্তাহের জন্য জানিম মঞ্জুর করেন।

আসামি পক্ষের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল গণমাধ্যমকে জানান, ২০২০ সালের ৯ নভেম্বরের সাধারণ বীমা করপোরেশনের সাবেক ম্যানেজার ও শাখাপ্রধান মো. আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে ডকুমেন্ট তৈরি করে বীমা প্রিমিয়ামের প্রায় ২৬ কোটি ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ২০৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছিল দুদক।

পরে গত ১৬ নভেম্বর সাধারণ বীমার প্রিমিয়ামের ওই টাকা আত্মসাতকৃত মামলার চার্জশিটে নতুন করে এক্সিম ব্যাংক, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের সাত ডক্টরেট কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে দুদক।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২১

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।