শুক্রবার ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সোনালী ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে বন্ধ হচ্ছে না ঋণ জালিয়াতি

আবুল কাশেম   |   বুধবার, ১৭ নভেম্বর ২০২১   |   প্রিন্ট   |   212 বার পঠিত

সোনালী ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে বন্ধ হচ্ছে না ঋণ জালিয়াতি

এতো কড়াকড়ির পরও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক খাতের ঋণ জালিয়াতি, ঘুষ, দুর্নীতি এবং মানিলন্ডারিং অপরাধ বন্ধ হচ্ছে না। ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সোনালী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নয়টি গ্রুপে, দু’টি ব্যাংক ও এক ব্যক্তির নামে ৩১ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে।
সোনালী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক ও আথিক খাতে ঘুষ, দুর্নীতি, ঋণ জালিয়াতি অনিয়ম সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনায় প্রায় ১৫০টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরমধ্যে বিচারিক বিশেষ জজ আদালতে কয়েকটি মামলায় রায় হয়েছে এবং বাকী মামলাগুলোর মধ্যে কিছু বিচারাধীন ও তদন্তনাধীন রয়েছে বলে জানা যায়।
সূত্র মতে, এর মধ্যে রয়েছে হলমার্ক গ্রুপ, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, ক্রিসেন্ট গ্রুপ, অ্যানন টেক্স গ্রুপ, এসএ গ্রুপ, সিটিসেল, সানমুন গ্রুপ, নূরজাহান গ্রুপ, ইমাম গ্রুপ এবং সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে পিকে হালদারের ঘটনাটি।
তবে ২০১২ সালে বহুল আলোচিত ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ’হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছে সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তারা। ওই ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক হোটেল রুপসী বাংলা শাখা থেকে হলমার্ক গ্রুপ প্রায় ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে স্বীকৃত বিলের বিপরীতে পরিশোধিত (ফান্ডেড) অর্থ হচ্ছে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। এছাড়া নন ফান্ডডেট আরো কয়েক শত কোটি টাকা অন্যান্য ব্যাংকের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে।
দুদক প্রথমে সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদ এবং চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা দায়ের করে। মামলার পর দুদক গ্রেফতার করে হলমার্কের এমডি তানভীর মাহমুদ এবং চেয়ারম্যান জেসমিনসহ সোনালী ব্যাংকের বেশ কয়জনকে। ওই মামলা এখনো বিচারাধীন রয়েছে।
পরে দুদক হলমার্ক গ্রুপ সোনালী ব্যাংকসহ ২৬টি ব্যাংক থেকে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অনুসন্ধান করে ২০১৩ সালে ৪০টি মামলা করে। এর মধ্যে ফান্ডেড বা সরাসরি ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ৩৮টি এবং নন-ফান্ডেড বা পরোক্ষ ঋণের জন্য দু’টি। ২০১৪ সালের বিভিন্ন সময়ে ৩৮ মামলার চার্জশিট দেয় দুদক। এগুলোতে হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদ, তার স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, তানভীরের আত্মীয় ও গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ এবং সোনালী ব্যাংকের হোটেল রূপসী বাংলার কর্মকর্তা সাইফুল হাসান তৎকালীন শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে আসামি করা হয়।
সর্বশেষ গত ১৫ নভম্বের সোনালী ব্যাংকের ফেনীর সোনাগাজী শাখার ম্যানেজার আসামি মো. রহিম উল্যাহ খন্দকার,কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম ও সহকারী অফিসার মো. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ৩১ বছরের কারাদন্ড এবং প্রত্যেককে ২৫ লাখ করে মোট ৭৫ লাখ টাকার অর্থদন্ড দিয়েছেন বিচারিক বিশেষ জজ আদালত।২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ফেনী জেলার সোনাগাজী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিল দুদক।
সোনালী সোনাগাজী শাখার ম্যানেজার আসামি মো.রহিম উল্যাহ খন্দকার, মো. আবুল কালাম ও সহকারী অফিসার মো. মিজানুর রহমান ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ২০১১ সালের ২ অক্টোবর থেকে ২০১২ সালের ১৩ আগস্ট পর্যন্ত ১৬৬টি পে-অর্ডারের ১৯ লাখ ৩৬ হাজার ১৬৫ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।
সূত্র মতে, ২০১৮ সালে ২৯ জুলাই ঘুষ ,দুর্নীতির মাধ্যে অর্জিত অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের বিবরণী দুদকেব দাখিল না করায় অভিযোগের মামলায় সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (জিএম) ননী গোপাল নাথকে তিন বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেঢাকার বিশেষ জজ আদালত। একই সঙ্গে ওই ব্যাংক কর্মকর্তাওক ১০ লাখ জরিমানা করা হয়।ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান রায় ঘোষণার সময় আসামি ননী গোপাল পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
২০১৩ সালের ১ এপ্রিল দুদক সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা ননী গোপালকে সম্পদ বিবরণীর হিসাব দাখিলে নোটিশ জারি করেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে সম্পদের হিসাব দাখিল না করায় ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি রাজধানীর রমনা থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদক। পরে ২০১৬ সালের ২০ জুন আসামি ননী গোপালের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে দুদক।
সূত্র মতে, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে সেপ্টেম্বরে ৫৬টি এবং পরের বছর আরো পাঁচটি মামলা করে দুদক। ৬টি মামলার বিচারের রায় হয়েছে। এতে ৩৬ ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ৬৬ জনের জেল-জরিমানা হয়েছে। বাকিগুলো বিচারাধীন। চট্টগ্রামের নূরজাহান গ্রুপ ২২টি ব্যাংক থেকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে যার পুরোটাই এখন খেলাপি। ২০১৪ সালে সোনালী ব্যাংক চেক জালিয়াতির একটি মামলা করেছে নূরজাহান গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডির বিরুদ্ধে।
জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের রমনা করপোরেট শাখা থেকে কয়েকটি গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান এক হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। পিকে হালদারের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংক মামলা করেছে।
জানা যায়, ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২৬ বছর আগের এক মামলায় সোনালী ব্যাংকের এক সাবেক কর্মকর্তাকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ বিভাগীয় জজ আদালতের বিচারক মিজানুর রহমান।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকেও বিভিন্ন ঋণ জালিয়াতির ঘটনা তদন্ত করে দুদকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। দুদক সেগুলোর আলাদা আলাদা ঘটনা পুনরায় অনুসন্ধান করে মামলা করছে। ঋণ জালিয়াতির বিষয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩৫টি মানিলন্ডারিং মামলার অনুসন্ধান করেছে দুদক। এর মধ্যে ৩৫টির কাজ শেষে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। দুদক সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমকে বলছেন, ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অনেক মামলায় আসামিরা সাজা পেয়েছেন। কিন্তু মামলার সংখ্যা ও অপরাধ অনুযায়ী সাজার ঘটনা মোটেই কাক্সিক্ষত পর্যায়ের নয়।

 

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৭ নভেম্বর ২০২১

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।