শুক্রবার ৩ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঋণখেলাপিদের সামাজিকভাবে বর্জন করা দরকার

বিবিএনিউজ.নেট   |   শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   373 বার পঠিত

ঋণখেলাপিদের সামাজিকভাবে বর্জন করা দরকার

২১ বছরে পা রেখেছে তৃতীয় প্রজন্মের প্রিমিয়ার ব্যাংক। আজ শনিবার পালন করা হচ্ছে ব্যাংকটির ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। তার আগে ব্যাংক খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতি ও ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু করা প্রিমিয়ার ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন ব্যাংকটির উপদেষ্টা মুহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, ব্যাংক ব্যবসা করে সাধারণ মানুষের আমানতের টাকায়। একদিকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে অন্যদিকে উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ হিসেবে তা বিতরণ করে। তাই ব্যাংকের আমানত জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদের অপব্যবহার করার অধিকার কারও নেই। একই সঙ্গে ব্যাংকের ঋণের টাকার অপব্যবহার আইনগতভাবে অপরাধও।

যাঁরা ব্যাংকের ঋণ নিয়ে তার অপব্যবহার করেছেন, আমি মনে করি তাঁরা বড় ধরনের অপরাধ করেছেন। এই অপব্যবহারের কারণেই ব্যাংক খাতে লাখো কোটি টাকার খেলাপি ঋণ তৈরি হয়েছে। এ জন্য ব্যাংকার হিসেবে আমরাও দায় এড়াতে পারি না। কারণ, আমরা ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করিনি। আবার ঋণ দেওয়ার পর সেই ঋণ যথাযথ কাজে ব্যবহার হচ্ছে কি না, তা–ও ঠিকভাবে তদারকি করা হয়নি। এসব কারণে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ তৈরি হয়েছে। অথচ এসব ঋণ যথাযথভাবে কাজে লাগানো গেলে দেশের শিল্পকারখানা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি আরও ত্বরান্বিত হতো।

আইএমএফ তো বলছে, যে পরিমাণ ঋণখেলাপির কথা বলা হয়, বাস্তবে তার পরিমাণ আরও অনেক বেশি। বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ তৈরি হওয়ার পেছনে ব্যাংকারদের কি কোনো দায় নেই? মুহাম্মদ আলী: ব্যাংক খাতে বিপুল খেলাপি ঋণ তৈরি হওয়ার পেছনে অবশ্যই ব্যাংকারদেরও ব্যর্থতা আছে। সেই দায় ব্যাংকাররা এড়াতে পারেন না। কারণ, ঋণ দেওয়ার আগে ও পরে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করেই অনেক ব্যাংক ঋণ দিয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাংকাররা চাপে পড়ে কিছু ঋণ দিতে বাধ্য হয়েছেন। যাঁরা চাপে পড়ে ঋণ দিয়েছেন তাঁদের দায় নৈতিকতা স্থলনজনিত।

আর যাঁরা জেনেবুঝে খারাপ গ্রাহককে ঋণ দিয়েছেন তাঁদের অপরাধ শাস্তিযোগ্য। এ ছাড়াএকটা সময় দেশে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে গ্রুপ ও ব্যক্তির নাম দেখে, একজন আরেকজনের দেখাদেখি। এ কারণে ব্যাংক খাতের বেশির ভাগ ঋণ কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পুঞ্জীভূত হয়ে পড়েছে।  ব্যাংকে এমন অনেক ঋণ হিসাব আছে, যেগুলোতে বছরের পর বছর কোনো লেনদেন হয় না। অথচ প্রতিবছর সেখানে ব্যাংক সুদের হিসাব করেই যাচ্ছে, যা বাস্তবে হয়তো কখনো আদায় সম্ভব না। সময় এসেছে এ ধরনের ঋণ থেকে কাগজে-কলমে সুদের হিসাব না করে সেগুলোকে একেবারে হিসাব থেকে বাদ দিয়ে দেওয়ার। পাশাপাশি ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের বয়কট করা দরকার।

আর যদি কোনো ব্যাংকারের ব্যর্থতা থাকে তাহলে তাঁরও শাস্তির বিধান করতে হবে। আপনাদের ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা কী? আপনাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কেমন? মুহাম্মদ আলী: তৃতীয় প্রজন্মের প্রিমিয়ার ব্যাংক এই বছর ২০ বছর পূর্ণ করে ২১ বছরে পা রেখেছে। উপদেষ্টা হিসেবে আমি এই ব্যাংকটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছি দুই বছরের বেশি সময় ধরে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংকের প্রতি আমার প্রথম পরামর্শ ছিল, পুরোনো খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা। নতুন ঋণ যাতে খেলাপি না হয়, সে জন্য ঋণ দেয়ার আগে যথাযথভাবে ঋণ প্রস্তাব মূল্যায়ন ও বিতরণের পর তদারকি জোরদার করা।

পাশাপাশি ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় বড় ব্যক্তি ও গ্রুপের পরিবর্তে আমরা এসএমইসহ কয়েকটি খাত সুনির্দিষ্ট করেছি। কৃষি খাত, রপ্তানি খাত, মহিলা উদ্যোক্তা, পরিবেশবান্ধব কারখানা, সরকারি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে আমরা ঋণ বিতরণে বেশি মনোযোগী হই। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ সবাই সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। ফলে ব্যাংক তার সুফল পেতে শুরু করেছে। বর্তমানে আমাদের ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ নেমে এসেছে ৫ শতাংশের নিচে। এ ছাড়া অন্যান্য সূচকেও গত কয়েক বছরে ব্যাংকটি বেশ উন্নতি করেছে। গত এক বছরের ব্যবধানে আমাদের ব্যাংকের আমানতে ২২ শতাংশ, মুনাফায় ১৫ শতাংশের বেশি, রেমিট্যান্স আহরণে ৫৪ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আশা করছি, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এই ব্যাংকটি সব ধরনের সূচকে দেশের শীর্ষ পর্যায়ের একটি ব্যাংক হয়ে উঠবে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৪:১৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।