শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দুর্নীতি সহায়ক: টিআইবি

বিবিএনিউজ.নেট   |   শনিবার, ১৫ জুন ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   558 বার পঠিত

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দুর্নীতি সহায়ক: টিআইবি

প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগকে অসাংবিধানিক, বৈষম্যমূলক ও দুর্নীতিবান্ধব হিসেবে আখ্যা দিয়েছে দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে এ সুযোগ প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘শূন্য সহনশীলতা’র পরিপন্থি হওয়ায় এর তীব্র নিন্দাও জানিয়েছে সংস্থাটি।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোসহ কয়েকটি উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও সামগ্রিকভাবে ক্রমবর্ধমান সম্পদ ও আয়বৈষম্য নিরসনে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব না রেখে বরং অনিয়ম ও দুর্নীতির মহাৎসবের অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করায় সম্পদ ও আয়বৈষম্য আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেছে টিআইবি।

টিআইবি বলছে, কালো টাকা ব্যবহারের সুযোগপ্রাপ্ত খাতে দুর্নীতির একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সৎপথে এসব খাতে আয় ও সম্পদ আহরণের সুযোগ ধূলিস্যাৎ হবে। ফলে এর প্রভাবে দুর্নীতির বিস্তৃতি ও গভীরতা আরও বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে সংকটাপন্ন ব্যাংক খাতের সংস্কারে কার্যকর কোনো পথনির্দেশ বা পরিকল্পনা না থাকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি।

২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সুশাসন ও ন্যায্যতার পরিপন্থি হলেও দফায় দফায় কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে এসেছে একের পর এক সরকার। সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সুনির্দিষ্ট লঙ্ঘন ও দুর্নীতির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ‘শূন্য সহনশীলতা’র পরিপন্থি হলেও এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে এই অনিয়মকে বাদ না দিয়ে বরং এর পরিধি আরও বাড়ানো হয়েছে। ফ্ল্যাটের পাশাপাশি এবার জমি কেনাকেও যোগ করা হয়েছে। এছাড়া বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে শিল্প স্থাপনে ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগ করা যাবে। তদুপরি এবারই প্রথমবারের মত এই অবৈধতাটাকে পাঁচ বছরের জন্য বৈধতার প্রস্তাব করা হল। অর্থাৎ দুর্নীতির মহাৎসব ও বিচারহীনতাকে পাঁচ বছর মেয়াদি লাইসেন্স দেওয়া হল।

‘চরম হতাশাজনক হলেও প্রশ্ন ওঠে, তাহলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর শূন্য সহনশীলতার ঘোষণার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবার মতো কি কেউ নেই সরকারি অঙ্গনে? কি হবে এই অঙ্গীকারের? এ উদ্যোগ যেমন অসাংবিধানিক তেমনি অনৈতিক, বৈষম্যমূলক এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের নামান্তর।’

তিনি বলেন, কেবলমাত্র ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে অবৈধতাটাকে বৈধতা দেওয়ার অর্থ সমাজে বৈধভাবে উপার্জন করাকে নিরুৎসাহিত করা। যা চরম বৈষম্যমূলক। কারণ সৎপথে উপার্জনকারীকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হয়। দুর্নীতির কাছে রাষ্ট্রের এই আত্মসমর্পণ কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে- তা সরকারকে অনুধাবন করতে আহ্বান জানাই। অন্যদিকে রেকর্ড পরিমান খেলাপি ঋণ, অনিয়ম, দুর্নীতি ও যোগসাজশের অপসংস্কৃতিতে ধুঁকতে থাকা সংকটাপন্ন ব্যাংক খাতের সংস্কারে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্যোগ না থাকায় এ খাত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাবে।

ড. জামান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে তৈরি পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট খাতে জনগণের করের টাকায় নতুন করে বাড়তি প্রণোদনার যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা এ খাতের শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় কি কোনো ভূমিকা রাখবে এবং রাখলে তা কীভাবে, সে ব্যাপারে সরকার বা যাদের চাপে এটা করা হলো তাদের কোনো বিবেচনা রয়েছে কিনা এমন ইঙ্গিতও নেই।

ক্রমবর্ধমান রাষ্ট্রীয় ঋণের বিষয়ে উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশাল অঙ্ক ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে এমন বৃহৎ প্রকল্পগুলোতে অর্থের যথার্থ ব্যয় এবং কার্যকর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রস্তাবিত বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোনো দিক-নির্দেশনা ও প্রস্তাবনা না থাকায় এটি অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের ‘শূন্য সহনশীলতা’ অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। রাষ্ট্রীয় ঋণের বোঝা বাস্তবিক অর্থে দেশের সাধারণ নাগরিকদেরই বইতে হয়। তাই প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থের ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট কৌশলগত দিক-নির্দেশনার দাবি জানাই। এছাড়া, প্রতিরক্ষা খাতে বিশাল বরাদ্দের সমর্থনে যা-ই থাকুক, জনগণের এ অর্থ ব্যয়ের খাতওয়ারি কোনো তথ্য বা বিশ্লেষণের সুযোগ প্রতিবারের মতো এবারও জনগণকে দেওয়া হয় নাই, যা এ বিষয়ে জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য অপরিহার্য।

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের (বিসিসিটিএফ) জন্য কোনো বরাদ্দ না থাকায় হতাশা প্রকাশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির প্রেক্ষিতে বাজেটে কোনো বরাদ্দ না রাখাটা একবারেই অযৌক্তিক এবং উল্টো পথে হাঁটার সামিল। সুতরাং বিসিসিটিএফে কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ নিশ্চিত করার পাশাপাশি জলবায়ু বাজেটে ঝুঁকিপূর্ণ খাত ও এলাকা চিহ্নিতকরণ ও অগ্রাধিকারসহ ব্যয়িত অর্থের ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে কৌশলগত দিক-নির্দেশনার দাবি জানাচ্ছি।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১:০৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৫ জুন ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11389 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।