বিবিএনিউজ.নেট | রবিবার, ০৪ আগস্ট ২০১৯ | প্রিন্ট | 526 বার পঠিত
ঋণ নেওয়ার পর ফেরত না পেয়ে খেলাপির ভারে নুয়ে পড়েছে দেশের ব্যাংক খাত। তফসিলি ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাত উভয়েই ‘রুগ্ণদশা’ সৃষ্টি হয়েছে। আর খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে গিয়ে তারল্য সংকটে আর্থিক খাত। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পুঁজিবাজারে।
তালিকাভুক্ত ৩০ ব্যাংকের অনিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব পর্যালোচনা করে ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধির বিষয়ে জানা গেছে। কোনো কোনো ব্যাংক ওয়েবসাইটে অনিরীক্ষিত প্রতিবেদন প্রকাশ না করলেও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে আর্থিক হিসাব বিষয়ে জানিয়েছে ব্যাংক। চলতি বছরের দুই প্রান্তিক বা ছয় মাসের অনিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব প্রকাশ করেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক।
এতে দেখা যায়, খেলাপি ঋণ ও খেলাপির বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণে সংকটময় মুহূর্তেও ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। পুঁজিবাজারের ২৪টি ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) বেড়েছে। অর্থাৎ এসব ব্যাংকের মুনাফা আগের বছরের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকের শেয়ার ও ইপিএস গণনায় দেখা গেছে, ছয় মাসে ২৯ ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে তিন হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা।
বর্তমানে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ছিল প্রায় ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর চলতি ২০১৯ সালের প্রথম তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, খেলাপি ঋণ ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সংকটের সৃষ্টি করেছে। গ্রাহকের আমানত ঋণ হিসাবে দেওয়া হয় কিন্তু সেটা ফিরে না আসায় সংকট বাড়ছে। একদিকে মূলধন ফিরে আসছে না আবার এই মূলধন বা খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে গিয়ে তারল্য সংকটে পড়ছে ব্যাংক।
আর্থিক প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা গেছে, পুঁজিবাজারে ৮০ শতাংশ ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ তালিকাভুক্ত ২৪টি ব্যাংকের ইপিএস বৃদ্ধি পেয়েছে। আর পাঁচটি ব্যাংকের ইপিএস আগের বছরের চেয়ে কমেছে। তালিকাভুক্ত আইসিবি ইসলামী ব্যাংক কয়েক বছর ধরেই ধারবাহিকভাবে লোকসানে রয়েছে। তবে এবার লোকসান কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।
সূত্র জানায়, ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে ঋণে উচ্চ সুদহার। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এক অঙ্কে সুদহার নামানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করেননি ব্যাংক মালিকরা। যদিও সুদহার কমানোর প্রতিশ্রুতিতে কিছু সুবিধাও নিয়েছেন তাঁরা। বর্তমানে ব্যাংকঋণে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে দুই অঙ্কে বা ১০-১৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকে তারল্য সংকট থাকায় উচ্চহারে আমানত আনছে ব্যাংক। আর উচ্চহারেই উদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণ করছে। যদিও ৬ শতাংশ হারে আমানত ও সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ হারে ঋণ বিতরণে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ জুন মাসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেসরকারি ও বিদেশি মিলে ৪১টি ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্ক কার্যকর করেনি।
অনিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে পুঁজিবাজারের ২৯টি ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে তিন হাজার ৩৭৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে ইসলামী ব্যাংক। কম্পানিটির প্রকাশিত ইপিএস ও শেয়ার সংখ্যা হিসাবে ছয় মাসে ইসলামী ব্যাংক মুনাফা করেছে ৩৩০ কোটি টাকা। আর ২০০ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে তিনটি ব্যাংক। ১০০ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে ১৪টি ব্যাংক আর ১০০ কোটি টাকার নিচে মুনাফা করেছে ১১টি ব্যাংক। তবে ইপিএসের হিসাবে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে এক্সিম ব্যাংকের। ২০১৮ সালের প্রথম ছয় মাসে ইপিএস হয়েছিল ০.১৩ টাকা তবে এ বছর ইপিএস হয়েছে ০.৫৬ টাকা, সেই হিসাবে বেড়েছে ৩৩১ শতাংশ।
ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ‘ব্যাংকের মুনাফা বাড়লে, পুঁজিবাজারের অবস্থাও ভালো হয়। কারণ আর্থিক বাজারের সঙ্গে পুঁজিবাজারের অবস্থা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর্থিক খাতে সংকট সৃষ্টি হলে, পুঁজিবাজারেও প্রভাব পড়ে। ব্যাংকের মুনাফা বাড়লে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
এবিবি চেয়্যারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধির বিষয়টি খুবই ইতিবাচক। এটা তো শুধু প্রান্তিকের হিসাব, মুনাফার উন্নতি হয়েছে কি না দেখতে বছরের শেষ পর্যন্ত দেখতে হবে। কারণ দুই প্রান্তিক ভালো হতে পারে আবার পরের দুটি খারাপ করতে পারে। আবার বছর শেষে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হয়।’
Posted ১:২৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৪ আগস্ট ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed