বিবিএনিউজ.নেট | বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | প্রিন্ট | 615 বার পঠিত
পুঁজিবাজারে বেসরকারি দেশীয় ১২টি জীবন বীমা কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। ২০১৮ সাল শেষে লাইফ ফান্ডের আকার বিবেচনায় এ কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো এগিয়েছে রয়েছে ডেল্টা লাইফ। কয়েক বছর ধরেই শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে কোম্পানিটি। এর বিপরীতে সবচেয়ে তলানিতে রয়েছে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
১২টি বীমা কোম্পানির মধ্যে ছয়টি কোম্পানির ফান্ডের আকার আগের তুলনায় বেড়েছে। আর ছয়টি কোম্পানির লাইফ ফান্ডের আকার কমেছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার হিসেবে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দেশীয় বেসরকারি জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ডেল্টা, ফারইস্ট ইসলামী, ন্যাশনাল, পপুলার ও মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির লাইফ ফান্ডে সর্বনিম্ন দেড় হাজার কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা রয়েছে। ওই পাঁচ কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়েছে প্রাইম ইসলামী, সন্ধানী, প্রগতি, রূপালী, সানলাইফ, হোমল্যান্ড ও প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ওই সাতটি কোম্পানির লাইফ ফান্ডের টাকার অঙ্ক এক হাজার কোটি টাকার নিচে।
২০১৮ সালের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত সময়ের তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। মূলত বাড়তি ব্যবস্থাপনা ব্যয়সহ বিভিন্ন সময়ে আইন লঙ্ঘন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থার শাস্তির কারণে বিতর্কের মুখে কোম্পানিগুলোই লাইফ ফান্ডের আকারের দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছে। তবে কোম্পানিগুলোর দায়িত্বশীলরা নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের আগে এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে চাননি।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮ সালের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে লাইফ ফান্ডের আকারের দিক থেকে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটির লাইফ ফান্ড তিন হাজার ৬৮৭ কোটি ১৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা তালিকাভুক্ত ১২ জীবন বীমা কোম্পানির মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগের আর্থিক বছরে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ডের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৬৭৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক মনজুরুর রহমান বলেন, ‘আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার সব ধরনের নিয়ম-কানুন মেনে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার সঙ্গে ব্যবসা করছি। তাছাড়া ডেল্টা লাইফে কোনো ধরনের চুরি নেই। একইভাবে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা ব্যয়ও নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। এটি এখন আইনি নির্ধারিত সীমার নিচে রয়েছে, যে কারণে দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে আমরা ভালো করছি। লাইফ ফান্ডের দিক থেকেও ডেল্টা লাইফ শীর্ষে রয়েছে।’
লাইফ ফান্ডের আকারের দিক থেকে এর পরের অবস্থানে আছে ইসলামী শরিয়াহ্ভিত্তিক জীবন বীমা কোম্পানি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। ২০১৮ সালের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ডের পরিমাণ তিন হাজার ৩৬৮ কোটি ৯১ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর আগের বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ডে তিন হাজার ৩৪২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ছিল। কোম্পানিটির লাইফ ফান্ডের আকার আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে।
১৯৯৫ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লাইফ ফান্ডের বর্তমান আকার তিন হাজার ২৭৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর জের ধরে এবার লাইফ ফান্ডের আকারের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে কোম্পানিটি। এর আগের বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ডে তিন হাজার ২০৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ছিলো। এ হিসেবে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ডের আকার বেড়েছে।
ব্যবসায়িকভাবে এগিয়ে থাকা অন্য দুই কোম্পানির মধ্যে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লাইফ ফান্ডে এক হাজার ৯১৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা ও মেঘনা লাইফের ওই ফান্ডে এক হাজার ৫৭৭ কোটি ১১ লাখ টাকা ছিল।
এদিকে লাইফ ফান্ডে এক হাজার কোটি টাকার কম টাকা রয়েছে, এমন পাঁচ কোম্পানির তালিকায় শুরুতে রয়েছে প্রাইম ইসলামী লাইফ। ২০১৮ সালের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ডের আকার প্রায় ৮৩২ কোটি পাঁচ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। লাইফ ফান্ডে ৮২০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা নিয়ে এর পরেই রয়েছে সন্ধানী লাইফ। ওই দুই কোম্পানির লাইফ ফান্ডের পরিমাণ এর আগের বছরের তুলনায় কমেছে। অপর কোম্পানি প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লাইফ ফান্ডে ছিল ৫৬০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। লাইফ ফান্ডের দিক থেকে তলানিতে থাকা অন্য দুই কোম্পানির মধ্যে রূপালী লাইফে ৪২৯ কোটি আট লাখ টাকা ও সানলাইফে ৩০১ কোটি ১৪ লাখ টাকা, প্রগ্রেসিভে ২৬৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা ও পদ্মা ইসলামী লাইফে ৮৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকার তথ্য মিলেছে। সে হিসেবে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
একাধিক জীবন বীমা কোম্পানির দায়িত্বশীলদের মতে, প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারের কারণে প্রিমিয়াম আয়ে প্রবৃদ্ধি কমছে। অন্যদিকে সময়ের সঙ্গে বীমা দাবি ও অন্যান্য ব্যয় বাড়ছে, যে কারণে কোম্পানিগুলো লাইফ ফান্ডের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে।
উল্লেখ্য, বীমা গ্রাকদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থের একটি অংশ ভবিষ্যতের প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য লাইফ ফান্ডে রাখা হয়। ওই অর্থ নিয়ন্ত্রক সংস্থা নির্দেশিত খাতে বিনিয়োগ করা হয়। কোম্পানির গ্রাহকদের বীমা দাবি পরিশোধের সক্ষমতা যাচাইয়ে লাইফ ফান্ড অন্যতম মানদণ্ড হিসেবে কাজ করে, যে কারণে প্রতিষ্ঠার পর থেকে লাইফ ফান্ডের অর্থ ব্যয় নিয়ে কঠোর অবস্থানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
Posted ১২:৫৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed