বিবিএনিউজ.নেট | বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | প্রিন্ট | 754 বার পঠিত
নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে কঠোর হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফাঁকির বিরুদ্ধে কমিশনারেটগুলো অভিযান ও নিয়মিত মামলা করা শুরু করেছে। তবে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে নতুন আইনে প্রথমবার ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে যশোর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট।
গতকাল কুষ্টিয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা করা হয়। ভুয়া চালান, নকল ও ব্যবহৃত ব্যান্ডরোল ব্যবহারের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে ভারগন টোব্যাকো নামে একটি সিগারেট কোম্পানির বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়। যশোর ভ্যাট কমিশনারেটের মামলার মাধ্যমে নতুন আইনে ফৌজদারি মামলার সূচনা হলো। নতুন আইন অনুযায়ী, এ মামলা ভ্যাট কর্মকর্তারা তদন্ত করবেন। ফৌজদারি মামলা ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকির ভ্যাট কমিশনারেটে অপর একটি মামলা হয়েছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, নকল ব্যান্ডরোল ও স্ট্যাম্প ব্যবহারের মাধ্যমে সিগারেট কোম্পানিগুলো রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। এনবিআরের নির্দেশে সব ভ্যাট কমিশনারেট অভিযান পরিচালনা, মামলা দায়ের করে আসছে। তবে যশোর ভ্যাট কমিশনারেট অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করে। এর মধ্যে কুষ্টিয়ার ভারগন টোব্যাকোর গুদাম ও ফ্যাক্টরিতে তিনটি পৃথক অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ নকল ব্যান্ডরোল ও সিগারেট জব্দ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নতুন ভ্যাট আইনে রাজস্ব ফাঁকির মামলা করে যশোর ভ্যাট কমিশনারেট। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অপরাধ অনুযায়ী ফৌজদারি মামলার অনুমতি চেয়ে যশোর ভ্যাট কমিশনারের কাছে কুষ্টিয়া কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট আবেদন করে।
২৩ ফেব্রুয়ারি কমিশনার মুহম্মদ জাকির হোসেন মামলার অনুমতি দেন। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার কুষ্টিয়া কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. আবদুল আলীম বাদী হয়ে মামলা করেন। কুষ্টিয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২-এর ১১১ ধারা অনুযায়ী মামলা করা হয়। মামলায় ভারগন টোব্যাকোর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ রাইসুল হক, কাজী রাসেল আজাদ, মো. মাসুদ মিয়াকে আসামি করা হয়। মামলায় সহকারী কমিশনার হাবিবুর রহমান, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মিলন কুমার অধিকারী ও মো. শামসুজ্জামানকে সাক্ষী করা হয়।
মামলার বিবরণে বলা হয়, কমিশনারের নির্দেশে প্রিভেন্টিভ টিম ১৯ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া সদরের আলফা মোড়ে ভারগন টোব্যাকো সিগারেটের গুদাম ও জুগিয়া দক্ষিণ সড়ক, বারাদি, বারখাদায় সিগারেট ফ্যাক্টরিতে অভিযান পরিচালনা করে। ওই টিম ফ্যাক্টরিতে অভিযানে ব্যান্ডরোল রেজিস্টার যাচাই করে দেখতে পায়, রেজিস্টারে ব্যান্ডরোলের মজুত এক লাখ ৯৩ হাজার ৩৮৯ পিস উল্লেখ থাকলেও ১৪ হাজার ৬১১ পিস বেশি পাওয়া যায়। সিগারেট গুদামে প্রিভেন্টিভ টিম ৪৪ কার্টনে পূর্বাণী, বিএন্ডডব্লিউ, সেজার ব্র্যান্ডের তিন লাখ ৯৯ হাজার ৪৫০ শলাকা সিগারেট জব্দ করে। এছাড়া ফ্যাক্টরি থেকে ১০ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০টি নকল ব্যান্ডরোল জব্দ করা হয়।
অপরদিকে গুদামের একটি কার্টনে সিগারেটের ব্যবহৃত ৮২ হাজার ৮৪০ পিস স্ট্যাম্প ও ২৪৪ কার্টনে ২৪ লাখ ৪০ হাজার শলাকা সিগারেট জব্দ করা হয়। এছাড়া গুদামের সামনে থেকে একটি কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক জব্দ করা হয়। কাভার্ডভ্যান ও ট্রাকের মূল্য ২০ লাখ টাকা। এছাড়া ওই কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক থেকে সিগারেটের দুটি মেশিন জব্দ করা হয়, যার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। এতে প্রতিষ্ঠানটি মোট চার কোটি ৯৫ লাখ ২৬ হাজার ৪৩৭ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। যার মধ্যে সম্পূরক শুল্ক, মূসক ও সারচার্জ রয়েছে।
আরও বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া চালানের মাধ্যমে নকল ব্যান্ডরোল ও স্ট্যাম্প ব্যবহারের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২-এর ১১১ ধারা লঙ্ঘন করেছে। অপরাধ আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির মাধ্যমে গ্রেফতার করতে আবেদন করা হয়। আদালত ২৯ মার্চ শুনানির দিন ধার্য করেন।
এ বিষয়ে কমিশনার মুহম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘ভারগন দীর্ঘদিন ধরে এমন অপরাধ করে আসছে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাচ্ছে না। আমরা কর পরিশোধ ও সতর্ক করে বহুবার চিঠি দিয়েছি। তাই আমরা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করেছি। এক্ষেত্রে আমরা ভ্যাট আইনের নির্ভুল প্রয়োগের চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন, ‘ফৌজদারি মামলার বিধান পুরাতন ভ্যাট আইনেও ছিল। প্রতিষ্ঠানগুলো একের পর এক ভ্যাট ফাঁকি দিলেও কখনও ফৌজদারি মামলা হয়নি। নতুন আইনেও এ বিধান রাখা হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলার মধ্য দিয়ে আমরা বার্তা দিতে চাই যে, ভ্যাট ফাঁকি দিলে এখন থেকে নিয়মিত ফৌজদারি মামলা করা হবে।’
এনবিআর সূত্র জানায়, ভারগন টোব্যাকো দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে, জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে অবৈধভাবে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ও র্যাবের যৌথ অভিযানে ভারগন টোব্যাকোর তিনটি গোডাউন থেকে প্রায় ৩৫ হাজার নকল ব্যান্ডরোল, ৪০ কার্টন সিগারেট ও সিগারেট তৈরির কাঁচামালসহ প্রায় এক কোটি ২০ লাখ টাকার পণ্য এবং উৎপাদনে সহায়ক যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় ভারগন টোব্যাকোর ব্যবস্থাপক কাজী রাসেল আজাদকে আসামি করে মোবাইল কোর্টের আওতায় একটি মামলা করা হয়। এ বিষয়ে এনবিআর সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) মো. জামাল হোসেন বলেন, নতুন ভ্যাট আইনের কঠোর প্রয়োগের অংশ হিসেবে যশোর ভ্যাট এ মামলা করেছে। এর আগে সব কমিশনারেটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবারও নির্দেশনা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, সিগারেটসহ তামাক কোম্পানিগুলোর ভ্যাট ফাঁকিতে নিয়মিত মামলা ও জরিমানা করা হয়। জরিমানার পরিমাণ কম হওয়ায় এসব কোম্পানি ভ্যাটের নিয়মিত মামলাকে ভয় করে না। সেজন্য ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে আইন পরিপালন ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে এখন থেকে ফৌজদারি মামলা করা হবে।
Posted ৩:২৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed