বিবিএনিউজ.নেট | বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন ২০২০ | প্রিন্ট | 577 বার পঠিত
ইউনাইটেড মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম (ইউএমপি) সার্ভিসের ত্রৈমাসিক ফি (২য় কোয়ার্টার এপ্রিল-জুন ২০২০) স্থগিতের দাবি জানিয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বরাবরে একটি চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)। বুধবার, ১৭ জুন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন স্বাক্ষরিত এ চিঠি পাঠানো হয়।
আইডিআরএর চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ইউনাইটেড মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম (ইউএমপি) সার্ভিসটির সিস্টেম বাবদ ত্রৈমাসিক ফি (২য় কোয়ার্টার এপ্রিল-জুন ২০২০) পরিশোধিত করার জন্য সকল লাইফ এবং নন-লাইফ বীমা কোম্পানিসমূহকে চিঠি প্রাপ্তির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জমা প্রদান করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতার কারণে বীমা খাতসহ দেশের সকল আর্থিক খাতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। জাতির জনক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার দেশের কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্য সংকট এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতার মধ্যেও বীমা খাতের দিকে তাঁর সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন এবং সামনের অর্থনৈতিক যুদ্ধে দেশকে গতিশীল রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রস্তাবিত ২০২০-২০২১ সালের বাজেটে প্রাণিসম্পদ বীমা চালু করা হয়েছে এবং কৃষিবীমা চালু করারও পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রাখা এবং মানব কল্যাণের জন্য সরকার বিভিন্ন খাতে আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে।
সমগ্র দেশে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা এবং স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে বীমা শিল্পের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করতে না পারার কারণে বীমাশিল্পের সকল কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে এবং তারাও চরম দৈন্য দশার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। যার কারণে বীমাশিল্পের বিশেষ করে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। বীমা এজেন্টরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন বীমার জন্য কাউকে অনুরোধ করতে পারছে না। এমনকি রিনুয়্যাল প্রিমিয়াম পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। উপরন্তুÍ পলিসির মেয়াদপূর্তির পূর্বেই গ্রাহকরা তাদের আর্থিক সংকটের কারণে পলিসি সমর্পণ করছে। লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা তথা বীমা ব্যবসা ক্রমশই খারাপের দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে বীমাশিল্পে নিয়োজিত প্রায় ৭ লাখ বীমা এজেন্টদের সাহায্যের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট একটি আাবেদন করা হয়েছে। ইতোপূর্বে মাঠপর্যায়ের বীমাকর্মীদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের একটি আবেদন মহোদয় বরাবর ৮ এপ্রিল, ২০২০ তারিখে প্রেরণ করা হয়েছে। অনেক বীমা কোম্পানি তাদের কর্মচারী ছাঁটাই করার উদ্যোগ গ্রহণ করছে এবং এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করার কথাও শোনা যাচ্ছে। এতে করে সমস্যা আরও বাড়বে, যা সমগ্র বীমাশিল্পে এমনকি সার্বিক অর্থনীতির উপর একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এ সংকটময় পরিস্থিতি কতদিন চলবে তা বলা কঠিন। সার্বিকভাবে দেশের বীমাশিল্প এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে যার ব্যাপ্তিকাল বলা কঠিন। দীর্ঘদিন সাধারণ ছুটির পর গত ৩১ মে ২০২০ তারিখ থেকে বীমা কোম্পানিগুলোর অফিস স্বল্প পরিসরে খোলা রেখে কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। বীমাশিল্পের অনেক কর্মচারী-কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে একটি ভীতি সকলের মধ্যেই বিরাজ করছে। ফলশ্রæতিতে কাজের স্বাভাবিক গতি স্থবির হয়ে যাচ্ছে। সরকার কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধ এবং পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। রেড জোন চিহ্ন এলাকায় অবস্থিত অফিসগুলো বন্ধ থাকবে, তখন পরিস্থিতি অধিকতর খারাপ হবে।
নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর অবস্থাও খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। তাদের ব্যবসা গত ২০১৯ সালের এপ্রিল ও মে মাসের তুলনায় বর্তমান বছরের এপ্রিল ও মে মাসের অর্জিত প্রিমিয়াম আয় ৪৫%। নানাবিধ কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলোঃ বীমা গ্রহীতাদের আমদানি হ্রাস করার কারণে মেরিন ব্যবসার প্রিমিয়াম দ্রæতগতিতে হ্রাস, বীমা গ্রহীতা কর্র্তৃক অগ্ন্ িবীমার ঝঁস অংংঁৎবফ এবং প্রিমিয়াম রেট হ্রাস করার কারণে অগ্নিবীমার প্রিমিয়াম হ্রাস, ব্যাংক কর্তৃক নতুন কোনো ঋণ প্রদান না করা; গার্মেন্টস শিল্পের আমদানি রফতানিতে ভাটা পড়া; অনেক কোম্পানি কর্তৃক অগ্নিবীমা নবায়ন না করা এবং গাড়ি বীমার ক্ষেত্রে ঈড়সঢ়ৎবযবহংরাব ঝুঁকি গ্রহণের পরিবর্তে রাস্তায় গাড়ি বের করার জন্য সামান্য অর্থে তৃতীয় পক্ষ বীমা করা। সামগ্রিকভাবে লাইফ এবং নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থা কোনোভাবেই সন্তোষজনক নয়।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ইউএমপি সার্ভিস চালু হওয়ার পর থেকে বীমা গ্রাহকদের/পলিসিহোল্ডারদের এসএমএস সেবা অদ্যাবধি শুরু করা হয়নি। বীমা কোম্পানিগুলো তাদের আয় কমে যাওয়ার কারণে তারা নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। যেখানে আয় কমে যাচ্ছে এবং ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে ইউএমপির বিল প্রদান করা দাতাদের জন্য কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া অনেক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পক্ষে তাদের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতন প্রদান কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) সকল ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন হ্রাসের প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। উপরন্তু যে সকল ঋণগ্রহীতা আগস্ট, ২০২০ পর্যন্ত কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হবেন তাদেরকে খেলাপি ঋণের তালিকাভুক্ত করা হবে না মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সার্কুলার জারি করা হয়েছে। গ্রাহকদের বিভিন্ন ঋণের উপর প্রদেয় কিস্তির টাকা পরিশোধে বিলম্ব ফি মওকুফ করেছে। গ্রাহকদের সুবিধার্থে কিস্তি প্রদানের সময় সীমা বৃদ্ধি করেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও ভ্যাট প্রদানের সময়সীমা বৃদ্ধি করেছে। বিদ্যুৎ বিল প্রদানের নির্ধারিত সময়ের পরে বিল পরিশোধ করলে যে অতিরিক্ত টাকা সারচার্জ হিসেবে দেয়া লাগতো সেটিও বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে মওকুফ করা হয়েছে।
এ অবস্থায় বিআইএর সভাপতি শেখ কবির হোসেন করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং বীমা কোম্পানিসমূহের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে ইউএমপি সার্ভিসটির পূর্ণ সেবা প্রদান চালু এবং কেভিড-১৯ সংক্রমণের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ না হওয়া পর্যন্ত ত্রৈমাসিক ফি পরিশোধ সাময়িকভাবে স্থগিত করার জন্য আইডিআরএর কাছে অনুরোধ জানান।
Posted ২:৪৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed