শনিবার ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অবশেষে বিতর্কিত সিএফও কেরামত আলীর বিদায়

বহাল তবিয়তে মোল্লা গোলাম মুহাম্মদ বেলাল

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   7 বার পঠিত

বহাল তবিয়তে মোল্লা গোলাম মুহাম্মদ বেলাল

নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি) থেকে বিদায় নিয়েছেন প্রধান অর্থ কর্মকর্তা কেরামত আলী। বিস্তর অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন কেরামত আলী। যা ২৪ সেপ্টেম্বর বোর্ড মিটিংয়ে গৃহিত হয়। পরদিন ২৫ সেপ্টেম্বর এনটিসি‘র সহকারী অর্থ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান রাফীকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। কেরামত আলীর কিছু অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে বিদায় দেওয়ায় শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এছাড়া কিছু অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে; যার প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন শেয়ারহোল্ডাররা।
এদিকে, কেরামত আলী বিদায় নিলেও বহাল তবিয়তেই আছেন আরেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এনটিসির সচিব মোল্লা গোলাম মুহাম্মদ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, বছরের পর বছর ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল। আর এই বিচারকের শ্যালক হচ্ছেন মোল্লা গোলাম মুহাম্মদ। এ সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে তিনি এনটিসিতে পদোন্নতি লাভ করেন। জেলা জজ কাজী গোলাম রসুলের এক মেয়ে নিশাত রসুল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিএস ছিলেন। এ সুবাদে মোল্লা গোলাম মোহাম্মদের ভাগ্য খুলে যায় এনটিসিতে।

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুরো শাসনামলে গোপালগঞ্জ জেলার ৬ পরিচালক, মোল্লা গোলাম মোহাম্মদ ও কেরামত আলী মিলে কোম্পানির কোটি কোটি টাকা লুটেপুটে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরিচালক আবুল হোসেন, শেখ কবির হোসেন, চৌধুরী নাফিজ সরাফত, আতিফ খালেদ, মিজানুর রহমান ও মোস্তাফিজুর রহমানের একটা আলাদা সিন্ডিকেট ছিল। সদ্য পদত্যাগকারী অর্থ কর্মকর্তা কেরামত আলীর নেতৃত্বে আরেকটি সিন্ডিকেট ছিল।

তারা সবাই মিলে কোম্পানিতে এমন এক প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন যে, পরিচালক ও ব্যবস্থাপনার যে কাউকে একজন বিশেষ ব্যক্তির কাছেই কেবল জবাবদিহি করতে হতো। আর সেই ব্যক্তি ছিলেন সমস্ত জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে। এরই অবসান করতে শেয়ারহোল্ডার ও অনৈতিকভাবে চাকরীচ্যুত হওয়া কর্মকর্তারা বিগত ১১ ও ২২ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাব ও হেড অফিসের সামনে মানববন্ধন করেন। এরই ফলস্বরূপ ১৪ আগস্ট শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবির হোসেন চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
এ ছাড়াও প্রভাবশালী ব্যাংক ও শেয়ারবাজার লুটপাটকারী চৌধুরী নাফিজ সরাফত, আতিফ খালেদ, মিজানুর রহমান খান, মোস্তাফিজুর রহমান ও ড. রেজিয়া খাতুন পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

বিগত সাত বছরে কোম্পানি কোটি কোটি লোকসান করেছে। শুধুমাত্র গত বছরই ৬৮ কোটি টাকার লোকসান গুণতে হয়েছে এনটিসিকে।
এমন অবস্থায় দুইজন সাংবাদিক ও এ কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার দুনীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার চাচা চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেনের হস্তক্ষেপে এনটিসির ইতিবাচক কোন পরিবর্তন আসেনি। উল্টো দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে লোকসানের বোঝা বাড়িয়েছে।
২০১৫ সালে মোল্লা গোলাম মুহাম্মদকে এনটিসির সহকারী ম্যানেজার থেকে ম্যানেজার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তার এই পদোন্নতির পেছনে কাজী গোলাম রসুল ও নিশাত রসুলের প্রভাব ছিল বলে জানা গেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিএস নিশাত রসুলের অতি পরিচিত চৌধুরী নাফিজ সরাফতকে এনটিসির পরিচালনা পর্ষদে নিয়ে আসা হয়। নাফিজ সরাফত তার পিএস আতিফ খালেদকে আইসিবি থেকে শেয়ার কিনে দিয়ে পরিচালক বানিয়ে নেন। ভাগ্নীর সহযোগিতায় দুই পরিচালককে নিয়ে আসার পর থেকে মোল্লা গোলাম মোহাম্মদের দাপট আরও বেড়ে যায়।

কোন অভিজ্ঞতা নেই, যোগ্যতাও নেই, ৫ বছরের সেক্রেটারি পদে চাকরির অভিজ্ঞতার সনদÑ কিছুই তিনি দিতে না পারলেও কোম্পানির সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে যান। এর পর থেকে তিনি ১২টি চা বাগানের ম্যানেজার এবং সহকারী ম্যানেজারদের উপর দাপট দেখিয়ে প্রতি বছর দুর্নীতির প্রতিবেদন ও অডিটের নামে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

মোল্লা গোলাম মুহাম্মদ ভাগ্নি নিশাত রসুলের নাম ব্যবহার করে কোম্পানির অন্যান্য কর্মচারীদের ভয় দেখাতেন এবং প্রতিটি বাগান থেকে মাসোহারা আদায় করতেন। কোম্পানির সচিব হিসেবে অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণ না করলেও, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে তিনি এই পদে আসীন হন, যা নিয়ে অনেক শেয়ারহোল্ডার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
এছাড়াও, মোল্লা গোলাম মুহাম্মদ নিজেকে বিএসইসির কমিশনার তারিকুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিতেন, যা তাকে কোম্পানির পরিচালকদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা পেতে সাহায্য করেছে। শেয়ারহোল্ডাররা এই পদোন্নতিকে কোম্পানির স্বার্থবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন এবং এ বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সচিব মোল্লা গোলাম মোহাম্মদ ও ভারপ্রাপ্ত এমডি সৈয়দ মাহমুদ হাসানের হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলেও তাদের কেউই সাড়া দেননি।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৯:২১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।