শুক্রবার ৩ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অগ্নিঝুঁকিতে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সব শাখা

বিবিএনিউজ.নেট   |   রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   700 বার পঠিত

অগ্নিঝুঁকিতে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সব শাখা

সচেতনতার অভাবে দেশে ক্রমেই বাড়ছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে রাজধানীকে চারটি অঞ্চলে বিভক্ত করে সব ধরনের স্থাপনা পরিদর্শনের উদ্যোগ নেয় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। তালিকা অনুযায়ী রাজধানীর ৪২২টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ২১টি মানদণ্ডের ভিত্তিতে পরিদর্শন করা হয়। মানদণ্ড অনুযায়ী রাজধানীর প্রায় ৯৮ শতাংশ হাসপাতালই ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। এর মধ্যে দেশের বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ সক্ষমতা না থাকায় সব শাখাই ঝুঁকিপূর্ণ।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের প্রাপ্ত তথ্যমতে, অগ্নিঝুঁকিতে থাকা ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের পাঁচটি শাখা হলো মতিঝিল, নয়াপল্টন, কাকরাইল, মুগদা ও মিরপুর।

হাসপাতালটির মতিঝিল শাখায় যোগাযোগ করা হলে সেখানকার দায়িত্বরত প্রশাসন প্রধান ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে বিষয়গুলোয় কাজ করতে পরামর্শক নিয়োগ করেছি। ফায়ার সার্ভিসও আমাদের কিছু পরামর্শ দিয়েছে। নকশায় কিছু ত্রুটি আছে, সেগুলো নিয়েও আমরা কাজ করব। সর্বোপরি অগ্নিনির্বাপণ সক্ষমতা যা যা প্রয়োজন সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

তথ্যমতে, রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন প্রতিবেদনে ২১টি মানদণ্ড উল্লেখ করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। সেগুলো হলো ১. ভবনের ধরন ও বিবরণ; ২. ভবনটিতে বেইজমেন্ট/সেমি-বেইজমেন্ট আছে কি না ও সংখ্যাসহ পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে কি না; ৩. ভবনটির পানি রিজার্ভারের ধারণক্ষমতা ও আয়তন; ৪. ভবনটিতে তিন ধরনের ফায়ার ফাইটিং পাম্প (মেইন/জকি/স্ট্যান্ডবাই) আছে কি না; ৫. ভবনটিতে সাধারণ সিঁড়ির সংখ্যা ও তার প্রশস্ততা; ৬. জরুরি নির্গমন সিঁড়ির সংখ্যা ও তার প্রশস্ততা; ৭. সাধারণ লিফটের সংখ্যা, প্রশস্ততা ও ক্যাপাসিটি; ৮. ফায়ার লিফটের সংখ্যা, প্রশস্ততা ও ক্যাপাসিটি; ৯. র‌্যাম আছে কি না ও থাকলে তার সেøাপ রেশিও ও প্রশস্ততা; ১০. প্রতিটি ফ্লোরে সেফটি লবি আছে কি না; ১১. সম্মুখের রাস্তার প্রশস্ততা (মি./ফুট); ১২. জেনারেট রুমসহ ট্রান্সফার রুম, সুইচ গিয়ার, পাম্প রুম, ফায়ার কন্ট্রোল রুম আছে কি না ও এগুলোর অবস্থান; ১৩. জেনারেট, ট্রান্সফরমার, সুইচ গিয়ার রুমের দেওয়াল চার ঘণ্টা ফায়ার রেটেড ও দরজা দুই ঘণ্টা ফায়ার রেটেড কি না; ১৪. স্প্রিংকলার হেড (বেইজমেন্ট ও পার্কিং এরিয়ায়) স্থাপন করা আছে কি না; ১৫. হাইড্রেন্টসহ হোজরিল প্রতি ফ্লোরে আছে কি না; ১৬. অ্যাসেম্বলি পয়েন্ট আছে কি না; ১৭. মেইন প্যানেল বোর্ড ও রিপিটার প্যানেল বোর্ডের সঙ্গে ভবনের বেইজমেন্টসহ সব তলায় স্মোক/হিট/মাল্টি ডিটেক্টর, ম্যানুয়াল কল পয়েন্ট, অ্যালার্ম বেল, স্ট্রোব লাইট, ইমার্জেন্সি এক্সিট লাইট আছে কি না; ১৮. বজ নিরোধক ব্যবস্থা স্থাপন করা আছে কি না; ১৫০ ফুটের ঊর্ধ্বে ভবনের ক্ষেত্রে এভিয়েশন লাইট আছে কি না; ১৯. পর্যাপ্তসংখ্যক বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপনী সাজসরঞ্জাম সংরক্ষণ করা হয়েছে কি না; ২০. ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর থেকে শর্তসাপেক্ষে ভবন নির্মাণের অনাপত্তি ছাড়পত্র গ্রহণ করা হয়েছিল কি না এবং ২১. অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবলের সংখ্যা।

প্রতিষ্ঠানটির মুগদা শাখায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এসব মানদণ্ডের মধ্যে ফায়ার ফাইটিং পাম্প (মেইন/জকি/স্ট্যান্ডবাই) নেই, সাধারণ সিঁড়ি একটি, তবে এর প্রশস্ততা কম, জরুরি নির্গমন সিঁড়ি নেই, ফায়ার কন্ট্রোল রুম নেই, জেনারেট, ট্রান্সফরমার, সুইচ গিয়ার রুমের দেওয়াল চার ঘণ্টা ফায়ার রেটেড নয় ও এসব রুমের দরজা দুই ঘণ্টা ফায়ার রেটেড নয়। এছাড়া স্প্রিংকলার হেড, হাইড্রেন্টসহ হোজরিল, অ্যাসেম্বলি পয়েন্টও রাখা হয়নি। পাশাপাশি মেইন প্যানেল বোর্ড ও রিপিটার প্যানেল বোর্ডের সঙ্গে ভবনের বেইজমেন্টসহ সব তলায় স্মোক/হিট/মাল্টি ডিটেক্টর, ম্যানুয়াল কল পয়েন্ট, অ্যালার্ম বেল, স্ট্রোব লাইট, ইমার্জেন্সি এক্সিট লাইট ও বজ নিরোধক ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এভিয়েশন লাইট নেই এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপনী সাজসরঞ্জাম সংরক্ষণ ও ফায়ার সার্ভিস ব্যবস্থাও নেই।

এদিকে সিভিল ডিফেন্সে অধিদফতর থেকে শর্তসাপেক্ষে অনাপত্তি ছাড়পত্র গ্রহণ না করেই ভবন নির্মাণ করা হয়েছে বলেও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবলও নেই হাসপাতালটিতে। ফলে শাখাটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।

এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের মুগদা শাখার মেইটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার আলী আশরাফ বলেন, ‘আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি সিঁড়িসহ যাবতীয় বিষয় নিয়ে, যাতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার কোনো ঘাটতি না থাকে।’

এদিকে হাসপাতালটির মতিঝিল, নয়াপল্টন, কাকরাইল ও মিরপুরে অবস্থিত শাখাগুলোর অগ্নিনিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এক্ষেত্রে মতিঝিলের ২১টি সূচকের মধ্যে ৯টি সূচক ঠিক থাকলেও ১২টি ঠিক নেই। এদিকে নয়াপল্টনে অবস্থিত শাখাটির ছয়টি সূচক ঠিক থাকলেও ১৫টি ঠিক নেই। কাকরাইলের শাখাটির পাঁচটি সূচক ঠিক থাকলেও ১৬টি ঠিক নেই। আর মিরপুরে অবস্থিত শাখাটির সাতটি সূচক ঠিক থাকলেও ১৩টি ঠিক নেই।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৩:১৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।