বুধবার ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পপুলার লাইফের সাড়ে ২৪ কোটি টাকার বীমা দাবির চেক হস্তান্তর

আইডিআরএ’কে আরো শক্তিশালী করতে হবে : শেখ কবির হোসেন

বিশেষ প্রতিবেদক   |   রবিবার, ০৭ আগস্ট ২০২২   |   প্রিন্ট   |   170 বার পঠিত

আইডিআরএ’কে আরো শক্তিশালী করতে হবে : শেখ কবির হোসেন

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) আরো শক্তিশালী করতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন। বুধবার (৩ আগস্ট) পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বীমা দাবির চেক হস্তান্তর ও আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৭ হাজার ৪৬৮ গ্রাহকের ২৪ কোটি ৪১ লাখ ৬৮ হাজার ১৮৯ টাকার বীমা দাবির চেক হস্তান্তর করা হয়।

এতে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে শেখ কবির হোসেন বলেন, লাইফ ইন্স্যুরেন্স মানুষকে সেবা দেয়ার অন্যতম সেক্টর। পৃথিবীর যে দেশ বীমায় যত শক্তিশালী, সে দেশ অর্থনীতিতে ততো শক্তিশালী। এবং তারাই বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের দেশের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি, যারা শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী তারা এখানে রয়েছেন। কিন্তু তারপরও এ খাতে আমাদের অবস্থা কেন এমন?
তিনি বলেন, বাজারে গ্রাহকের উপযোগী নতুন নতুন বীমা পণ্য নিয়ে আসতে হবে। তা না হলে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করা যাবে না। এজন্য প্রয়োজন গবেষণা। গবেষণা অত্যন্ত জরুরি।
বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থায় জনবল বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে শেখ কবির বলেন, এটি একটি কমিশন। কিন্তু সবচেয়ে দুর্বল কমিশন। অনেক এমডি নানা অনিয়ম করে যাচ্ছে আইডিআরএ কিছু করতে পারছে না। আইন আছে। কিন্তু কিছু করা যাচ্ছে না। জরিমানা করবেন, এতে মূলত গ্রাহকেরই ক্ষতি হবে, কোম্পানির ক্ষতি হবে। এজন্য আইডিআরএ’কে অধিকতর শক্তিশালী করতে হবে। জনবল বাড়াতে হবে। আইডিআরএ’র নিজস্ব লোক থাকতে হবে। অন্য সেক্টর থেকে আসা জনবলের আন্তরিকতা কম থাকে। এই সেক্টরের উন্নতি করতে হলে নিজস্ব লোকবল থাকতে হবে।
শেখ কবির বলেন, আমি চাই বীমা সেক্টর শক্তিশালী একটি সেক্টর হোক। এই সেক্টর শক্তিশালী হলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এ সময় গ্রাহকের মৃত্যু দাবি তিনদিনের মধ্যে পরিশোধের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, এতে গ্রাহকের মনে আস্থা তৈরি হয়। বীমার প্রতি মানুষের আস্থা ফেরাতে গণমাধ্যমে ইতিবাচক খবর প্রকাশেরও আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল্লাহ হারুন পাশা, আইডিআরএ’র সদস্য (প্রশাসন) মইনুল ইসলাম, আইডিআরএ’র সদস্য (নন-লাইফ) মো. নজরুল ইসলাম, আইডিআরএ’র সদস্য (লাইফ) কামরুল হাসান, নির্বাহী পরিচালক (যুগ্ম সচিব ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট বি এম ইউসুফ আলী।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল্লাহ হারুন পাশা বলেন,
দেশে স্বাস্থ্য বীমা কোম্পানি নেই। যদিও লাইফ বীমার মাধ্যমে কিছুটা স্বাস্থ্য বীমা চালু আছে, তবে নন-লাইফে নেই। সরকার চেষ্টা করছে আলাদা স্বাস্থ্য বীমা চালু করার। এ জন্য মন্ত্রণালয় এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আলাদা স্বাস্থ্য বীমা কোম্পানি চালুর চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বে বীমা ছাড়া এক পা চলা যাবে না। আমাদের পাশের দেশেগুলোতেও এখন বীমাকে অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়। উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যাবে তাদের অর্থনীতিতে বীমার অবদান ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। কিন্তু আমাদের দেশে মাত্র দশমিক ৫৬ শতাংশ। ২০২১ সালে বীমাতে অবদান ৪ শতাংশ হবে বলে ধরা হলেও তা আমরা করেতে পারিনি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে দুই ধরনের বীমা কোম্পানি ব্যবসা করে আসছে। লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে থেকে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে। তারা সেই প্রান্তিক মানুষের কাছ থেকে এজেন্সির মাধ্যমে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে থাকে। কিন্তু এই এজেন্সিগুলো মানুষকে ভুলভাল বুঝিয়ে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে। তারা যদি মানুষকে ভালোভাবে বুঝাতো তাহলে এসব মানুষ হয়রানির শিকার হতো না। কিন্তু তাদের বুঝানো হয় না। তাই প্রান্তিক অঞ্চলে বীমার প্রতি মানুষের আস্থা কমছে।

অতিরিক্ত সচিব আবদুল্লাহ হারুন পাশা বলেন, পপুলার লাইফের আজকের এই দাবি পরিশোধ অনুষ্ঠানে এসে আমার মনে হচ্ছে আমি এখন মানুষকে বলতে পারবো বীমাতে দাবি পরিশোধ করা হয়। কেননা এখানে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার জনের প্রায় সাড়ে ২৪ কোটি টাকার দাবি পরিশোধ করা হচ্ছে। পপুলার লাইফ আমাদের খাতায় সবসময় ভালো কোম্পানি হিসেবে ছিল এবং থাকবে বলে আশা করি। এ সময় পপুলার লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট বি এম ইউসুফ আলীর প্রশংসা করে তিনি বলেন, বীমা খাতের স্বার্থের প্রশ্নে তিনি কখনো আপস করেন না। এটি আমার ভালো লাগে।

আইডিআরএ’র সদস্য (প্রশাসন) মইনুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বলেন, বীমা খাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আস্থা ও সুশাসনের অভাব। যত দ্রুত ও যথাসময়ে বীমা দাবি পরিশোধ করা যাবে ততো বেশি সুনাম বাড়বে।
আজকে বীমা দাবি পরিশোধের এই অনুষ্ঠানে আমি একটি কথা বলতে চাই বীমা দাবি শতভাগ পরিশোধ হওয়া দরকার। যদিও পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৮৭ শতাংশ বীমা দাবি পরিশোধ হচ্ছে। সেটাও নানারকম সমস্যার মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। আরো ১৩ শতাংশ বীমা দাবি পরিশোধ হচ্ছে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বীমা দাবি পরিশোধের ক্ষেত্রে ৫ বছর ৭ বছর সময়ও বিলম্বিত হচ্ছে। আমি বলতে চাই, বীমা দাবি শুধু পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স পরিশোধ করলে হবে না। এটা প্রত্যেকটি বীমা কোম্পানিকে পরিশোধ করতে হবে। বীমা খাতে অনেক সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধান করা যাবে যদি কর্পোরেট গভর্নেন্স নিশ্চিত করা যায়। এই সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য আমরা আইডিআরএ থেকে কাজ করে যাচ্ছি।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি আইডিআরএ’র সদস্য (নন-লাইফ) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সময় মতো দাবি পরিশোধ না করলে বীমা খাতে আস্থা ফেরানো যাবে না। সঠিক সময়ে, যথাযথভাবে গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করতে হবে।

তিনি বলেন, বীমা হচ্ছে দু’পক্ষের মধ্যে আইনি চুক্তি। সেখানে লাইফ এবং নন লাইফ দুটোর ক্ষেত্রে একই রকম চুক্তি হয়। লাইফের ক্ষেত্রে মানুষের জমাকৃত টাকা ফেরত দেয়া। আর নন লাইফের ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের বিনিময়ে অনিশ্চিত কোন দুর্ঘটনায় সহযোগিতা করা। আজকে যেহেতু লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অনুষ্ঠান ক্ষেত্রে আমি লাইফ নিয়েই কিছু বলবো। দেশে যে ৩৩টি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি আছে বিগত এক মাসের অভিজ্ঞতা থেকে দেখলাম লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো সেভাবে পরিচালনা করতে পারছে না মনে হয়। যার কারণে লাইফ নিয়ে এতো অভিযোগ আসে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রকৃতপক্ষে লাইফ ইন্স্যুরেন্স যারা করে তারা অনেকেই নিরীহ শ্রেণির। যারা দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষ তাদের ক্ষুদ্র সঞ্চয় থেকে এই বীমা করে। এইসব মানুষের বীমা দাবি যখন আসে তখন যদি সময়মতো পরিশোধ করতে না পারি, এখাতের উন্নয়ন তো দূরে থাক তাদের আস্থা থেকে দূরে সরে যাবো। আমি মনে করি, এখানে তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছি। ইন্স্যুরেন্স খাত কীভাবে উন্নয়ন করা যায়, মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা যায় সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আজকে আশার বিষয় হচ্ছে, পপুলার লাইফের দাবি পরিশোধের যে হার আমরা দেখতে পেলাম তাতে বোঝা যায় যে, দেশের সেরা কয়েকটি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মধ্যে পপুলার লাইফ একটি। আমি আশা করবো পপুলার তাদের দাবি পরিশোধের যে প্রক্রিয়া তা অব্যাহত রাখবে।

আইডিআরএ’র সদস্য (লাইফ) কামরুল হাসান বলেন, পপুলার লাইফের ৭ হাজার ৪৬৮ জন্য বীমা গ্রাহককে ২৪ কোটি ৪১ লাখ ৬৮ হাজার ১৮৯ টাকার বীমা দাবি পরিশোধ একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। যা বীমা শিল্পের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বীমা খাতের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাবো। তার দিক নির্দেশনায় এ খাতের নানা সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানকল্পে সকলে সম্মিলিতভাবে কাজ করলে কাক্সিক্ষত ফলাফল অর্জনে সফল হবো।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি আইডিআরএ’র নির্বাহী পরিচালক (যুগ্ম সচিব) ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন- বাংলাদেশ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে। ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ এই স্লোগানকে সামনে নিয়ে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা আছে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাবে সেই লক্ষ্যে দেশের সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বীমা শিল্পে যে সংস্কার শুরু হয়েছে সেটিও বেশি দিন হয়নি। ২০১০ সালে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) প্রতিষ্ঠা হয়। সেই থেকে নানামুখী কাজ করে যাচ্ছে আইডিআরএ। নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ হিসেবে আইডিআরএ’কে সাপ্লাই সাইড ও ডিমান্ড সাইড দুটোর ভারসাম্য বজায় রেখে কাজ করতে হয়। এখানে সাপ্লাই সাইডে যারা রয়েছে তারা হলো বীমাকারী ও ডিমান্ড সাইডে যারা রয়েছে তারা হলো বীমা গ্রহীতা। বীমাকারী ও বীমা গ্রহীতার মধ্যে শুরু থেকে ভারসাম্য ছিলো না। উন্নত দেশের কাতারে যদি আমাদের যেতে হয় তাহলে উন্নত দেশে যেমন প্রত্যেক সেক্টর, এমনকি প্রত্যেক ব্যক্তি সব ধরনের বীমার আওতায় থাকে; সেভাবে আমাদের কাজ করতে হবে। রাষ্ট্র থেকে তাদের সুরক্ষা দেয়া হয়। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে আমরাও সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। সে কারণেই এখানে একটি রেগুলেটরি অথরিটিও কাজ করে যাচ্ছে। এখন হয়তো নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রম তেমন একটা দৃশ্যমান নয়। সামনে হয়তো আরো বড় পরিসরে কাজ দেখবো। এখন কাগজ-পত্র, আইন-কানুন, বিধি, বিধান এগুলোর উপর কাজ হচ্ছে দেখে সেটা কতটা দৃশ্যমান আপনারা বিবেচনা করবেন। তবে আমাদের অনেক কাজ আছে, আমাদের অনেক দূর যেতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আজকে যে পপুলার লাইফের দাবি পরিশোধের একটি চার্ট আমার সামনে ছিলো, সেটি দেখে আশান্বিত যে সামনে সুন্দর দিন আসছে। কারণ, ২০০১ সালে দাবি পরিশোধ হয়েছে ৪ লাখ টাকা। সেখানে ২০২২ সালে ৪০৯ কোটি টাকা দাবি পরিশোধ করা হচ্ছে। এটা যদি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে বোঝা যাবে আমাদের সক্ষমতা কতটা বেড়েছে এবং মানুষ কতটা বীমা গ্রহণ করেছেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বি এম ইউসুফ আলী বলেন, পপুলার লাইফ কখনো বীমা দাবি পরিশোধে কোনো বিলম্ব করে না। পপুলার এ পর্যন্ত ৫ হাজার ২৩৯ কোটি ৬ লাখ টাকার, ৩৮ লাখ ৫২ হাজার ৯০৩ টি দাবি পরিশোধ করেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট বি এম ইউসুফ আলী বলেন, আমাদের দেশে বীমা খাতের কোম্পানিগুলোতে লাইফফান্ডের একটা প্রতিযোগিতা আছে, লাইফ ফান্ড কে কত বাড়াবে। আসলে দেখতে হবে লাইফ ফান্ড- এটা কার টাকা। একটা কোম্পানি প্রতিষ্ঠার সময় কোনো কোম্পানি দিয়েছে ৭ কোটি, কোনো কোম্পানির ৮ কোটি; এখন লাইফের জন্য ১৮ কোটি, নন-লাইফের জন্য ৩০ কোটি টাকা দিয়ে শুরু করতে হয়। সেটা বাড়তে বাড়তে এক সময় পরিশোধিত মূলধন দাড়ায় একশ’ কোটিতে। এই একশ’ কোটি বাদে যে টাকাটা লাইফ ফান্ডে জমা হয় সেটা কার। সেটা হলো বীমা গ্রাহকের টাকা। অনেক কোম্পানি মনে করে লাইফ ফান্ডের টাকা আমার। এই টাকা আমি ভাঙব না। আমি গ্রাহককে টাকা দিব না। এই গ্রাহকের টাকা দিয়ে অনেক কোম্পানি বড় বড় জায়গা জমি কিনে বিল্ডিং করে অনেক কিছু করে। কিন্তু গ্রাহকের টাকা দিচ্ছে না, এটা অন্যায়।
তিনি আরো বলেন, আমরা বছরের শুরুতে পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকি গ্রাহকের দাবি কীভাবে কত কম সময়ের মধ্যে পরিশোধ করবো। আবেদনের সাত দিনের মাথায় আমরা দাবি পরিশোধ করে আসছি। কোন ক্ষেত্রে কিছুটা দেরি হচ্ছে তাও সেগুলোর নাম বা ন্যাশনাল আইডি কার্ডের তথ্য ভুল হওয়ার জন্য এই দেরি হয়ে থাকে। তা না হলে পপুলার লাইফ ৭ দিনের মধ্যে দাবি পরিশোধ করে আসছে।
তিনি অনুষ্ঠানে বীমা দাবি পরিশোধে পপুলার লাইফের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, এই পর্যন্ত ৩৮ লাখ ৫২ হাজার ৯০৩ জন গ্রাহকের ৫ হাজার ২৩৯ কোটি ৬ লাখ ৫২ হাজার টাকার বীমা দাবি পরিশোধ করেছি। যেটা বীমা খাতের জন্য যুগান্তকারী, অবিস্মরণীয় ও মাইলফলক ঘটনা। আর আজকে আমরা ৭ হাজার ৪৬৮ জন্য বীমা গ্রাহকের ২৪ কোটি ৪১ লাখ ৬৮ হাজার ১৮৯ টাকার বীমা দাবি পরিশোধ করা হচ্ছে।
এছাড়াও পপুলার লাইফে শুধু দাবি পরিশোধ করে আসছে তা না। আমরা কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছি, প্রায় ৫০ হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারী আমাদের সাথে যুক্ত রয়েছে। সামাজিক কর্মকাণ্ড হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর কথা মতো মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য মাদক বিরোধী কার্যক্রমের মধ্যে পর পর ১৩ বার, করোনার সময় দুই বছর বাদে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার অর্জন করেছি। দুর্নীতিমুক্ত, মাদকমুক্ত দেশ গড়ার জন্য পপুলার লাইফ সব সময় কাজ করে যাবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য রাখেন সাবেক সচিব ও কোম্পানির সিনিয়র কনসালট্যান্ট মো. আনিস উদ্দিন মিঞা । তিনি বলেন, আমি বিগত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাথে সম্পৃক্ত। এই প্রতিষ্ঠানে কর্মের সুবাধে দেখেছি এ কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বি এম ইউসুফ আলী কতটা অন্তপ্রাণ এ খাতের জন্য। ২০১০ সালে যখন বীমা আইন প্রণয়ন করা হয়, তখন লাইফ ইন্স্যুরেন্সের জন্য ইসলামী বীমা আইন ও নন ইসলামী বীমা আইন একই আইনের আওতায় অর্ন্তভুক্ত করার কথা ছিলো। তখন তিনি বিষয়টি নিয়ে অনেক চিন্তিত ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এটা যদি এক আইনের আওতায় করা হয় ভবিষ্যত বীমা খাতের জন্য অসুবিধার কারণ হবে। ভবিষ্যতে এই আইনের জন্য বীমা খাতে ধ্বস নামবে। তখন তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৎকালীন আইনমন্ত্রীর কাছে গিয়ে ইসলামী বীমা আইন ও নন ইসলামী বীমা আইনের জন্য আলাদা আলাদাভাবে বীমা আইন প্রণয়নের জন্য বিষয়টি তুলে ধরেন। তখন রাত প্রায় দেড়টা বাজে। এভাবে তিনি এই খাতের জন্য কাজ করেছেন। যে বিষয়গুলো অনেকেই জানেন না। বর্তমানে এখানে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যানসহ অনেকেই রয়েছেন যারা আপনারা এ খাত আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এখাত আরো এগিয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশা করি।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন কোম্পানির সিনিয়র কনসালট্যান্ট মো. সিরাজুল হায়দার এনডিসি। তিনি বলেন, দেশের অনেক সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক সেক্টরের প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোর কার্যক্রমের জন্য ওই প্রতিষ্ঠান অবনমন বা বিলিন হওয়ার পথে। সেখানে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স এ খাতে সংশ্লিষ্ট সকলের সামনে ৭ হাজার ৪৬৮ জন্য বীমা গ্রাহককে ২৪ কোটি ৪১ লাখ ৬৮ হাজার ১৮৯ টাকার বীমা দাবি পরিশোধ করছে এটা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এ ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, নতুন যে বীমা কোম্পানির আছে বা যারা বীমা গ্রাহক রয়েছে তাদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। এ খাতের উন্নয়ন হলে দেশের উন্নয়ন হবে, বেকার জনসাধারণের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। এ খাতের উন্নয়ন হলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। আরেকটি বিষয় বীমা ব্যবসা সাধারত বীমা গ্রাহকের সাথে সংশ্লিষ্ট। গ্রাহকের সাথে যদি বীমা প্রতিষ্ঠানের সুসম্পর্ক থাকে তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি অব্যাহত থাকে। আমাদেরও প্রত্যাশা সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে এই প্রতিষ্ঠানকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবো। তখন আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৮:৪০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৭ আগস্ট ২০২২

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।