শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

ঋণ বিতরণ কমলেও তারল্য সংকটেই ব্যাংক

বিবিএনিউজ.নেট   |   মঙ্গলবার, ০৯ এপ্রিল ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   645 বার পঠিত

ঋণ বিতরণ কমলেও তারল্য সংকটেই ব্যাংক

বেসরকারি খাতে ঋণ দেওয়ার হার (ঋণ প্রবৃদ্ধি) আরও কমেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১২.৫৪ শতাংশ। গত কয়েক বছরের মধ্যে ঋণ প্রবৃদ্ধি এত কমতে দেখা যায়নি। অথচ ব্যাংকগুলোতে এখন নগদ টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মুদ্রা বাজার থেকে ধার করার প্রবণতাও বেড়েছে ব্যাংকগুলোর।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতের অতিরিক্ত তারল্য কমেছে ছয় হাজার কোটি টাকারও ওপরে। এতে বাড়ছে আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজারে সুদের হার। যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হারে পৌঁছেছে।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলো একদিকে আগের মত আমানত সংগ্রহ করতে পারছে না অনেক ব্যাংক। অন্যদিকে আসন্ন রমজান উপলক্ষে পণ্য আমদানিতে নিয়মিত ডলার কিনতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। ফলে ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা নগদ টাকা ক্রমেই কমে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার সংকট বেড়ে যাওয়ায় গত ৩ এপ্রিলে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ১০.৫০ শতাংশ সুদে টাকা ধার নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এর আগে সর্বশেষ ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ সুদহার উঠেছিল ৯.৭৫ শতাংশ।

এর আগে ২০১৩ সালের শুরুতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ঋণ প্রবাহে ভাটা পড়ে। যা পরের বছরেও প্রলম্বিত হওয়ায় ঋণ প্রবাহে মন্দাভাব দেখা দেয়। ২০১৪ সাল জুড়ে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে ১৩ শতাংশে নেমে আসে। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর হয়। ঋণের প্রবৃদ্ধিও বাড়তে থাকে। ব্যাংকগুলো আগ্রাসীভাবে ঋণ বিতরণ করতে থাকে। ২০১৮ সালের শুরুতে এই প্রবৃদ্ধি ১৯ শতাংশে পৌঁছায়। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২.৫৪ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংক খাতে এখন তারল্য সংকট রয়েছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টার্গেট অনুযায়ী বেসরকারি খাতে ঋণ যাচ্ছে না।’

প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছর ধরে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করলেও বিনিয়োগ পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ১৬.৫০ শতাংশ নির্ধারণ করলেও এটি ১৩ শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেসরকারি খাতে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৭০ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময় শেষে ঋণ ছিল ৮ লাখ ৬২ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। এ হিসেবে এক বছরে ঋণ বেড়েছে এক লাখ ৮ হাজার ১২৪ কোটি টাকা।

গত বছর দেশের এসএমই খাতে ব্যাংক ঋণ কমেছে ৭ শতাংশ। ২০১৭ সালে দেশের এসএমই খাতে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ২৪৫ কোটি টাকায়। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এসএমই খাতে ঋণ কমেছে ১৪ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত বছরের জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট তরল সম্পদের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৬৪ হাজার ২৬৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ছয় মাস পর গত ডিসেম্বরে তা কমে দাঁড়ায় দুই লাখ ৫৫ হাজার ১৬৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এ সময়ে ব্যাংকগুলোর কাছে বিনিয়োগযোগ্য অতিরিক্ত নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। গত জানুয়ারিতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৪৮ হাজার ৪১৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এই সময়ে ব্যাংকগুলোর কাছে বিনিয়োগযোগ্য অতিরিক্ত নগদ অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ হাজার ৬২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এক মাসেই ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগযোগ্য নগদ অর্থ কমেছে ছয় হাজার ১৬৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা। অন্যদিকে সাত মাসের (জুন-জানুয়ারি) ব্যবধানে ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ কমেছে ১৫ হাজার ৮৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার।

এ প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘২০১৮ সালের পুরোটা সময় ধরেই তারল্য সংকট ছিল। এ বছরও বিনিয়োগযোগ্য তারল্যের অভাবে অনেক ব্যাংক চাহিদামতো ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। এ কারণে ফেব্রুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২.৫৪ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট আমানত ছিল ১০ লাখ ১৪ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। একই সময়ে সরকারি-বেসরকারি খাতে মোট ১০ লাখ ৮৭ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ব্যাংকঋণ ছিল ৯ লাখ ৭০ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৩:০৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৯ এপ্রিল ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।