বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

এনটিসির বাহাউদ্দিন লিটনের বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ : তদন্ত হয়, প্রমাণ হয়, ব্যবস্থা নেয়া হয় না

বিবিএনিউজ.নেট   |   বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট ২০২০   |   প্রিন্ট   |   2193 বার পঠিত

এনটিসির বাহাউদ্দিন লিটনের বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ : তদন্ত হয়, প্রমাণ হয়, ব্যবস্থা নেয়া হয় না

দেওয়ান বাহাউদ্দিন লিটন চাকরি করেন ন্যাশনাল টি কোম্পানিতে। এ প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন মৌলভীবাজার সদর থানার প্রেমনগর চা বাগানের ম্যানেজার পদে দায়িত্বরত (চলতি) গত কয়েক বছর ধরে। তবে এরই মধ্যে অনেক মুখরোচক কেলেঙ্কারীর জন্ম দিয়ে তিনি হয়েছেন নিন্দিত। পড়েছেন শাস্তি কিংবা জরিমানার কবলে। নৈতিক স্খলনের জন্যই বারবার পড়েছেন এমন শাস্তির মুখে। ফের একই ঘটনায় জড়িয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তার আওতাধীন বাগানের অধস্তন দুই নারী স্টাফের সাথে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী দুই নারী স্টাফ তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডে রাজি না হওয়ায় তাদের বদলি করতে চেয়েছেন অন্যত্র। এখানেও পেয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের বাধা। ন্যাশনাল টি কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করলেও নীরব রয়েছে এনটিসি কর্তৃপক্ষ। তদন্ত বা শাস্তি দূরে থাক, জিজ্ঞাসা পর্যন্ত করা হয়নি ভুক্তভোগী বা অভিযুক্তদের। নারী কেলেঙ্কারীর এমন ঘটনায় প্রশাসন থেকে বাধা এলেও এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ন্যাশনাল টি কোম্পানির আওতাধীন প্রেমনগর চা বাগানে কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে পাঁচ শতাধিক। যেখানে ১২/১৩ জন অফিস স্টাফের মধ্যে নারী স্টাফ মাত্র দুজন। এদের একজন সুমাইয়া আক্তার ইপা। যিনি বাগানের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত এবং অন্যজন ঝুমা রানী বিশ্বাস। যিনি বাগানের হাসপাতালে মিডওয়াইফ হিসেবে কর্মরত। পূর্ব থেকেই এদের প্রতি লোলুপদৃষ্টি ছিল বাগান ম্যানেজার বাহাউদ্দিন লিটনের। বিভিন্ন সময়ে এদের কুপ্রস্তাব দেয়াসহ উত্ত্যক্ত করতেন, যা অন্য অফিস স্টাফের নজরে পড়লেও চাকরি হারানোর ভয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি কেউ।

জানা গেছে, অতিসম্প্রতি ওই দুই নারী স্টাফকে অফিসের কাজের নামে নিজের বাংলোয় ডেকে নেন বাগান ম্যানেজার। একপর্যায়ে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা চালান। উদ্দেশ্য হাসিল করতে না পেরে ইপাকে বাগানে রেখে ঝুমা বিশ্বাসকে অন্যত্র বদলির অপচেষ্টা চালান গত জুন মাসে। বিভিন্ন অজুহাতে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এর আগে জেলা প্রশাসকের কাছে নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয় ভুক্তভোগী এ দুই নারীকর্মী। পাশাপাশি শ্রম অধিদফতরেও অভিযোগ দেয়া হয়। পুরো ঘটনার তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত ভুক্তভোগী নারীদের নিরাপত্তা বিধানসহ চাকরির শর্তাবলীর ব্যত্যয় না করার নির্দেশ দেন। তাছাড়া বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এ ধরনের বদলি সম্ভব নয় বলেও জানানো হয়। গত জুন মাসের ১৪ তারিখ অভিযুক্ত বাগান ম্যানেজারের প্রতি পাঠানো চিঠিতে এই নির্দেশ দেয় জেলা শ্রম অধিদফতরের উপ-পরিচালক নাহিদুল ইসলাম।

পাশাপাশি জেলা প্রশাসক কর্তৃক বিষয়টি তদন্তে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে গত ১৮ জুন নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর অভিযুক্ত লিটনসহ বাদীপক্ষকে তথ্যপ্রমাণসহ গত ২৫ জুন নিজ কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। নির্ধারিত দিনে সবাই উপস্থিত হলেও আসেননি অভিযুক্ত বাহাউদ্দিন লিটন। যা শ্রম আইন অমান্যের শামিল। ফলে আবারো নতুন দিন ধার্য্য করে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেন ইউএনও। এরই মাঝে জেলা শ্রম অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ে এবং ইউএনও কার্যালয়ে শ্রমিক প্রতিনিধি পাঠায় বাগান ম্যানেজার লিটন। তাদের মাধ্যমে জানানো হয়, এই ঘটনার বিচার হলে তা বাগানের উৎপাদনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। অভিযুক্ত তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালায়। একইসাথে বাদীদের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত করতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।

এর আগেও বিভিন্ন অনিয়ম ও কেলেঙ্কারীতে জড়িত থাকার অপরাধে বাহাউদ্দিন লিটনের বিরুদ্ধে জরিমানা, ওএসডি এবং চাকরি ছাঁটাইসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু এরপরও তার অপরাধ কর্মকাণ্ড থেমে থাকেনি। বরং দিন দিন তা আরো বেড়েছে। এক্ষেত্রে তার অপরাধ কর্মে কোম্পানির একজন পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন আরেক কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ প্রশ্রয় ও মদদ রয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে ন্যাশনাল টি কোম্পানিতে যোগদান করেন দেওয়ান বাহাউদ্দিন লিটন। কোম্পানির আওতাধীন তেলিয়াপাড়া বাগানের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার ছিলেন। এর আগে হোসানাবাদ টি কোম্পানি এবং সাতগাঁও টি কোম্পানিতে সহকারী ব্যবস্থাপক থাকাবস্থায় অনিয়মে জড়িত থাকায় উভয় প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কৃত হন। এছাড়া ইতিপূর্বে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে শাস্তিস্বরূপ প্রধান কার্যালয়ে ওএসডি হয়েছিলেন। তৎকালীন চেয়ারম্যানের নির্দেশে কোনোরকম তদন্ত না করে সরকার দলীয় এক প্রভাবশালী নেতার প্রভাব খাটিয়ে প্রেমনগর চা বাগানে বদলি করা হয়।

বাহাউদ্দিন লিটনের বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপের বাইরে দুর্নীতি বিষয়েও ইতিপূর্বে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির এক স্বতন্ত্র পরিচালকের সাথে সখ্য থাকায় সে সময়ও এ নিয়ে কিছুই হয়নি। তাদের প্রশ্রয়ে একের পর এক অসামাজিক ও অনৈতিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এই ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানে এসব দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের একটি অংশ পেয়ে থাকেন অভিযুক্ত পরিচালক ও এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাই বিনিয়োগকারীদের লিখিত অভিযোগের পরও ব্যবস্থা নেয়নি এনটিসি কর্তৃপক্ষ।
বিনিয়োগকারীর অভিযোগ বিষয়ে জানা যায়, গত বছরের ৪ এপ্রিল ওই ব্যবস্থাপকের বিষয়ে জানতে পেরে তা এনটিসি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান নামে এক বিনিয়োগকারী। যিনি পেশায় একজন সাংবাদিক। কোম্পানির সুনাম রক্ষার্থে স্বপ্রণোদিত হয়ে তিনি কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর অভিযোগটি করেন। কিন্তু দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।

এই বিষয়ে উক্ত বিনিয়োগকারীর কাছে জানতে চাইলে বলেন, প্রেমনগর চা বাগানের ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে এর আগেও আমি অভিযোগ পেয়েছি। সে সময় এ বিষয়ে তদন্তসাপেক্ষ ব্যবস্থা নিতে কোম্পানির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেনের সাথে দেখা করলে তিনি চেয়ারম্যান বরাবরে চিঠি ইস্যু করার পরামর্শ দেন। পরে জানতে পেরেছি, স্বতন্ত্র পরিচালক শওকত হোসেন ওয়ারেসির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। সে তদন্ত কমিটি কি করেছে তা এখন পর্যন্ত আমাকে অবহিত করেনি। শুনছি, এখন নাকি চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেনের নাম ভাঙিয়ে লাগামছাড়া অনিয়মে জড়াচ্ছে। একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে কোম্পানির স্বার্থরক্ষায় আমি এমন পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। এরপর দীর্ঘদিনেও ব্যবস্থা না নেয়ায় আবারো চিঠি দেই। কিন্তু ব্যবস্থা নেয়নি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিরা। আমি একজন সাংবাদিক ও বিনিয়োগকারী হওয়ার পরও যদি এক্ষেত্রে ব্যর্থ হই। তবে ওখানকার সাধারণ শ্রমিক-স্টাফদের অবস্থা কি হতে পারে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।

অভিযোগের বিষয়ে ওই বিনিয়োগকারী জানান, ইতিপূর্বে বাহাউদ্দিন লিটনের বিরুদ্ধে ভুয়া বিল প্রদান করে প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ, প্রতিষ্ঠানের সম্পদ অপচয় ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, বাগানের কাজে ব্যবহার্য এইচএসডি (ডিজেল) বাইরের ফিলিং স্টেশনের সাথে বদল করে অকটেনে রূপান্তরিত ও বিক্রির টাকা আত্মসাৎ, একাধিক নারী কেলেঙ্কারীর ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারকে অর্থের বিনিময়ে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রমণ ও প্রাণনাশের পরিকল্পনায় জড়িত থাকা, অধস্তনদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, শ্রমিকদের হাতে লাঞ্ছিত হয়ে কোম্পানির সুনাম ক্ষুণœ করা ও চা পাচার, ইতিপূর্বে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ অডিটে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা জরিমানা প্রদান, বাগানের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারকে জোরপূর্বক বিল-ভাউচারে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করা এবং কোম্পানির দায়িত্ব পালনে অবহেলা এবং নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অধিকাংশ সময় ব্যয় করার বিষয়ে অবহিত করেছি কর্তৃপক্ষকে। যার সপক্ষে যথাযথ তথ্যও ছিল। কিন্তু তারপরও এখন পর্যন্ত কার বা কোন খুঁটির জোরে তিনি বহাল তবিয়তে আছেন তা বোধগম্য নয়।

অভিযোগ দেয়ার পর পেরিয়ে গেছে প্রায় এক বছর তিন মাস। এর মধ্যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় নারীকর্মীদের প্রতি লোলুপদৃষ্টি দিচ্ছে বাহাউদ্দিন লিটন। এ বিষয়ে যদি ত্বরিত পদক্ষেপ না নেয়া হয়, তবে বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ভুক্তভোগীসহ স্থানীয় জনগণ। অন্যদিকে সচেতন মহলের মতে, বাহাউদ্দিন লিটনের মতো ব্যক্তি ও তার দোসরদের এখনই আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:৪৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।