শুক্রবার ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

করোনাভাইরাস: ছয় ব্যাংকের ক্ষতি প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ০৮ মে ২০২০   |   প্রিন্ট   |   360 বার পঠিত

করোনাভাইরাস: ছয় ব্যাংকের ক্ষতি প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই মাসেই সরকারি ছয় ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রস্তুতি ও সম্ভাব্য ক্ষতি নিরূপণ ও প্যাকেজ বাস্তবায়নে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা নিরসনে সুপারিশমালা প্রণয়ন’ শীর্ষক এক ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম। কনফারেন্সে অংশ নেওয়া পাঁচ সরকারি ব্যাংকের এমডি এ ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল।
জানা যায়, ভিডিও কনফারেন্সে করোনাভাইরাসের প্রভাবে সরকারি সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়। ব্যাংকের এমডিরা জানান, করোনাভাইরাসের প্রভাবে তাঁদের ব্যবসায় ধস নেমেছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে প্রথম আক্রান্ত রোগী ধরা পড়ে মার্চের প্রথম সপ্তাহে। সেই হিসাবে দুই মাসে ছয় ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংক জানিয়েছে তাদের ক্ষতির পরিমাণ ৮৩২ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে ৮০০ কোটি টাকার বেশি, অগ্রণী ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকা। করোনাভাইরাসের প্রভাবে আলোচিত বেসিক ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে ৩২০ কোটি টাকা। আর বিডিবিএলের ক্ষতি হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা।
ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল বলেন, ‘আমরা ব্যাংকগুলোর কাছে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে জানতে চেয়েছি। তারা বলেছে। তবে ক্ষয়ক্ষতি এর থেকে বেশি বা কম হতে পারে। আর ক্ষতি মোকাবেলায় ব্যাংকগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে পরিকল্পনা জমা দেবে। কারণ সরকার এসব ব্যাংকের মালিক।’ আর তারল্য সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংককে নানাভাবে সাহায্য করছে বিধায় তারল্য সংকট হবে না বলে জানান তিনি।
একই ব্যাপারে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শামসুল ইসলাম বলেন, ‘বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রণোদনাসহ করোনাকালীন করণীয় বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রণোদনা বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হলে তা জানাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ব্যাংকের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা তা জানিয়েছি।’
এ সময় ব্যাংকগুলোর ক্ষতিপূরণে পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। ব্যাংকগুলোর এমডিরা জানিয়েছেন, তাঁরা স্বাস্থ্য খাতে মনোযোগী হবেন। পাশাপাশি ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এসএমই বা ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ঝুঁকবে ব্যাংকগুলো।
ভিডিও কনফারেন্সে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে নিয়ে ঋণের সুদ স্থগিতের সিদ্ধান্তে ব্যবসায় প্রভাব পড়তে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটা ব্লক অ্যাকাউন্টে রাখা থাকবে। তাই সমস্যা হবে না।
কয়েকটি ব্যাংক সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের কারণে তারল্য সংকট হওয়ার আশঙ্কা করেছে ভিডিও কনফারেন্সে। জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ২৫ হাজার কোটি টাকা পাচ্ছে। তা ছাড়া প্রণোদনার সুদের অর্ধেক সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। তাই তারল্য সংকট হবে না। আর হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তা দেখবে।
এ ছাড়া সরকারি ছয় ব্যাংক বলেছে, সরকারের নির্দেশ মতে, ব্যাংকের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা খারাপ। তাই ব্যাংকগুলোর অবস্থা ভালো না। উদ্বৃত্ত অর্থও দেওয়া হলে ব্যাংকগুলো আরো চাপে পড়বে। তা ছাড়া করোনার জন্য ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় আরো বেড়ে গেছে। এসব ব্যাপারে ভিডিও কনফারেন্সে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে সোনালী ব্যাংককে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংককে ওয়েজেস হিসেবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্য ব্যাংকগুলোকে অর্থ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এটি বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হলে তা সঙ্গে সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এটি মনিটরিংয়ের জন্য প্রতিটি ব্যাংককে মনিটরিং কমিটি এবং সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চ পর্যায়ের কমিটির গঠন করা হবে বলেও ভিডিও কনফারেন্সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে অযথা ব্যয় পরিহারে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১০:৫৩ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৮ মে ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11169 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।