শুক্রবার ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কর্মীরাই চান না সরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসুক

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   84 বার পঠিত

কর্মীরাই চান না সরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসুক

সরকারি কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না হওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। অনেক কোম্পানিই শর্ত পূরণ করতে পারে না। তালিকাভুক্ত হলে ব্যবস্থাপনায়ও পরিবর্তন আসে। যে কারণে অনেক কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি চান না।

শুক্রবার অর্থসূচক ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো-২০২৩-এর একটি সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারের বিষয় ছিল ‘সরকারি মালিকানা কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তির বর্তমান অবস্থা ও করণীয়’।

অর্থ ও বাণিজ্য বিষয়ক নিউজ পোর্টাল অর্থসূচক ডটকম পঞ্চমবারের মতো এই মেলার আয়োজন করেছে। বৃহস্পতিবার তিন দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

শুক্রবারের সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. রুমানা ইসলাম।

সেশন চেয়ার ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) নির্বাহী প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মাহমুদা আক্তার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইসিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন।

সেমিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান ও প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি ফখরুল ইসলাম।

প্রধান অতিথি রুমানা ইসলাম বলেন, ‘পুঁজিবাজারে আসতে কোম্পানিগুলোর কিছু খরচ আছে। এটি একটি খুবই সেনসিটিভ বাজার। এসব কারণে সরকারি কোম্পানিগুলো বাজারে আসতে চায় না।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সব কিছুর প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়ে। করোনার মধ্যেও আমরা চাপ সামাল দিয়েছি। রাশিয়া-ইউক্রেনের প্রভাব সামাল দিতে সবারই কষ্ট হচ্ছে। তবে এসব চাপ সামাল দিয়ে আমাদের পুঁজিবাজার অনেক ভালো হবে।’

বিআইসিএমের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোর অধিকাংশই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। এগুলো তালিকাভুক্ত হলে পুঁজিবাজারের এগিয়ে যাওয়ার পথ আরও মসৃণ হবে।’

মূল প্রবন্ধে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির বেহাল অবস্থার কথা তুলে ধরেন ড. নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে ১৯টি সরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্ত। গত অর্থবছরে এর মধ্যে ছয়টি বা ৩২ শতাংশ কোম্পানি কোনো লভ্যাংশ দেয়নি।’

সরকারি কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে না আসার অনেক কারণ রয়েছে বলে জানান বিআইসিএমের এই গবেষক। তিনি বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত হওয়ার আগের তিন বছর ধারাবাহিকভাবে লাভ করতে হবে। সরকারি অনেক কোম্পানিই লাভ করতে পারে না। তালিকাভুক্ত হলে ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসে। এসব কারণে অনেক কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চান না যে তালিকাভুক্ত হোক।’

তিনি আরও বলেন, ‘তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে বিএসইসির নিয়ম মেনে চলতে হয়। অনুযায়ী, বছরে চার বার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হয়। কিন্তু অনেক কোম্পানি রয়েছে, যারা নিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে না। অনেক কোম্পানি আয় কমিয়ে দেখায়। এডিবি, জাইকা ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ঋণ থাকলেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া যায় না। এসব কারণে সরকারি কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হতে চায় না।’

ড. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সরকারের হাতে ৫১ শতাংশের বেশি থাকা শেয়ারগুলো অফলোড করলে বাজারে শেয়ারের সংখ্যা বাড়বে। বাজেট ঘাটতি পূরণে সরকার ব্যাংক ও বিদেশ থেকে ঋণ নেয়। এক্ষেত্রে পুঁজিবাজার ও গ্রীন বন্ড বিক্রি করে সরকার এসব অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। যেসব কোম্পানি ভালো করতে পারে না, তাদের জন্য ইন্টারন্যাশনাল কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।’

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘কম পেইডআপ ক্যাপিটালের জন্য অনেক কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে পারে না। ২০১৮ সালে ১৭টি কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত হতে চিঠি দিয়েছিলাম। সরাসরি তালিকাভুক্ত হতে ১৭টি প্রতিষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। অর্থনৈতিক অবস্থা ও গুজবের কারণে এসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া অনেকে গত বছর লোকসানে ছিল। আগামীতে এসব সমস্যার সমাধান করে কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসবে।’

বিএমবিএ প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘২০০৬ সাল থেকেই শুনেছি, ২৭টি সরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসবে। একটি কোম্পানিতে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় জড়িত। এতে সমন্বয়ের বাধ্যবাধকতার কারণে তালিকাভুক্ত করানো যাচ্ছে না।’

সমস্যার সমাধান প্রসঙ্গে বিএমবিএ সভাপতি বলেন, ‘আইসিবির পক্ষে সরকারের সব প্রতিষ্ঠানকে সাপোর্ট দেয়া সম্ভব হয় না। তাই মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দিলে বাজারে গতি ফিরতে পারে।’

প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য শুধু আলোচনা হয়। এ বিষয়ে কোনো সমাধান আসে না। এখানে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে।’

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৪:৪৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২৩

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।