রবিবার ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্যারিয়ারের শেষ বলে ‘মুরালির ৮০০’

বিবিএনিউজ.নেট   |   বুধবার, ২২ জুলাই ২০২০   |   প্রিন্ট   |   270 বার পঠিত

ক্যারিয়ারের শেষ বলে ‘মুরালির ৮০০’

দশ বছর আগে জুলাই মাসে তিন টেস্ট ও সাত ওয়ানডে খেলতে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল। টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে কিংবদন্তি অফস্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরনের উইকেটসংখ্যা ৭৯২। সবার ভাবনায় ছিল, তিন ম্যাচে নিশ্চিতভাবেই ৮০০ উইকেটের চূড়ায় পৌঁছে যাবেন মুরালি।

কিন্তু মুরালির নিজের ভাবনা ছিল ভিন্ন। তিনি জানিয়ে দিলেন, ১৮ জুলাই গলে হতে যাওয়া সিরিজের প্রথম টেস্টটিই তার ১৮ বছরের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ম্যাচ। ফলে ৮০০ উইকেটের দুয়ার খুলতে এই এক ম্যাচ থেকে নিতে হতো ৮টি উইকেট। ক্যারিয়ারে ২২ বার যিনি ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছেন, তার জন্য এটি তেমন কঠিন কাজ ছিল না।

কিন্তু শেষ ম্যাচ বলে কথা! তার ওপর কাজটি আরও কঠিন করে তোলে প্রকৃতি, পুরো দ্বিতীয় দিন ভেসে যায় বৃষ্টিতে। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ম্যাচের প্রথম দিন ২ উইকেটে ২৫৬ রান করে শ্রীলঙ্কা। তৃতীয় দিন ৮ উইকেটে ৫২০ রানে ইনিংস ঘোষণা করেন অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারা। মুরালি অপরাজিত থাকেন ৫ রানে।

তৃতীয় দিনের শেষ সেশনটিতে শুরু হয় মুরালির ৮ উইকেট কিংবা ৮০০ উইকেটের গল্প। সেদিন ২৯.৪ ওভার ব্যাট করে ১৪০ রান করে ভারত। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই গৌতম গম্ভীরকে সাজঘরে ফেরত পাঠান প্রায় তিন বছর পর টেস্ট খেলতে নামা লাসিথ মালিঙ্গা। ১২ ওভার পর রানআউটে কাঁটা পড়েন দ্য ওয়াল রাহুল দ্রাবিড়।

দিনটিতে উইকেটবঞ্চিত থাকেননি মুরালি, ইনিংসের ২১তম ওভারে মাস্টার ব্লাস্টার শচিন টেন্ডুলকারকে আউট করে নিজের উইকেটসংখ্যা ৭৯৩তে নেন লঙ্কান মায়েস্ত্রো। মিডল স্ট্যাম্পে পিচ করা ফুল লেন্থের ডেলিভারিটি সুইপ করতে চেয়েছিলেন শচিন। ব্যাটে-বলে হয়নি, প্যাডে লাগতেই আঙুল তুলতে ভুল করেননি আম্পায়ার।

গল টেস্টের চতুর্থ দিনটিই ছিল ‘মুরালির ৮০০’ হওয়ার মূল দিন। লঙ্কানদের চেয়ে ৩৮০ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাটিং শুরু করে ভারত। তারা যোগ করতে পারে মাত্র ১৩৬ রান। ফলে ২৪৪ রানে পিছিয়ে থাকায় ফলোঅন করার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। ভারতকে ফলোঅন করানোর মূল কৃতিত্ব মুরালিরই।

বুধবার ম্যাচের চতুর্থ দিন ভারতের প্রথম ইনিংসে যুবরাজ সিং, মহেন্দ্র সিং, প্রজ্ঞান ওঝা ও অভিমান্যু মিঠুনকে সাজঘরে পাঠিয়ে ক্যারিয়ারে ৬৭তম বারের মতো পাঁচ উইকেট শিকার করেন মুরালি। ফলে ২৪৪ রানের বোঝা মাথায় নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে ফলোঅনে পড়া ভারত।

দিনের বাকি অংশে তারা হারিয়ে ফেলে আরও পাঁচ উইকেট। এবারও ইনিংসের প্রথম ওভারেই গম্ভীরকে সাজঘরে পাঠান মালিঙ্গা। তার দেখাদেখি উইকেট উৎসবে মাতেন চানাকা ওয়েলেগেদারা, ফেরান আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ভিরেন্দর শেবাগকে। পরে দ্রাবিড় ও শচিনের উইকেটও নেন মালিঙ্গা।

কী মনে হচ্ছে? চতুর্থ দিন ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে আর উইকেট পাননি মুরালি? না! এমনটা নয়। দিনের একদম শেষ ওভারের তৃতীয় বলে ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো যুবরাজকে ফেরান মুরালি। ফলে তার উইকেটসংখ্যা হয়ে যায় ৭৯৮ এবং ভারতের স্কোর তখন ৫ উইকেটে ১৮০ রান।

অর্থাৎ শেষদিনে ভারতের শেষ ৫ উইকেটের মধ্যে মাত্র ২টি প্রয়োজন ছিল লঙ্কান কিংবদন্তি। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার, তারিখ ঠিক আজকেরটি (২২ জুলাই), মঞ্চ প্রস্তুত ছিল টেস্ট ক্রিকেটের ‘সম্ভাব্য’ প্রথম ৮০০ উইকেটের মালিককে স্বাগত জানাতে, অপেক্ষা ছিল শুধুমাত্র ২টি উইকেটের।

সাজানো মঞ্চে নামলেন মুরালি। যেনো অনাকাঙ্ক্ষিত বাধা হয়ে গেলেন সতীর্থ মালিঙ্গা। প্রথম ইনিংসে দুই উইকেট নেয়ার পর এ ইনিংসেও ততক্ষণে তিনটি শিকার ঝাঁকড়া চুলের এ পেসারের। পঞ্চম দিনের শুরুতেই ফেরান প্রতিপক্ষ অধিনায়ক ধোনিকে, ভারতের বাকি থাকে আর ৪ উইকেট।

মুরালিকে আক্রমণ থেকে সরাননি অধিনায়ক সাঙ্গাকারা। হতাশ করেননি শেষ ম্যাচ খেলতে নামা জাদুকর, দিনের পঞ্চম ওভারে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন হরভজন সিংকে। ভারত তখনও পিছিয়ে ৪৭ রানে, বাকি তিনটি উইকেট, তবে মুরালির দরকার শুধুমাত্র একটি।

শ্রীলঙ্কার জয় তখন প্রায় নিশ্চিত। তবু অসাধ্য সাধনের লক্ষ্যে টেইলএন্ডারদের নিয়ে খেলতে থাকেন ভিভিএস লক্ষ্মণ। লিডও নিয়ে নেন একপর্যায়ে। এরই মাঝে অভিমান্যু মিথুনকে ফিরিয়ে নিজের ফাইফার পূরণ করেন মালিঙ্গা। অন্যপ্রান্তে অটল ছিলেন লক্ষ্মণ, যোগ্য সঙ্গ দেন ইশান্ত শর্মা।

মুরালি যখন এক উইকেটের খোঁজে, তখন ভারতের লিড ৭০ রানে পৌঁছে দিয়ে রানআউটের শিকার হন লক্ষ্মণ। ফলে অবস্থা এমন দাঁড়ায়, ভারতের বাকি ১ উইকেট, মুরালির ৮০০ উইকেটের জন্যও বাকি ১ উইকেট। শেষ দুই ব্যাটসম্যান ইশান্ত ও ওঝা গড়ে ফেলেন ২৪ রানের জুটি।

অপেক্ষার তর সইছিল না আর। একদিকে ভয় অন্য কারও ওভারে শেষ উইকেট পতনের, অন্যদিকে রোমাঞ্চ মুরালির ৮০০ উইকেটের। এমন করতে করতেই ১৪ ওভার খেলে ফেলেন ইশান্ত ও ওঝা। দুজনের ব্যাটিং দেখে বোঝাই যাচ্ছিল না তারা আসলে শেষের সারির ব্যাটসম্যান।

অবশেষে দিনের ৪৭ ও ইনিংসের ১১৬তম ওভারের চতুর্থ বলে ঘটে অপেক্ষার সমাপ্তি। মুরালির অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে ফ্রন্টফুট ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন ওঝা, বল লাগে ব্যাটের কানায়, সোজা উড়ে যায় প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো মাহেলা জয়াবর্ধনের হাতে। কোনো ভুল করেননি নির্ভরযোগ্য ফিল্ডার মাহেলা।

ক্যারিয়ারে এর আগে আরও ৭৬ বার মুরালির বলে ক্যাচ নিয়েছিলেন তিনি, তবে নিশ্চিতভাবেই সবচেয়ে স্মরণীয় ছিল এই ৭৭তম ক্যাচটি। যার মাধ্যমে পূরণ হয় মুরালির ৮০০ এবং বিশ্ব ক্রিকেট দেখতে পায় নতুন এক চূড়া। মুরালির টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ বলও হয়ে আছে এটিই। আর এ কীর্তি সম্পাদিত হয়েছিল আজ থেকে ঠিক ১০ বছর আগে, ২০১০ সালে ২২ জুলাই তারিখেই।

পুনশ্চঃ মুরালির বিদায়ী টেস্টে ১০ উইকেটের সহজ জয় পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৯৫ রানের। মাত্র ১৪.১ ওভারেই এ রান করে ফেলেন থারাঙ্গা পারানাভিতানা ও তিলকারাত্নে দিলশান। হরভজনকে ছক্কা মেরেই ম্যাচ শেষ করেন ৪৭ বলে ৬৮ রান করা দিলশান।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৫:১৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২২ জুলাই ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।