বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্ষুদ্রবীমা প্রকল্পগুলো সফল করতে সকলের অংশীদারিত্বের প্রয়োজন : মো. আরাফাত হোসেন, টিম লিডার, বাংলাদেশ মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স মার্কেট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিএমএমডিপি), সুইস কন্ট্যাক্ট বাংলাদেশ

  |   রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২   |   প্রিন্ট   |   92 বার পঠিত

ক্ষুদ্রবীমা প্রকল্পগুলো সফল করতে সকলের অংশীদারিত্বের প্রয়োজন : মো. আরাফাত হোসেন, টিম লিডার, বাংলাদেশ মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স মার্কেট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিএমএমডিপি), সুইস কন্ট্যাক্ট বাংলাদেশ

বাংলাদেশের বীমা আইন বা বীমা বিধিতে ক্ষুদ্রবীমার কোনো সংজ্ঞা দেয়া হয়নি। ক্ষুদ্রবীমা পরিকল্প চালুর বিষয়ে কাঠামোগত কোনো নির্দেশনাও নেই। তা সত্ত্বেও দেশের বেশিরভাগ জীবন বীমা কোম্পানি ক্ষুদ্রবীমা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো জীবন বীমা কোম্পানি মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউট বা ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ঋণগ্রহীতাদের ক্ষুদ্রবীমার আওতায় নিয়ে এসেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্রবীমা বা অন্তর্ভুক্তিমূলক বীমার (ইনক্লুসিভ) প্রাসঙ্গিকতা অনেক বেশি। দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত এক বিশাল জনগোষ্ঠীর দুঃখ, দুর্দশা লাঘবে ক্ষুদ্রবীমা অনন্যসাধারণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ক্ষুদ্রবীমা কম আয় এবং দরিদ্র ব্যক্তিদের তাদের ঝুঁকি পরিচালনা করতে সহায়তা করে। আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো মনে করে, ক্ষুদ্রবীমার বার্ষিক প্রিমিয়াম স্তর গ্রাহকের ১০ দিনের আয়ের বেশি হওয়া উচিত নয়। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষুদ্রবীমা এসডিজি, ডেল্টা প্ল্যান এবং সরকারের রূপকল্প ২০৪১ সহ অন্যান্য অগ্রাধিকার পরিকল্পনার সাথে গভীরভাবে জড়িত। বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক বীমা বা ক্ষুদ্রবীমার সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ, আইনগত সীমাবদ্ধতাসহ নানা বিষয়ে খাতসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতির বিশেষ প্রতিনিধি নাসির আহমাদ রাসেল।  সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: বাংলাদেশ মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স মার্কেট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিএমএমডিপি) সম্পর্কে জানতে চাই। মূলত কোন লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই প্রকল্প কাজ করছে?

মোঃ আরাফাত হোসেন:
বাংলাদেশ মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স মার্কেট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিএমএমডিপি) এর প্রথম ধাপের লক্ষ্য হল কৃষকদের কল্যাণ। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহনীয় উন্নত কৃষি উৎপাদনশীলতার মাধ্যমে। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র কৃষকরা আবহাওয়ার কারণে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার কারণে যার তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। তাদের সীমিত সঞ্চয়ের কারণে, সামাজিক সুরক্ষা ও কৃষি বীমার সুযোগ না থাকার কারণে ক্ষুদ্র কৃষির কৃষকরা প্রায়ই একটি মৌসুমের ফসলের ক্ষতি বা গবাদি পশুর রোগের ক্ষতিসহ বিপর্যয়কর ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বাংলাদেশের সামগ্রিক বীমা খাত এখনো পূর্ণবিকাশ লাভ করেনি এবং কৃষি ও দুর্যোগ বীমা ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মৌসুমে ক্ষতি কমিয়ে আনতে কৃষকদের একমাত্র পদ্ধতি হলো কৃষিকাজে কম খরচ করা। এতে আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি
কম থাকে। কিন্তু এতে সমস্যা হলো বিনিয়োগ কম হওয়ায় কৃষি উৎপাদনও কম হয়। এতে কৃষকদের দারিদ্রতা থেকেই যায়।

বিএমএমডিপি বাংলাদেশে কৃষি খাত, প্রাথমিকভাবে শস্য ও পশুসম্পদ উপখাতের উপযুক্ত আবহাওয়া সূচকভিত্তিক শস্য বীমা পরিকল্প নিয়ে কাজ করছে। একইসঙ্গে ঝুঁকি প্রশমনের পদ্ধতি সনাক্ত করবে। কৃষিখাত বিকাশের জন্য বিভিন্ন বীমা পরিকল্প ও এর বিপণন নিয়ে পরীক্ষামূলক কাজের উপর ফোকাস করবে।

প্রথম ধাপে ১০ জেলার দুই লাখ ৩৩ হাজার কৃষকের ৭,৫৭৮ একর (৩০৬৭ হেক্টর) জমি শষ্য বীমার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে । দুই লাখ গবাদিপশুপালককে উন্নত পশুচিকিৎসা ও পশুপালন সেবা দেয়া হবে। ৬৩ হাজার কৃষক পশুসম্পদ বীমা ব্যবহার করবেন। এভাবে ক্ষতি হ্রাস করে কৃষকরা তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং দারিদ্রমুক্ত হতে পারবেন বলে আশা করা যায়।

 

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: বাংলাদেশে ক্ষুদ্রবীমার বাজার সম্ভাবনা কতটা এবং চ্যালেঞ্জগুলো মূলত কী কী?

মোঃ আরাফাত হোসেন: সুইস কন্ট্যাক্ট বাংলাদেশ মনে করে, ক্ষুদ্রবীমা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সম্পর্কিত। এটি সরকারের রূপকল্প ২০৪১-এর সাথেও গভীরভাবে জড়িত। যা জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায় দুর্যোগ সহনশীল শস্য ও পশুসম্পদ উৎপাদন ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব দেয়। ক্ষুদ্রবীমা খাত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে কিন্তু এর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে যাতে খাতটি তার পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে পারে।

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং চ্যালেঞ্জগুলো দিন দিন বাড়ছে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে ক্ষুদ্রবীমা প্রকল্পগুলিকে সফল করতে পাবলিক সেক্টর, প্রাইভেট সেক্টর এবং ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের মধ্যে অংশীদারিত্বের তীব্র প্রয়োজন।
ক্ষুদ্রবীমা কম আয় এবং দরিদ্র ব্যক্তিদের তাদের ঝুঁকি পরিচালনা করতে সহায়তা করে। ক্ষুদ্রবীমার বার্ষিক প্রিমিয়াম স্তর গ্রাহকের ১০ দিনের আয়ের বেশি হওয়া উচিত নয়।

বাংলাদেশে বীমার উপর বর্তমান মাথাপিছু ব্যয় জনপ্রতি ৮ মার্কিন ডলার যেখানে ভারতে এটি জনপ্রতি ৭১ ডলার। সুতরাং, বাংলাদেশে বীমা বাজার বিকাশের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ফিলিপাইন মাত্র ২০ বছরে তার জনসংখ্যার ৩০ শতাংশকে ক্ষুদ্রবীমার আওতায় এনে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে।
বাংলাদেশে শস্য বীমার বাজার সম্ভাবনা ৫৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং পশু সম্পদের জন্য এটি ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রায় ৭.৮ শতাংশ এসএমই নারীদের মালিকানাধীন। এই পরিসংখ্যানগুলি দেখায় যে বাংলাদেশে ক্ষুদ্রবীমার একটি সুস্পষ্ট বাজার রয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে জিডিপিতে বীমার অবদান এক শতাংশের নিচে। আমরা যদি কৃষিক্ষেত্রকে এগিয়ে নেই, তাহলে আমরা সহজেই বাংলাদেশের অর্থনীতে বীমার অবদান বাড়াতে পারি।

আমাদের উচিত বীমা পণ্যের উন্নয়নে মনোযোগ দেওয়া। টার্গেট অডিয়েন্সের কথা মাথায় রেখে আমাদের প্রথমে পণ্য ডিজাইন করতে হবে তা বের করতে হবে। কৃষি বীমা পণ্যের উন্নয়নে তত্ত্বাবধায়ক নির্দেশিকা প্রয়োজন, এবং এখানে শিল্প এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে একটি সহযোগিতা নিশ্চিত করা উচিত।

ডিস্ট্রিবিউশন হল আরেকটি মূল উপাদান যার ফোকাস প্রয়োজন। যেহেতু বাংলাদেশের কৃষকরা পিরামিডের সর্বনিম্ন অংশে রয়েছে, তাই তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য আমাদের অবশ্যই বিতরণের বিকল্প চ্যানেল ব্যবহার করতে হবে।আমাদের কৃষি বীমা পণ্যের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে। অন্যথায়, একটি পণ্য তৈরি করা অর্থহীন হবে। আমাদের কৃষি বীমা পণ্যের উপর কর ও ভ্যাট কমানো উচিত।

আমাদের একটি নির্দেশিকা বা রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে যা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে যে আমরা একটি শিল্প হিসাবে কোথায় যেতে চাই। এটি আমাদের পরিকল্পনা তৈরি করতে এবং কীভাবে আমরা কৃষি ক্ষুদ্রবীমাকে উন্নত করব এবং বাজারে এটির জন্য চাপ দেব তা বের করতে সাহায্য করবে। প্রচার এবং বিতরণের সুবিধার্থে আমরা ক্রেডিটসহ বীমা পণ্যগুলিকে বান্ডিল করতে পারি। টেকসই বীমা হল জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিপর্যয়ের কারণে কৃষকদের যে ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয় তা প্রশমিত করার চাবিকাঠি। যাইহোক, একই সময়ে, আমাদের জলবায়ু এবং প্রকৃতির যত্ন নেওয়া উচিত।

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৭:৫৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।