বিবিএনিউজ.নেট | সোমবার, ১৩ মে ২০১৯ | প্রিন্ট | 467 বার পঠিত
নানা অনিয়ম-দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় ঋণ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। কিন্তু সে ঋণ সময় মতো আদায় হচ্ছে না। ফলে খেলাপিতে ডুবছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিবিড় পর্যবেক্ষণের পরও চার ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার খুব একটা উন্নতি নেই। প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতিতে নাজুক অবস্থায় ব্যাংকগুলো। শীর্ষ খেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায় নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের বৈঠক হয়। গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক মো. মাসুম কামাল ভূঁইয়া, কাজী ছাইদুর রহমান ও মো. রবিউল হাসান প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় ব্যাংকগুলো ২০১৮ সালের প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী গেল বছর ব্যাংকগুলোর ব্যবসা পরিচালনার বিভিন্ন সূচকে রয়েছে মিশ্র প্রবণতা। লোকসানি শাখা কমলেও বিপুল অঙ্কের খেলাপিঋণ রয়েছে ব্যাংকগুলোতে। প্রভিশনের সঙ্গে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকগুলো। এছাড়া শীর্ষ-২০ খেলাপিদের থেকে নগদ আদায় সন্তোষজনক নয়। ফলে বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপিঋণ ও শীর্ষ খেলাপিদের থেকে আদায় পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে ২০০৭ সাল থেকে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমওইউতে খেলাপি ঋণ আদায়, ঋণ প্রবৃদ্ধি যথাযথ রাখা, লোকসানি শাখা ও পরিচালন ব্যয় কমানো, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তিন মাস পর পর ব্যাংকগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকের মাধ্যমে এসব লক্ষ্য অর্জনের মূল্যায়ন করা হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ব্যাংকগুলো ২০১৮ সালের আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো বেশকিছু সূচকে ভালো করেছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে সফল হয়নি। যেমন তাদের খেলাপিঋণ এখন উচ্চমাত্রায় রয়েছে। শীর্ষ খেলাপিদের থেকে আদায় সেভাবে বাড়েনি। এছাড়া মুনাফা অর্জনের টর্গেটও অর্জন হয়নি। বৈঠকে খেলাপিঋণসহ পিছিয়ে পড়া সূচকে উন্নতি করার ওপর জোরারোপ করেছেন গভর্নর।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৭ হাজার ২২৫ কোটি টাকা খেলাপিঋণ জনতা ব্যাংকের, যা ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৩৬ শতাংশ। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির খেলাপিঋণ ছিল ৭ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা। এ সময়ে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপিঋণ বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে যা ছিল ৫ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংকের খেলাপিঋণ কিছুটা কমে হয়েছে ১২ হাজার ৬১ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে যা ছিল ১৪ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। এছাড়া রূপালী ব্যাংকেরও খেলাপিঋণ কিছুটা কমে হয়েছে ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকা, যা ২০১৭ সালে ছিল ৪ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ২০১৮ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত এই চার ব্যাংকের ৩টিই প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ৩ হাজার ৮৮ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ৫৯৩ কোটি ও রূপালী ব্যাংকের ৮৩৪ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি ছিল। এ সময়ে জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে ছিল। এর মধ্যে জনতা ব্যাংকের ৫ হাজার ৮৫৩ কোটি ও অগ্রণী ব্যাংকের ৮৮৩ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর শীর্ষ-২০ খেলাপিদের কাছ থেকে নগদ আদায় নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পরেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আলোচিত সময়ে শীর্ষ-২০ খেলাপিদের কাছ থেকে আদায় করেছে সোনালী ১১৯ কোটি, জনতা ৯৯ কোটি, অগ্রণী ১ কোটি ৭৪ লাখ ও রূপালী ৫ কোটি টাকা নগদ আদায় করেছে। অন্যদিকে, অন্যান্য খেলাপিদের থেকে আদায় করেছে সোনালী ৮৮৮ কোটি, জনতা ৩৮৪ কোটি, অগ্রণী ৩১৭ কোটি ও রূপালী ১৮০ কোটি টাকা আদায় করে।
ব্যাংকগুলোর তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে আমানতের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি ২৩ শতাংশ ছিল রূপালী ব্যাংকের। এছাড়া অগ্রণীর ১৭ দশমিক ৪২ শতাংশ, সোনালীর ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ ও জনতার ৪ দশমিক ০২ শতাংশ আমানতের প্রবদ্ধি হয়। অন্যদিকে গতবছর সর্বোচ্চ ১৯ দশমিক ৯১ শতাংশ ঋণের প্রবৃদ্দি হয় অগ্রণী ব্যাংকের। এছাড়া জনতার ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ, রূপালীর ১৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ ও সোনালীর ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
এদিকে ২০১৮ সালে পরিচালন ব্যয় প্রায় একই ছিল রূপালী ব্যাংকের, ৭৭০ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় আগের বছরের চেয়ে ১০৬ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় ২৮ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। তবে সোনালী ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় প্রায ৫২ কোটি টাকা কমে হয়েছে ১ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ২০১৮ সালে সোনালী ও রূপালী ব্যাংক নিট মুনাফা অর্জনে সক্ষম হলেও লোকসানে ছিল জনতা ও অগ্রণী। তবে গতবছর লোকসানি শাখা কমে এসেছে সব ব্যাংকেরই। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে রূপালীর লোকসানি শাখার সংখ্যা ছিল ৩৩টি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮টি। ২০১৭ সালে সোনালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা ১৮১টি থাকলেও ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে নেমে এসেছে ৯৩টিতে। অগ্রণী ব্যাংকের ২০১৭ সালে ছিল ৪৩টি, তা ২০১৮ সালে দাঁড়িয়েছে ২১টি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে জনতা ব্যাংকের শাখা ৫৭টি থাকলেও এক বছরের ব্যবধানে ২০১৮ সালে মাত্র ১টি কমে দাঁড়িয়েছে ৫৬টিতে।
Posted ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৩ মে ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed