শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x
হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি

দায় এড়াতে পারে না ন্যাশনাল ব্যাংক

বিবিএনিউজ.নেট   |   বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   606 বার পঠিত

দায় এড়াতে পারে না ন্যাশনাল ব্যাংক

ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের দুটি শাখায় দুই প্রতিষ্ঠানের নামে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি হয়েছে। এ সম্পর্কিত জালিয়াতির দায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এড়াতে পারে না বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদনে এজন্য ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও শাখা ব্যবস্থাপকেও দায়ী করা হয়েছে। ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন তারা।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিশেষ তদন্তে ন্যাশনাল ব্যাংকের চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখায় নাফ ট্রেডিংয়ের নামে ৬৫০ কোটি এবং একই ব্যাংকের মহাখালী শাখায় হাসান টেলিকমের নামে ৩৩৫ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনা উদ্ঘাটন হয়েছে। শাখার ওপর বেআইনিভাবে প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকের পর্ষদ ও প্রধান কার্যালয় এ ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। ওই দুই প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেয়া হলেও বাস্তবে এর সুবিধাভোগী অন্য কেউ বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোনো খাতে ঋণ দিলে সেই খাতেই বিনিয়োগ করতে হয়। কিন্তু দুটি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত খাতে ঋণের অর্থ বিনিয়োগ না করে অন্য খাতে নিয়ে গেছে। যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দৃষ্টিতে আইনের লঙ্ঘন।

এছাড়া ঘটেছে নানা ধরনের অনিয়ম। প্রচলিত নিয়মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো তদন্তে অনিয়ম ধরা পড়লে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগ থেকে তদন্ত প্রতিবেদনটি সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ঋণের টাকার একটি অংশ পাচার করে দেয়ার সন্দেহ করা হচ্ছে। এ ঘটনাটি বিশদভাবে তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটকে (বিএফআইইউ) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ীই সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। এক্ষেত্রে এ বিভাগ তদন্ত করে, অন্য বিভাগ ব্যবস্থা নেয়। ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রতিবেদনটি সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়েছে। তারা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কোথায় কোথায় আইনের লঙ্ঘন হয়েছে সেগুলো শনাক্ত করবে। তারপর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বক্তব্য নেবে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

একটি অনিয়ম ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে যায়। তেমনি ন্যাশনাল ব্যাংকের বিষয়টিও আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দুটি প্রতিষ্ঠানই ঋণের টাকা একাধিক হিসাবে স্থানান্তরিত করে বেশ কিছু অর্থ নগদে তুলে নিয়ে গেছে। নগদে তুলে নেয়ায় ওই অর্থের সুবিধাভোগীকে আড়াল করা হয়েছে। সাধারণত এতো বেশি অর্থ নগদ আকারে তোলার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রেও শাখা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধি লঙ্ঘন করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শাখা থেকে এসব ঋণের ব্যাপারে নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরলেও শেষ পর্যন্ত শাখা থেকেই আবার ঋণ অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করে প্রস্তাব পাঠিয়েছে প্রধান কার্যালয়ে। প্রধান কার্যালয় থেকে কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই পর্ষদে ঋণ প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। পর্ষদ কোনো রকম পর্যালোচনা ছাড়াই ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে দিয়েছে। সার্বিকভাবে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আমানতকারীদের অর্থ বিনিয়োগের আগে তদারকি ও ঝুঁকি প্রশমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

এছাড়া ব্যাংকের পর্ষদের কাছে দুই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক তথ্য যেমন গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট রিপোর্ট না থাকা, শর্ত অনুযায়ী গ্রাহকের জামানত বন্ধকী না হওয়া, ঋণ হিসাবে যথেষ্ট অর্থ জমা না করা ইত্যাদি তথ্য থাকা সত্তে¡ও সেগুলো উপেক্ষা করে ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে ঋণসীমা। এরপরও ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবে পর্ষদ অনুমোদন দিয়েছে। পুরো পক্রিয়াটি এত বেশি দ্রæততার সঙ্গে হয়েছে যে, যাতে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যাংক কোম্পানির নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও তা পরিপালন নিশ্চিত করার জন্য পরিচালনা পর্ষদকে দায়বদ্ধ করা হয়েছে। নাফ ট্রেডিং ও হাসান টেলিকমের অনুকূলে ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে ব্যাংকের পর্ষদ এ দায়বদ্ধতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ঋণ বিতরণ একটি কন্ট্রোল সিস্টেমসের মধ্য দিয়ে হয়। এর মধ্যে পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ থাকে। কেননা তারাই ব্যাংকটি পরিচালনা করে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এর বাইরে গিয়ে বড় অঙ্কের কোনো ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটলে এর দায় পর্ষদ এড়াতে পারে না। এখন পর্ষদকেই খুঁজে বের করতে হবে, কোথায় কিভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেছে।

তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে যা চলছে, এতে কোনো কিছুই একেবারে অসম্ভব কিছু নয়। বেসিক ব্যাংকে এত লোক নিয়োগ হয়ে গেল, কিন্তু পর্ষদ জানল না। এর মানে হচ্ছে- পর্ষদ ঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে না। তিনি ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এদিকে ন্যাশনাল ব্যাংক সূত্র জানায়, ঋণটি আদায়ের জন্য ব্যাংক সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে। এ লক্ষ্যে গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, জাল-জালিয়াতির কারণে ন্যাশনাল ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩৫১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। যা মোট ঋণের প্রায় ১০ শতাংশ। এর মধ্যে আদায় অযোগ্য কুঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। এসব ঋণের বিপরীতে ব্যাংককে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হচ্ছে। ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ার কারণে তারা চাহিদা অনুযায়ী প্রভিশন রাখতে পারছে না। ফলে তাদের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৪৫ কোটি টাকা।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।