নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ২৮ আগস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট | 69 বার পঠিত
ন্যাশনাল টি কোম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়ম বহির্ভূত ও সন্দেহজনক শেয়ার বিক্রয়ের কারণে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে যথাযথ তথ্য পাওয়ার দাবি জানিয়ে কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালককে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
গত ২৭ জুলাই কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামানের পক্ষে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে লিগ্যাল নোটিশটি পাঠান আইনজীবী মো. বিল্লাল হোসেন। নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
নোটিশে দাবি করা হয়েছে, ৪৩ ও ৪৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি চৌধুরী নাফিজ সরাফত তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ফিনিক্স সফটওয়্যার লি. ও ডাইনেস্টি হোম লি. -এর প্রতিনিধি হিসাবে পরিচালক নির্বাচিত হন। ২০২১ সালের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে হঠাৎ করে ২ মিনিটের মধ্যে ন্যাশনাল টি কোম্পানির ১,৩৮,৬০০ টি শেয়ার ফিনিক্স সফটওয়্যার লি. -এর নামে ক্রয় করা হয়। পরবর্তীতে, নাফিজ সরাফতের আরেকটি কোম্পানি ডাইনেস্টি হোমস লি. -এর নামে ১,৩৭,৫১৭ টি শেয়ার ক্রয় করা হয়। এই দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ২,৭৬,১১৭ টি শেয়ার স্পন্সর শেয়ার হিসাবে বিক্রি করা হয়েছে যা আইনি বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে সম্পাদিত হয়েছে।
ন্যাশনাল টি কোম্পানির ২০২০-২০২১ এবং ২০২১-২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, আইসিবি (ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ) স্পন্সর শেয়ার বিক্রি করেছে যা ন্যাশনাল টি কোম্পানির স্বারক সংঘ বিধির সাথে সাংঘর্ষিক। কোম্পানির আর্টিকলস অব অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী, আইসিবি যদি স্পন্সর শেয়ার বিক্রি করতে চায় তবে প্রথমে সরকার এবং সাধারণ বীমা করপোরেশনকে ক্রয়ের সুযোগ দিতে হবে। তারা অনীহা প্রকাশ করলে, শেয়ারগুলো স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করা যাবে। এছাড়া, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লিস্টিং রেগুলেশন ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ ৩৪ এর ১ মোতাবেক, কোনো কোম্পানির স্পন্সর বা পরিচালককে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের আগে যথাযথ তথ্য বিএসইসি-কে অবহিত করতে হবে। ২,৭৬,১১৭ টি শেয়ারের বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ আইসিবি পেয়েছে কিনা এবং ভ্যাট ও ট্যাক্স যথাযথভাবে প্রদান করা হয়েছে কি না তা নিয়ে নোটিশে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এ ছাড়াও ন্যাশনাল টি কোম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যা কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, ন্যাশনাল টি কোম্পানির শেয়ার নিয়ে একটি বড় ধরণের ম্যানিপুলেশনের অভিযোগ উঠেছে। শেয়ারহোল্ডার চৌধুরী নাফিজ সরাফত ও তার ব্যক্তিগত সহকারী ও আত্মীয় আতিফ খালেদ ২০২১ সালের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে মাত্র ২ মিনিটের মধ্যে ১,৩৮,৬০০টি শেয়ার ক্রয় করেন, যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতে অত্যন্ত অস্বাভাবিক এবং সন্দেহজনক ঘটনা। এই শেয়ার ক্রয়ের ফলে দেশের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোটি কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
নোটিশে দাবি করা হয়, ফিনিক্স সফটওয়্যার লিমিটেড এবং ডাইনেস্টি হোমস লিমিটেডের নামে কেনা শেয়ারগুলো যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ক্রয় করা হয়নি। চৌধুরী নাফিজ সরাফতের সমস্ত বিও অ্যাকাউন্ট ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক স্থগিত করা হলেও তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ফিনিক্স সফটওয়ার লিমিটেড ও ডাইনেষ্টি হোমস লিমিটেডের নামে কেনা এনটিসির শেয়ারগুলোর কার্যক্রম এখনো স্থগিত করা হয়নি। যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইঋওট) মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২০১২ এর ২৩ (১)(গ) ধারা অনুযায়ী নাফিজ সরাফতের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের লেনদেন ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করেছে। নাফিজ সরাফতের মালিকানাধীন ফিনিক্স সফটওয়্যার লিমিটেড এবং ডাইনেস্টি হোমস লিমিটেডের নামে ক্রয়কৃত ২,৭৬,১১৭টি শেয়ার বিক্রি করে সেই অর্থ বিনিয়োগকারীদের মাঝে সমবন্টন করে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় নোটিশে। শেয়ারহোল্ডারদের দাবি, চৌধুরী নাফিজ সরাফত এবং তার সহকারী ও আত্মীয় আতিফ খালেদকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে পরিচালকের পদ থেকে অপসারণ করতে হবে। এছাড়াও, কোম্পানির অব্যবস্থাপনায় জড়িত অন্য ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে নোটিশে।
নোটিশে বলা হয়, এই ম্যানিপুলেশন এবং অভিযোগগুলো বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বাজারে। শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
নোটিশে অভিযোগ করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার চাচা সাবেক চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেনের প্রভাব খাটিয়ে চৌধুরী নাফিজ সরাফত ও তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আতিফ খালেদ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে শেয়ার ক্রয় করে এনটিসির শেয়ারহোল্ডার হিসেবে পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত হন।
এদিকে একজন শেয়ারহোল্ডার দাবি করেছেন, চৌধুরী নাফিজ সরাফত এবং তার সহযোগী এই অবৈধ প্রক্রিয়ায় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে সুবিধা নিয়েছেন এবং এখনো নিয়ম ভঙ্গ করে চলেছেন।
Posted ৮:২১ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৮ আগস্ট ২০২৪
bankbimaarthonity.com | rina sristy