শুক্রবার ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে কৃষি ক্ষুদ্রবীমা বাজারের সম্ভাবনা উন্মোচন বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ০৬ এপ্রিল ২০২২   |   প্রিন্ট   |   145 বার পঠিত

বাংলাদেশে কৃষি ক্ষুদ্রবীমা বাজারের সম্ভাবনা উন্মোচন বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

‘বাংলাদেশে কৃষি ক্ষুদ্রবীমা বাজারের সম্ভাবনা উন্মোচন: সম্ভাবনা ও ঝুঁকি’ শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করেছে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। বাংলাদেশস্থ সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের অর্থায়নে গতকাল বুধবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)’র প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের (আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ) অতিরিক্ত সচিব আব্দুল্লাহ হারুন পাশা। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন, মো. বেনজির আলম ডাইরেক্টর জেনারেল, ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার এক্সটেনশন, বি এম ইউসুফ আলী প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম, কর্নি হ্যান্সসজ পিগনানি ডেপুটি হেড অব কপারেশন অ্যাম্বাসি অব সুইজারল্যান্ড ইন বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানে দেশের সরকারি বেসরকারি সকল লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ অংশ গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম প্রেসিডেন্ট বি এম ইউসুফ আলী বলেন বাংলাদেশের উন্নয়নে কৃষি খাতের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। বছরের পর বছর দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে কৃষিখাত মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে। দেশে কৃষিজীবির অধিকাংশই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক। তাদেও অধিকাংশই এখনো ব্যাংক ঋণসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা হতে বঞ্চিত। তাই তাদের জন্য অ্যাগ্রিকালচার মাইক্রোইন্স্যুরেন্সের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। যেমন প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে গ্রামীণ ক্ষুদ্র কৃষকদের যে আর্থিক ক্ষতি হয় তার জন্য তাদের বীমা সুবিধার আওতায় আনা একান্ত প্রয়োজন। কারণ তাদের এ ক্ষতি পূরণের কোন উপায় থাকে না এবং অনেক সময় তারা বাধ্য হয়ে সম্পদ বিক্রি করে অথবা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আবার বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর মধ্যে কৃষিজীবীরা অন্যতম। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের জন্য কৃষি বীমার মাধ্যমে বীমা সুবিধা চালু করা গেলে তাদের এ ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব। ক্ষুদ্র কৃষকরাই এ জাতির চালিকাশক্তি, কারণ এদেশের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। আবহাওয়ার বিভিন্ন প্রতিকুলতা যেমন-বন্যা, খরা, ঝড়-বৃষ্টি, জলোচ্ছাস ইত্যাদির জন্য আমাদের কৃষিপণ্য ও ফসলাদি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে জলবায়ুর পরিবর্তন আবহাওয়া ও ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়া অস্বাভাবিক রূপ নেয়। অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল, অতিখড়া এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি ইত্যাদির কারণে কৃষি ফসলের অনেক ক্ষতি সাধিত হয় এবং কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

বছরে শতকরা প্রায় ১০-২০ ভাগ ফসল বন্যা, খরা, ঝড়-বৃষ্টি, সাইক্লোন, জলোচ্ছাস ইত্যাদি কারণে নষ্ট হয়ে যায়। বীমা সুবিধার অভাবে কৃষকেরা উন্নত ও ভাল বীজ, সার ও কৃষি যন্ত্রপাতিতে নিজস্ব বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। তাই এক্ষেত্রে কৃষি বীমার মাধ্যমে তাদের বিনিয়োগ নিশ্চয়তা আবশ্যক।

কৃষি বীমার সম্ভাবনার ক্ষেত্রে তিনি বলেন বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষি বীমা সার্বজনীন হলে কৃষকরা জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক কারণে যে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন, বীমা হতে প্রাপ্ত সুবিধার মাধ্যমে তা পুষিয়ে নিতে পারবেন। তাছাড়া বীমার টাকা দিয়ে তারা নতুন ফসল আবাদ করতে পারবেন। আমাদের পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে বহু বছর ধরে কৃষি বীমা সফলভাবে চালু রয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ কোটি কৃষক এ বীমার আওতায় এসেছে। প্রতিবছর সেখানে প্রায় ৫-৬ কোটি কৃষক কৃষি বীমার অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৭ কোটি মানুষের এ দেশে অধিকাংশ মানুষই গ্রামীণ জনপদে বসবাস করেন এবং তাদের উপার্জনের একমাত্র পথ কৃষিকাজের মাধ্যমে শস্য ফলানো। তাই এ দেশে কৃষি বীমার প্রচুর সম্ভবনা রয়েছে। প্রথমে গ্রুপভিত্তিক বা এলাকাভিত্তিক কৃষকদের জীবনমান বিবেচনা করে বীমা সুবিধার আওতায় এনে কৃষি বীমা চালু করা যেতে পারে। এছাড়া আমাদের কৃষকদের যদি চাহিদামত এবং তাদের ক্ষতির দিক বিবেচনা করে যুগোপযোগি বীমা পরিকল্প তথা স্বল্প প্রিমিয়ামে অধিক সুবিধা সম্বলিত বীমা পরিকল্প প্রণয়ন করতে পারি তাহলে সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় এদেশে কৃষি বীমা কৃষিবিপ্লব ঘটাতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।

কৃষি বীমার ক্ষেত্রে তিনি কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরে বলেন, আমাদের কৃষকরা স্বল্প শিক্ষিত, তাদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। তাদের বীমা বিষয়ে বাস্তব জ্ঞান দান এবং বীমার সুবিধা সম্পর্কে বিশদভাবে অবগত করে এ বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে হবে এবং এ বিষয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় ব্যাপকহারে প্রচারণার ব্যবস্থা করা দরকার। তিনি আরো বলেন, আমাদের কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পান না, তাই তারা বীমা সুবিধা প্রাপ্তির জন্য বাড়তি খরচ করতে চাইবেন কি না সেটিও একটি প্রশ্ন। তবে এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রণোদনা ও ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে কৃষি বীমার প্রতি আকৃষ্ট করে তুলতে হবে। এছাড়া কৃষি বীমা সুবিধা প্রদানের জন্য দেশব্যাপী সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যে অবকাঠামো প্রয়োজন তা এখনো গড়ে উঠেনি। এক্ষেত্র সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে অবকাঠামো সৃষ্টির জন্য সম্মিলিতভাবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৮:৪০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৬ এপ্রিল ২০২২

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।