বিবিএনিউজ.নেট | সোমবার, ০৯ নভেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট | 510 বার পঠিত
মুসলিম মিল্লাতের অমর কবি, রেনেসাঁর মহান কবি ও বিশ্ব মানবতার কবি আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল ৷ ‘সারে জহাঁ সে আচ্ছা…’ কবিতার রচয়িতা ইকবাল ৷
আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল ১৮৭৭ সালের ৯ নভেম্বর অবিভক্ত পাঞ্জাবের শিয়ালকোটে জন্মগ্রহণ করেন ৷ তিনি ছিলেন অখন্ড ভারতবর্ষের মুসলিম কবি, দার্শনিক এবং রাজনীতিবিদ ৷ তাঁর ফার্সি ও উর্দু কবিতা আধুনিক যুগের ফার্সি ও উর্দু সাহিত্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইকবাল তাঁর ধর্মীয় ও ইসলামের রাজনৈতিক দর্শনের জন্যও বিশেষভাবে সমাদৃত ছিলেন। তাঁর একটি বিখ্যাত চিন্তা দর্শন হচ্ছে ভারতের মুসলমানদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন। এই চিন্তাই বর্তমান পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে। তাঁর নাম মুহাম্মদ ইকবাল হলেও তিনি আল্লামা ইকবাল হিসেবেই অধিক পরিচিত। আল্লামা শব্দের অর্থ হচ্ছে শিক্ষাবিদ । তাঁর ফার্সি সৃজনশীলতার জন্য ইরানেও তিনি ছিলেন সমধিক প্রসিদ্ধ ৷ তিনি ইরানে ইকবাল-ই-লাহোরী নামে পরিচিত।
ড. মুহাম্মদ ইকবাল ছিলেন সুন্নি মুসলমান। তাঁর ভাবগুরু ছিলেন- রুমি , গ্যেটে , টমাস ওয়াকার আর্নল্ড ৷ তাঁর ভাবশিষ্য হলেন- পাকিস্তান আন্দোলন , ড.আলি শরিয়তি , তারিক রমাদান ৷
ইকবালের পিতামহ শেখ রফিক কাশ্মীর থেকে শিয়ালকোটে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। শেখ রফিক কাশ্মিরী শাল তৈরি এবং ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। তাঁর দু’জন পুত্র ছিলেন শেখ গোলাম কাদির এবং শেখ নুর মোহাম্মদ। শেখ নুর মোহাম্মদ ছিলেন ইকবালের পিতা। তিনি ছিলেন শিয়ালকোটের নামকরা দর্জি। শেখ নুর মোহাম্মদ কেবল পেশাগত দিক দিয়ে নয়, চিন্তাধারা এবং জীবন যাপনে ছিলেন ইসলামের প্রতি অত্যন্ত নিবেদিত-প্রাণ। সুফি সঙ্গীদের কাছে তাঁর প্রচণ্ড সম্মান ছিল। তাঁর স্ত্রী, মোহাম্মদ ইকবালের মা ইমাম বিবিও ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক মহিলা ৷
শিয়ালকোটের স্কটিশ মিশন কলেজে পড়াশোনা করেন ইকবাল ৷ ১৮৮৫ সালে লাহোরের সরকারি কলেজে ভর্তি হন ৷ দর্শন , ইংরেজি ও আরবি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং স্বর্ণপদক সহ স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন ৷ ১৮৯৯ সালে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন ৷ ইকবাল তাঁর কাব্য প্রতিভার স্বীকৃতি পান তাঁর শিক্ষক সাইয়িদ মীর হাসানের কাছ থেকে ৷ এই সময় ইকবাল স্যার টমাস অর্নল্ড-এর সংস্পর্শে আসেন ৷ ১৯০৫ সালে লন্ডনে যান আইন পড়তে ৷ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লিঙ্কনস্ ইন থেকে আইনের ডিগ্রী লাভ করেন ৷ জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন ৷ ১৯০৮ সালে দেশে ফিরে আসেন এবং আইন ব্যবসা , শিক্ষাদান ও সাহিত্য চর্চা শুরু করেন ৷ ‘আসরার-ই-খোদায়ী’ পুস্তকের জন্য ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করে ৷
ইকবালের ১৮৯২ সালে গুজরাটি চিকিৎসকের মেয়ে করিম বিবির সাথে বিয়ে হয় ৷ ১৯১৬ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয় ৷ তাদের তিনটি সন্তান হয় ৷ ১৯০৬ সালে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হবার পরপরই ইকবাল তাতে যোগ দেন ৷ ইকবাল অমর হয়ে আছেন তাঁর কবিতা ও রচনার জন্য ৷ এর মধ্য- আসরার ই খুদি, শিকওয়া ও জবাবে শিকওয়া, দ্য রিকনস্ট্রাকশন অফ রিলিজিয়াস থট ইন ইসলাম, আল ই জিবরাইল, জাভেদ নামা ইত্যাদি অত্যন্ত গভীর দার্শনিক ভাব সমৃদ্ধ রচনা ইকবালের লেখনীতে যে ইসলামী পুনর্জাগরণের আওয়াজ উঠেছিল তা সমসাময়িক অনেক ব্যক্তি ও আন্দোলনকে সাংঘাতিকভাবে প্রভাবিত করেছে ৷ ইকবালের দর্শনে প্রভাবিত হয়েছিলেন মহম্মদ আলি জিন্নাহ ৷ মাত্র ষাট বছর বয়সে মহান কবি ইকবালের মৃত্যু হয় ১৯৩৮ সালের ২১ এপ্রিল ৷
Posted ১:১৫ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৯ নভেম্বর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed