বিবিএনিউজ.নেট | বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০২০ | প্রিন্ট | 985 বার পঠিত
নিয়মিত কর্মচারীদের শ্রমে ঊর্ধ্বমুখী ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সূচক। এরপরও ন্যায্য পাওনা থেকে তারাই বঞ্চিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ফলে অহরহই ঘটছে শ্রম আইন লঙ্ঘনের ঘটনা। সাধারণ বীমা প্রতিষ্ঠান কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে এএই অভিযোগ পাওয়া গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে।
সূত্র জানায়, দু’একজন ছাড়া প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ কর্মচারীর যোগ্যতানুযায়ী প্রাপ্য সম্মানী দিচ্ছে না কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স। বার্ষিক বোনাসসহ ইনক্রিমেন্টও আটকে আছে বহুদিন থেকে। এরপরও প্রতি মাসেই বিলম্ব করছে সম্মানী-ভাতা প্রদানে। এমনকি শ্রম আইন লঙ্ঘন করে কোম্পানির মুনাফায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণ ও ভবিষ্যৎ তহবিলেও নিয়মিত অর্থপ্রদান থেকে বিরত রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানির ২০১৯ সালের আর্থিক প্রতিবেদনেও বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে বলে জানায় ওই সূত্রটি।
এদিকে আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, পৃষ্ঠা ৭০-এর প্রোফিট অ্যান্ড লস ইনকাম এবং পৃষ্ঠা ৮৭-এর নোট: ২.১৫ থেকে এ আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি উল্লেখ করা আছে। পৃষ্ঠা ৭০-এ দেখা যায়, ওয়ার্কার্স প্রোফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) উল্লেখ থাকলেও তাতে বিগত বছরে কোনো অর্থ সঞ্চিত হয়নি। এছাড়া পৃষ্ঠ ৮৭-এর উল্লিখিত নোটে দেখা যায়, কোম্পানি প্রভিডেন্ট ফান্ড, ডব্লিউপিপিএফ, গ্র্যাচুইটি প্রদান সংক্রান্ত নিয়মাবলী পরিপালন করছে বলে ঘোষণা দিয়েছে। অথচ গ্র্যাচইটির জন্য এখন পর্যন্ত কোনো ফান্ড গঠন করেনি। অবশ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে নিবন্ধন পেতে কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের নগদে এ তহবিলের টাকা প্রদান করছে এবং প্রোফিট ও লস অ্যাকাউন্টে এ টাকা প্রদর্শন করছে।
মূলত নিট প্রোফিটের ৫ শতাংশ টাকা এ ফান্ডে রাখার বিধান রয়েছে। কিন্তু তা সঠিকভাবে পরিপালন করেনি প্রতিষ্ঠানটি। পৃষ্ঠা ২৩-এর ফিন্যান্সিয়াল হাইলাইট্সের ক্রমিক-১৫, ২০১৯ সালে নিট প্রোফিট ৩ লাখ ৯৯ লাখ ২১ হাজার ৫৭৩ টাকা দেখানো হয়। এ নিট প্রোফিটের বিপরীতে ডব্লিউপিপিএফ বাবদ ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ৭৮ টাকা রাখা অত্যাবশ্যক।
দেশের বীমা খাতে ২০০০ সাল থেকে কার্যক্রম চালাচ্ছে কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স। অন্যদিকে শ্রম আইন পাস হয় ২০০৬ সালে। অর্থাৎ কোম্পানি প্রতিষ্ঠার ৬ বছর পর আইনটি পাস হয়। ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে ১৩ বছর। অথচ আইনটি পাসের এক মাসের মধ্যে এটি পালনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ দীর্ঘসময়ের মধ্যেও পরিপালন না করা আইন অবজ্ঞার শামিল।
শ্রম আইনের এ লঙ্ঘনের ফলে ধারা-২৩৬ অনুযায়ী, কোম্পানির প্রত্যেক পরিচালক, উহার ব্যবস্থাপক বা ব্যবস্থাপনার কাজের সাথে জড়িত যে কেউ অথবা ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বা সদস্য, ব্যবস্থাপনার নিয়োজিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে অনধিক ১ লাখ টাকা এবং ব্যর্থতার প্রথম তারিখের পর হইতে প্রতিদিনের জন্য ৫ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করে ৩০ দিনের মধ্যে জরিমানা পরিশোধের জন্য সরকার নির্দেশ প্রদান করতে পারে। পুনরায় কোনোরূপ আইনের বিধান অথবা সরকারের আদেশ পালনে ব্যর্থ হলে তাহার বিরুদ্ধে দ্বিগুণ জরিমানা আরোপিত হবে।
এ হিসেবে ফান্ড ও ট্রাস্টি বোর্ড গঠন না করায় ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট ১৩ বছরে এককালীন ১ লাখসহ ও প্রতিদিনের জন্য ৫ হাজার টাকা হিসেবে এ পর্যন্ত কোম্পানির জরিমানার পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ৩৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
এছাড়াও কোম্পানির বিরুদ্ধে বাকি ব্যবসা ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়সহ বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব বিষয়ে কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাজিরুল ইসলামের কাছে জানতে ফোন করলে তিনি সরাসরি এ প্রতিবেদকে সাক্ষাৎ করতে বলেন। পরবর্তীতে বক্তব্য নিতে তার অফিসে গেলে কোম্পানি চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া বক্তব্য প্রদানে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন।
Posted ২:৩৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed