শনিবার ৪ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিঙ্গেল ডিজিটের আড়ালে ৪৪ রকম চার্জের কবলে ব্যাংকঋণ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   356 বার পঠিত

সিঙ্গেল ডিজিটের আড়ালে ৪৪ রকম চার্জের কবলে ব্যাংকঋণ

কাগজ-কলমে ব্যাংকঋণে সিঙ্গেল ডিজিট। সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়নে প্রজ্ঞাপন জারির পর লম্বা হয়েছে চার্জ বা কমিশনের তালিকা। এতে অন্তত ৪৪ রকম চার্জের কবলে রয়েছে ব্যাংকঋণ। কোনো চার্জ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আবার অনেক চার্জ দৃশ্যমান নয়। এসব খরচ সাধারণ গ্রাহকের নজরে সবসময় পড়ে না। এ জন্য সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়নে ব্যাংকের মুনাফার কমতি নেই বলে মনে করেন অনেকে।

সূত্র মতে, ঋণের সুদহার কমালেও সার্ভিস চার্জ ডাবল করে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। এতে ক্ষেত্রবিশেষে সুদের হার ১৭-১৮ শতাংশ হয়ে যাচ্ছে। জানতে চাইলে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সুদের হার নিয়ে শুভঙ্করের ফাঁকি চলছে। বর্তমানে ঋণের সুদ কাগজ-কলমে ৯ শতাংশ।

কিন্তু বাস্তবে ১২-১৮ শতাংশ পড়ছে (প্রণোদনা ঋণ এ হিসাবের বাইরে)। কারণ এখন সার্ভিস চার্জ ডাবল করে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, পার এলসিতে আগে ২০ পয়সা কমিশন কাটলে এখন কাটে ৪০ পয়সা। আর আগে ৪০ পয়সা কাটলে এখন ৮০ পয়সা কাটছে। এতে আমাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সে হিসাবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঋণের সুদ আগের চেয়ে বেড়ে যাচ্ছে।

মোহাম্মদ হাতেম আরো বলেন, ক্রেডিট কার্ডে আড়াই লাখ টাকার ঋণ নিয়েছি। তাতে সার্ভিস চার্জ কাটা হয়েছে সাড়ে ১৭ হাজার টাকা। তিনি বলেন, এবার বাকিটা বুঝে নেন বাস্তবে সুদের হার কত?
বৈদেশিক বাণিজ্য (আমদানি) লেনদেনের ওপর ১৫ ধরনের কমিশন বা চার্জ আদায় করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- এলসি ওপেনিং কমিশন। এখানে আবার অনেক প্রকার-শতভাগ এফডিআর (স্থায়ী আমানত) রেখে সাইট এলসি খোলার জন্য দিতে হয় শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ কমিশন।

ব্যাক-টু-ব্যাক, এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) এবং বিভিন্ন অনুদান তহবিল থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রেও একই কমিশন দিতে হয় গ্রাহককে। তবে ডেফার্ড (বকেয়া) এলসির জন্য এ কমিশন আরো বেশি (শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ)।

এলসির সময় এবং পরিমাণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গ্রাহককে গুনতে হয় অতিরিক্ত কমিশন। বিদেশি এলসি হলে প্রতিবারে ৭৫০ টাকা এবং লোকাল হলে দিতে হয় ৩০০ টাকা। অ্যাড কনফার্মেশন চার্জ শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ।

এছাড়া সুইফট চার্জ অব এলসি ট্রানজেকশনের মধ্যে রয়েছে- প্রি-অ্যাডভাইস বিদেশি এলসির জন্য কমপক্ষে এক হাজার এবং লোকাল এলসিতে ৫০০ টাকা কমিশন দিতে হয়। এসব ঋণ পরিচালনার জন্য আবার আলাদাভাবে কমিশন দিতে হয় গ্রাহককে।

লোকাল এলসির জন্য যার সর্বনিম্ন অঙ্ক এক হাজার টাকা, সার্কভুক্ত দেশগুলোর জন্য কমপক্ষে দুই হাজার টাকা এবং সার্কভুক্ত দেশের বাইরের দেশগুলোর জন্য কমপক্ষে তিন হাজার টাকা। এলসি অ্যাডভাইসিং ফি ৭৫০ টাকা। একসেপ্টেন্স কমিশন শূন্য দশমিক ১০ থেকে শুরু করে শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ পর্যন্ত নেয়া হয়। লোকাল এলসিতে ডিসক্রিপ্যান্সি (অমিল) চার্জ ২৫ মার্কিন ডলার এবং বিদেশি এলসির জন্য ৮০ মার্কিন ডলার। লোকাল এলসির পেমেন্ট চার্জ বিলপ্রতি ৩০০ টাকা এবং বিদেশি এলসির জন্য ২০ মার্কিন ডলার।

অরিজিনাল ডকুমেন্টের অনুপস্থিতিতে জাহাজিকৃত পণ্য খালাসের জন্য প্রতি ডকুমেন্টে এক হাজার টাকা। নো-অবজেকশন সার্টিফিকেটের (এনওসি) জন্য ৫০০ টাকা। স্টেশনারি খরচ ৩০০ টাকা, আইআরসি নবায়নের সার্ভিস চার্জ ৫০০ টাকা। একই চিত্র রফতানি বাণিজ্যেও। এখানে ১৪ ধরনের চার্জ বা কমিশন কাটা হয়।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রফতানি বাণিজ্যে ৭৫০ টাকায় এলসি অ্যাডভাইজিং কমিশন। এলসি ট্রান্সফার বা স্থানান্তরের জন্য ৭৫০ টাকা। রফতানির জন্য ব্যাংকের গ্যারান্টি অ্যাড কনফার্মেশন কমিশন শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ। পণ্য রফতানির জন্য দু’পক্ষের চুক্তি বা নেগোসিয়েশন হিসেবে শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ কমিশন দিতে হয়।

রফতানি চুক্তির ভিত্তিতে এক্সপোর্ট বিল কালেকশনের জন্য গুনতে হয় আরো শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ। ডকুমেন্ট কুরিয়ার করে পাঠানোর জন্য এশিয়ার মধ্যবর্তী দেশগুলোতে ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং এশিয়ার বাইরের দেশগুলোর জন্য ডকুমেন্ট প্রতি ৩ হাজার টাকা গুনতে হয় রফতানিকারককে। তবে নিবন্ধিত এয়ার মেইলের মাধ্যমে পাঠালে এ খরচ হয় ডকুমেন্ট প্রতি কমপক্ষে ৫০০ টাকা। বিল প্রতি বায়িং হাউস কমিশন ১ হাজার টাকা। ইএক্সপি ফরমের জন্য স্টেশনারি খরচ ১০০ টাকা।

সিঅ্যান্ডএফ, এফসিআর, মানি এক্সচেঞ্জ এবং বায়িং হাউসের জন্য প্রসেসিং ফি প্রথমবারের জন্য ৫ হাজার এবং নবায়নের জন্য ৩ হাজার টাকা। এফসি অ্যাকাউন্ট মেইনটেইনের জন্য প্রতি বছর দুই মার্কিন ডলার এবং পিআরসি ইস্যুর জন্য প্রতিবারই ৫০০ টাকা গুনতে হয় রফতানিকারককে। এর বাইরে সবচেয়ে বেশি সুদ নেয়া হয় ক্রেডিট কার্ড ঋণে।

এক্ষেত্রে সর্বনি¤œ ১৪ থেকে সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ সুদ নেয় ব্যাংকগুলো। এসব সুদহার আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফি ও চার্জ। ঋণ পেতে হলে ব্যাংক প্রসেসিং ফি দেয়া লাগে। ব্যাংকভেদে এ হার ১ থেকে ২ শতাংশ। ঋণ নিতে গেলে অবশ্যই মর্টগেজ রাখতে হয়। মর্টগেজ তৈরির ফি ২ শতাংশের কম নয়। ১ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত মর্টগেজ প্রস্তুত করতে ২ হাজার টাকা ফি লাগে। ২০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকার মর্টগেজ প্রস্তুতিতে ফি লাগে ৫ হাজার টাকা। এর চেয়ে বেশি অঙ্কের মর্টগেজ করতে ৫ হাজার এবং প্রতি লাখে ২ শতাংশ হারে ফি দিতে হয়।

এর বাইরে রয়েছে সরকারি বিভিন্ন স্ট্যাম্পের নির্ধারিত মূল্য। ঋণ নিতে হলে গ্রাহককে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সিআইবি ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়। এজন্য নির্ধারিত ফি ২০০ টাকা। ঋণের জন্য ব্যাংকে সুনির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্র জমা রাখতে হয়। এজন্য ব্যাংকে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা ফি দেয়া লাগে। কোনো কোনো ব্যাংক এজেন্ট কমিশনও আদায় করে ২ থেকে ৩ শতাংশ। ব্যাংকের জামানতের নিরাপত্তার জন্য দিতে হয় ১ থেকে ২ শতাংশ কমিশন। ঋণের অঙ্ক যত বেশি, কমিশনের অঙ্কও তত বেশি। অবশিষ্ট অংশের ওপর ২ শতাংশ হারে সুদ পরিশোধ করতে হয়।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।