
নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫ | প্রিন্ট | 64 বার পঠিত
বীমা খাতের জন্য কর নির্ধারণ পদ্ধতির পরিবর্তন, কর্পোরেট কর কমানোসহ বেশ কিছু বীমা পণ্যের প্রিমিয়াম থেকে কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে দেশের বীমা কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)। সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খানের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সংগঠনটির প্রতিনিধিরা এ আহ্বান জানান।
বিআইএ’র প্রেসিডেন্ট সাঈদ আহমেদের নেতৃত্বে ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী সাখাওয়াত হোসেন লিন্টু, নির্বাহী সদস্য বেলাল আহমেদ, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন, বিআইএ’র নির্বাহী সদস্য এস এম নুরুজ্জামান ও ড. একেএম সারোয়ার জাহান জামিল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এসময় বীমা শিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে বিআইএ’র পক্ষ থেকে এনবিআর চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত আকারে ১৫টি প্রস্তাব তুলে ধরেন তারা।
বিআইএ’র পক্ষ থেকে কর্পোরেট কর হার হ্রাস করা, কৃষি বীমা, গবাদিপশু বীমা, বিভিন্ন ধরনের শস্য বীমা, উদ্ভাবনী বীমা, নতুন সামাজিক বীমা পণ্যসহ অনলাইনভিত্তিক বীমা পণ্যের প্রিমিয়ামের উপর মূল্য সংযোজন কর ও কর্পোরেট কর রহিত করার প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
কর্পোরেট কর হার হ্রাস করার বিষয়ে বলা হয়, আয়কর আইন অনুযায়ী তালিকাভুক্ত ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ। ব্যাংকের আয় ও ব্যবসায়ের পরিধি ইন্স্যুরেন্সের চাইতে অনেক বেশি তারপরও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর হার ব্যাংকের সমান। এছাড়া, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো ২৫ শতাংশ অথবা তার চেয়ে কম হারে কর প্রদান করে থাকে যদিও তাদের ব্যবসায়ের ক্ষেত্র ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চাইতে বেশি। কিন্তু ইন্স্যুরেন্স ব্যবসা ব্যাংক এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মত ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করতে পারেনি। তাই ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোকে অন্যান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের মত বিবেচনা করে কর্পোরেট কর হার ব্যাংকিং কোম্পানির মত সমান না রেখে অন্যান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের মত কর হার নির্ধারণ করার জন্য প্রস্তাব করা হয়।
কৃষি বীমা, গবাদিপশু বীমা, বিভিন্ন ধরনের শস্য বীমা প্রিমিয়ামের উপর মূল্য সংযোজন কর ও কর্পোরেট কর রহিত করার বিষয়ে বিআইএ’র প্রস্তাবে বলা হয়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি খাতের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই খাত ক্রমাগত বিপন্ন হচ্ছে যার ফলে কৃষিকাজে কৃষকদের অনীহা দিন দিন বাড়ছে। তাই কৃষকদের জন্য কৃষি বীমা অপরিহার্য। এই জন্য কৃষি বীমার উন্নয়ন ও প্রসারের জন্য কৃষি বীমা, গবাদিপশু বীমা, বিভিন্ন ধরনের শস্য বীমা প্রিমিয়ামের উপর মূল্য সংযোজন কর এবং এই বীমা পরিকল্প হতে অর্জিত মুনাফার উপর কর্পোরেট কর রহিত করার জন্য প্রস্তাব করা হলো।
এছাড়া, অনলাইন ভিত্তিক বীমা প্রিমিয়ামের উপর মূল্য সংযোজন কর ও কর্পোরেট কর রহিত করার বিষয়ে বলা হয়, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে বীমা শিল্পও সরকারের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বিভিন্ন অনলাইন পলিসি ইস্যু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যা গ্রাহকদেরকে সর্বোচ্চ বীমা সেবা প্রদানের পথকে সুগম করবে। ডিজিটাল সেবা এবং ইন্স্যুরটেকের মাধ্যমে ইস্যু করা বীমা পলিসি হতে অর্জিত প্রিমিয়ামের উপর মূল্য সংযোজন কর এবং পলিসি প্রিমিয়াম হতে অর্জিত মুনাফার কর্পোরেট কর রহিত করার প্রস্তাব করা হলো।
বিআইএ’র প্রস্তাবে উদ্ভাবনী বীমা ও নতুন সামাজিক বীমা পণ্যের উপর মূল্য সংযোজন কর এবং কর্পোরেট কর রহিত করার বিষয়ে বলা হয়, উদ্ভাবনী বীমা ও নতুন সামাজিক বীমা পরিকল্প অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের জীবন যাত্রার মানের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। যে দেশ অথনৈতিকভাবে যত উন্নত তাদের জীবনযাত্রার মানও তত উন্নত আর এই উন্নয়নে বীমার অবদান অনেক বেশি। আর একটি দেশের সামাজিক মূল্যবোধ এবং সচেতনতার অভাবই এই শিল্পের বিকাশে মূল বাধা। তাই বীমা শিল্পের বিকাশে উদ্ভাবনী বীমা ও নতুন সামাজিক বীমা পণ্যের উপর উপর মূল্য সংযোজন কর এবং কর্পোরেট কর রহিত করার প্রস্তাব করা হয়।
এছাড়াও, নন-লাইফ বীমার অন্তর্ভুক্ত সকল শ্রেণির নৌ-কার্গো, নৌ-হাল, বিবিধ বীমাসহ বীমা সেবার বিপরীতে পুনঃবীমাকারীকে সকল প্রিমিয়ামের উপর মুসক চার্জ অব্যাহতি, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়কে আয় হিসাবে গণ্য না করে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাক্ট অনুসারে লভ্যাংশের উপর কর নির্ধারণ করা, পুনঃবীমা করার সময় পুনঃবীমা প্রিমিয়ামের উপর প্রাপ্য কমিশনের উপর নতুন করে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ রহিত, বৈদেশিক পুনঃবীমা প্রিমিয়ামের উপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট ও ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর রহিত, স্বাস্থ্য বীমার প্রসারে এর ওপর ট্যাক্স রহিত ও বীমা এজেন্টদের কমিশন আয়ের উপর উৎসে কর কর্তন থেকে অব্যাহতি প্রদানে প্রস্তাব করে বিআইএ।
বিআইএ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় বীমা খাতে সুশাসনের ঘাটতি নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, বীমা খাতে সুনামের অভাব রয়েছে। এ খাতে গভর্ন্যান্স বা সুশাসনের ‘জি’-ও নেই।
এনবিআর চেয়ারম্যান বীমা খাতে অব্যবস্থাপনার উদাহরণ দিয়ে বলেন, অনেক বছর আগে আমার কাছে একজন সাংবাদিক আসলেন। তিনি জানালেন, বীমা কোম্পানির এক কর্মকর্তা বাসায় থাকতে পারছেন না। গ্রাহকের পলিসি মেয়াদপূর্তি হওয়ার পরও কোম্পানি টাকা দিচ্ছে না। এই হলো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অবস্থা। এটাই সত্য। উন্নয়ন সহযোগীরা দেশের বীমাকে প্রমোট করতে বলছে। কিন্তু এসব কারণে এটা আগায় না।
উন্নত দেশের মতো বীমা কোম্পানিগুলো হেলথ কার্ডের প্রচলন করতে না পারার সমালোচনা করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, হেলথ ইন্স্যুরেন্স ভালোভাবে দিতে পারলে বাংলাদেশের মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়বে।
Posted ৮:৪৭ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
bankbimaarthonity.com | rina sristy