বিবিএনিউজ.নেট | মঙ্গলবার, ০৩ মার্চ ২০২০ | প্রিন্ট | 766 বার পঠিত
ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকরে আমানতের সুদহার কমাতে শুরু করেছে ব্যাংকগুলো। সরকারি ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি এখন বেসরকারি খাতের ব্যাংকও আমানতের সুদহার কমিয়ে আনছে। এরই মধ্যে সরকারি-বেসরকারি ২৫টি ব্যাংক সব ধরনের আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। অন্য ব্যাংকগুলোও আমানতের সুদহার ধাপে ধাপে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছে। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে বেসরকারি খাতের প্রায় সব ব্যাংক তার আগের মাসের চেয়ে কম সুদে আমানত সংগ্রহ করেছে।
আগামী ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকর হবে। এ বিষয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সার্কুলার জারি করা হয়েছে। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে বৈঠকে ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড বাদে সব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকর করার সিদ্ধান্ত হয়।
এ ছাড়া ওই বৈঠকে সব ধরনের আমানতের সর্বোচ্চ সুদের হার ৬ শতাংশ হবে বলেও জানানো হয়েছিল। আমানতের সুদহার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সার্কুলার জারি করা না হলেও গত ২৮ জানুয়ারি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির এক বৈঠকে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ব্যক্তি আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ কার্যকর করার ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই ঘোষণার পর বেসরকারি অনেক ব্যাংকই ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের আমানতের সুদহার কমিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ১ এপ্রিল থেকে নতুন সুদহার কার্যকর হবে। তবে ওই সার্কুলারে আমানতের সুদহারের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি।
সূত্র জানিয়েছে, ব্যক্তি আমানতের সুদহার বেঁধে দেওয়ার পক্ষে নয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ ব্যক্তি আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ বেঁধে দেওয়া হলে আমানতকারীরা ব্যাংকবিমুখ হয়ে পড়তে পারে। আবার দুর্বল ভিত্তির ব্যাংকগুলোর নতুন আমানত পাওয়া ও বিদ্যমান আমানত ধরে রাখা কঠিন হবে। কারণ তখন নতুন-পুরনো সব আমানতকারীই শক্তিশালী ভিত্তির ব্যাংকেই টাকা রাখতে বেশি আগ্রহী হবে। ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সার্বিক ব্যাংকিং খাতের ওপর। এই বিবেচনায় ব্যক্তি আমানতের সুদহার বেঁধে দেবে না বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের ৬০টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে ২৫টি ব্যাংক ব্যক্তি আমানতকারীদের থেকে যেকোনো মেয়াদের আমানত সংগ্রহে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদ দিয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি, বিশেষায়িত একটি, বিদেশি একটি ও বেসরকারি ১৭টি ব্যাংক। বাকি ৩৩টি ব্যাংকও আমানতকারীদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহের সুদহার আগের মাসের চেয়ে কমিয়ে এনেছে। ৬ শতাংশ সুুদহার কার্যকর করা বেসরকারি ব্যাংকগুলো হলো আল-আরাফাহ্, ব্যাংক এশিয়া, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংক।
অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক অব বাংলাদেশ, ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, আইএফআইসি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংক। এ ছাড়া বিদেশি খাতের আল ফালাহ ও কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন।
এবিবির চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার অবশ্য বলেছেন, ‘আমরা ধাপে ধাপে ব্যক্তি আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে চাচ্ছি। তবে সব ব্যাংক ৬ শতাংশে নামাবে কি না সেই নিশ্চয়তা এবিবি দিতে পারে না। কারণ এবিবি কোনো রেগুলেটর না। তাই কাউকে বাধ্য করার ক্ষমতাও এবিবির নেই।’
এর আগে ২০ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা এবং এর সর্বোচ্চ সুদের হার ৬ শতাংশ বেঁধে দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই আদেশ পরিপালনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
Posted ১:৩৬ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৩ মার্চ ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed