বিশেষ প্রতিবেদক: | বৃহস্পতিবার, ০৫ নভেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট | 1111 বার পঠিত
নিয়মিত আইন লঙ্ঘন একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সাধারণ বীমা প্রতিষ্ঠান কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সে। বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার আইন ভঙ্গ করে অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ ও বাকিতে ব্যবসা পরিচালনা, শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোম্পানির কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত করাসহ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ক্রমাগত আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগ রয়েছে। নতুন করে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আইন ভেঙে কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক না রাখার বিষয়টি উঠে এসেছে। একাধিকবার এমন ঘটনা সংঘটিত হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা। প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত একাধিক সূত্রে এমনটাই জানা গেছে।
সূত্রগুলো জানায়, ইতোপূর্বে কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সে নিয়ম ভেঙে অতিরিক্ত ব্যয়ের নামে টাকা আত্মসাৎ ও বাকিতে ব্যবসা করা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এরপর শ্রম আইন ২০০৬-কে তোয়াক্কা না করে কোম্পানির কর্মচারীদের গ্রাচুইটি ফান্ডে অর্থ প্রদান করে তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, যা নিয়ে অতি সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এরপরও কোম্পানিতে আইন লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়নি। এবার নিয়মানুযায়ী স্বতন্ত্র পরিচালক না রেখে বিএসইসির আইন ভঙ্গ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এতো কিছুর পরও কোম্পানির পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে দুষছেন বিনিয়োগকারীরা। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে অর্থের লোভে ফেলে আইন ভাঙার এমন দুঃসাহস দেখাচ্ছে কোম্পানিটি, এমনটাই অভিমত তাদের।
প্রতিষ্ঠানসূত্রে জানা গেছে, কোম্পানির বোর্ড অব ডাইরেক্টরসে উদ্যোক্তা ও শেয়ারহোল্ডার পরিচালক রয়েছে ১৪ জন। বিএসইসির গত ৩ জুন ২০১৮-এর প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নীতিমালা প্রজ্ঞাপনের ১(২)(ধ) শর্তানুযায়ী স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা হবে এক-পঞ্চমাংশ বা পাঁচ ভাগের এক ভাগ এবং কোনো ভগ্নাংশ হলে তা পূর্ণ ধরে আরেকজন স্বতন্ত্র পরিচালক রাখতে হবে। অর্থাৎ প্রতি ৫ জনের মধ্যে একজন থাকবেন স্বতন্ত্র পরিচালক বা প্রতি চারজন উদ্যোক্তা-শেয়ারহোল্ডারের বিপরীতে একজন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকবেন। সে অনুযায়ী, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের ১৪ জন উদ্যোক্তা পরিচালকের জন্য চারজনের মধ্যে একজন হারে ১২ জনের জন্য ৩ জন স্বতন্ত্র পরিচালক ও অবশিষ্ট দু’জন উদ্যোক্তা-শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের জন্য আরো একজন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকতে হবে। অর্থাৎ মোট চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকতে হবে। অথচ প্রতিষ্ঠানটিতে মাত্র দু’জন স্বতন্ত্র পরিচালক রয়েছে। এক্ষেত্রে আরো দু’জন স্বতন্ত্র পরিচালক এখনো ঘাটতি আছে।
মূলত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে কোম্পানিতে করপোরেট গভর্ন্যান্স পরিপালন মনিটরিং করতেই স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে নিয়ম ভেঙে কোম্পানির কর্তাব্যক্তিদের পরিচিত স্বজনদেরই স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়মানুযায়ী স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যার হার মেনে চলছে না বলেও জানা গেছে। কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সেরর ক্ষেত্রেও এমনটাই দেখা গেছে। ফলে এ কোম্পানি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ যথাযথ বলেই মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
বিএসইসি প্রণীত ‘প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নীতিমালা’ নির্দেশনা লঙ্ঘনে দায়ী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ১ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে একটি আদেশ জারি করে কমিশন। ওই আদেশে করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড ভেঙে দায়ী প্রতিষ্ঠানকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবনমন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ আইন লঙ্ঘনের দায়ে কোম্পানিকে হল্ট বা ডি-লিস্টিং পর্যন্ত করারও সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স-১৯৬৯-এর ২সিসি’র অধীন হওয়ায় এ নির্দেশনা লঙ্ঘনে দায়ী ব্যক্তিকে দণ্ড হিসেবে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স-১৯৬৯ অনুযায়ী ন্যূনতম ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে প্রতিদিনের জন্য ওই ব্যক্তিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারে। এ বিষয়ে কোম্পানির বক্তব্য জানতে সিইও নাজিরুল ইসলামের সাথে ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন করা হলে তিনি জানান এ বিষয়গুলো চেয়ারম্যান সাহেব উত্তর দিতে পারবেন। তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যচ্ছে না। তবে এ বিষয়ে জানতে চেয়ারম্যানের নম্বরে কল দিলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
Posted ৫:২৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৫ নভেম্বর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed