বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

৬ প্রতিষ্ঠানের ৩৩৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বেকায়দায় সোনালী ব্যাংক

  |   মঙ্গলবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   2029 বার পঠিত

৬ প্রতিষ্ঠানের ৩৩৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বেকায়দায় সোনালী ব্যাংক

বড় শিল্প গ্রুপের কাছে ৫০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ নিয়ে বেকায়দায় রয়েছে সোনালী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ছয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে দেয়া ৩৩৩ কোটি টাকার ঋণ গত সাত বছরেও ফেরত পায়নি ব্যাংকটি। বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপের পরও টাকা উদ্ধার করতে না পেরে অবলোপন দেখানো হয়েছে এ ঋণ। ফলে চট্টগ্রামে একসময় শীর্ষে থাকা শাখাটির মুনাফায় ভাটা পড়েছে।

জানা গেছে, সোনালী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখায় এ পর্যন্ত ৪৩টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪৮৫ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ ৩৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাসমির ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের ১০৬ কোটি টাকা, মেসার্স ইমাম ট্রেডার্সের ৮১ কোটি, মেসার্স এ কে এন্টারপ্রাইজের ৪৬ কোটি, মেসার্স মহিউদ্দিন করপোরেশনের ৪২ কোটি, মেসার্স কামাল এন্টারপ্রাইজের সাড়ে ৩৩ কোটি ও মেসার্স ক্লিউস্টন ট্রেডিংয়ের ২৫ কোটি টাকা অবলোপন করা হয়েছে।

মেসার্স জাসমির ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড নুরজাহান গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। ২০১১ সালে সোনালী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা থেকে ভোজ্যতেল আমদানিতে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করে। কিন্তু দীর্ঘ নয় বছরেও ঋণের সেই টাকা আর ফেরত দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।

জানা গেছে, জাসমির ভেজিটেবলের নামে ২০১১ সালের শুরুর দিকে নেয়া ঋণটি ২০১২ সালের আগস্টে শ্রেণীকৃত হয়ে পড়ে। এরপর ঋণের টাকা উদ্ধারে ২০১৩ সালে এনআই অ্যাক্টে চেকের মামলা ও অর্থঋণ মামলা করা হয়। এমনকি টাকা সমন্বয় করতে প্রতিষ্ঠানটির বন্ধকি সম্পত্তিও নিলামে বিক্রির বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। কিন্তু কোনো প্রক্রিয়ায়ই টাকা উদ্ধার সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ ২০১৩ সালের শেষ দিকে প্রতিষ্ঠানটির ১০৬ কোটি টাকা অবলোপন করে ব্যাংকটি। সেই থেকে আর কোনো টাকা পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি।

নুরজাহান গ্রুপের কর্ণধার ও মেসার্স জাসমির ভেজিটেবল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারে অস্থিতিশীল দামের কারণে ২০১১ সালে ভোগ্যপণ্যে বড় লোকসান হয় আমদানিকারকদের। চট্টগ্রামের বেশির ভাগ ঋণ মন্দা হয় ওই সময়ে, যার বোঝা এখনো টানতে হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যাংকে খেলাপি হয়ে বহু প্রতিষ্ঠান এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। আমরা চেষ্টা করছি এসব ঋণ নিয়মিত করে পুরোদমে ব্যবসায় ফিরতে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় টিকে থাকতে ও ব্যাংকঋণ পরিশোধে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধাসহ বিভিন্ন ছাড় দিতে হবে।

চট্টগ্রামের অন্য খেলাপি প্রতিষ্ঠান ইমাম গ্রুপের মেসার্স ইমাম ট্রেডার্স সোনালী ব্যাংকের এ শাখা থেকে ঋণ নেয় ২০১০ সালের শেষ দিকে। টাকা পরিশোধ না করায় ২০১২ সালের মাঝামাঝি ঋণটি শ্রেণীকৃত হয়। এনআই অ্যাক্টে চেকের মামলা ও অর্থঋণ মামলা দায়েরের পরও টাকা উদ্ধার করতে পারেনি ব্যাংকটি। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির ৮০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা অবলোপন করে সোনালী ব্যাংক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, ইমাম গ্রুপের কাছ থেকে ঋণের টাকা উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ পণ্য আমদানির জন্য ঋণটি নেয়া হয়েছে সিসি প্লেজ, পিসি, এলসি ও এলটিআর ক্যাটাগরিতে। এ ঋণের বিপরীতে জমি বা ভবন কোনো সম্পত্তিই বন্ধক হিসেবে নেই। টাকা উদ্ধারের কোনো সুযোগ না থাকায় ঋণটি অবলোপন করতে হয়।

এমইবি গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মেসার্স এ কে এন্টারপ্রাইজ পণ্য আমদানিতে ২০১১ সালে ঋণ নেয় সোনালী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে। টাকা ফেরত না পেয়ে আইনি পদক্ষেপের পর সর্বশেষ ২০১৩ সালের শেষদিকে প্রতিষ্ঠানটির ৪৬ কোটি টাকা অবলোপন করে ব্যাংক। এ ঋণের বিপরীতে বন্ধকি রাখা সম্পত্তি খুবই নগণ্য। মাত্র দশমিক ৩৭ একর জমি বন্ধক রয়েছে এ ঋণের বিপরীতে যার বাজারমূল্য সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা।

এছাড়া শাখাটির বড় ঋণের মধ্যে মেসার্স কামাল এন্টারপ্রাইজের সাড়ে ৩৩ কোটি, মেসার্স ক্লিউস্টন ট্রেডিং লিমিটেডের প্রায় ২৫ কোটি ও মহিউদ্দিন করপোরেশনের ৪২ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। এ তিন প্রতিষ্ঠানও ২০১১ সালের বিভিন্ন সময়ে সোনালী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ঋণ সুবিধা নেয়। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো ঋণ আদায়ে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠান তিনটির কর্ণধারদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয় ব্যাংক। তাতেও টাকা আদায় না হওয়ায় ঋণগুলো পরে অবলোপন করে ব্যাংক। ঋণের বিপরীতে এসব প্রতিষ্ঠানের বন্ধক রাখা সম্পত্তির পরিমাণ খুবই কম।

সোনালী ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ও আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সোনালী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা একসময় চট্টগ্রামে মুনাফায় শীর্ষে ছিল। কিন্তু ছয়টি প্রতিষ্ঠানের কাছে আটকে থাকা বড় অংকের ঋণ সে গতি রোধ করে দিয়েছে। সব ধরনের আইনি পদক্ষেপ নিয়েও ঋণের টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনায় ঋণগুলো অবলোপন করা হয়েছে। এর পরও ঋণের টাকা উদ্ধারে আমরা চেষ্টা করছি।’

 

সূত্র : বণিক বার্তা।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।