এস জেড ইসলাম | বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট | 644 বার পঠিত
বিশ্বজুড়ে ভয়াল তান্ডব চালানো করোনা সংক্রমন পরিস্থিতির একটি ধাপ শেষ হতে না হতেই শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ধাপ। বিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেছেন, করোনার এ দ্বিতীয় ধাপ হবে প্রথমটির চেয়ে ভয়াবহ। ইতোমধ্যে তা টের পেতেও শুরু করেছে বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বের মানুষ। এ সময়ে যেখানে ‘স্টে হোম স্টে সেফ’ শ্লোগান থাকার কথা সেখানে যেন পরিবার-পরিজনসহ ভ্রমনের ঢেউ লেগেছে/গণবদলি জোয়ার বইছে রাষ্ট্রায়ত্ব চা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টি কোম্পানিতে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির এক অফিস আদেশে কোম্পানির ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তাৎক্ষনিক বদলির নির্দেশ দেয়া হয়। এমনটাই জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে।
সূত্রটি জানায়, গত ২১ ডিসেম্বর নির্দেশনা জারি করেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচএসএম জিয়াউল আহসান। বদলির নির্দেশ পাওয়া এসব কর্মকর্তা হলেন পাত্রখোলা বাগানের দলোই ভ্যালীর ডিজিএম সৈয়দ মাহমুদ হাসান, ম্যানেজার শফিকুর রহমান, সহকারী ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন, চণ্ডিছড়া টি স্টেটের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম ও সহ-ম্যানেজার এনএম শাহজাদা সোহাগ, কুরমা টি স্টেটের ম্যানেজার শফিকুর রহমান ও সহ-ম্যানেজার আকতার শহিদ, জগদিশপুর টি স্টেট ম্যানেজার বিদুৎ কুমার রায়, লাক্কাতুড়া টি স্টেট ম্যানেজার আশরাফুল মতিন চৌধুরী, মাধবপুর বাগান ম্যানেজার চৌধুরী মুরাদ আহমেদ, চাম্পারায় বাগান ম্যানেজার শামসুল ইসলাম, মদনমোহনপুর বাগান ম্যানেজার জাহাঙ্গির রশিদ ও তেলিয়াপাড়া বাগান ম্যানেজার কাজী মো. এমদাদুল হক। এদের মধ্যে ডিজিএম সৈয়দ মাহমুদ হাসান, ব্যবস্থাপক আশরাফ মতিন চৌধুরী ও কুরমা বাগানের ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমানকে অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি করে প্রধান কার্যালয়ে বদলি করা হয়েছে।
যে মুহুর্তে বিশ্বের সব মানুষ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে আতঙ্কিত সে মুহুর্তে এমন একটি সিদ্ধান্ত রীতিমত বিস্ময়ের। এমনিতেই মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত চলা লকডাউনে সবকিছু বন্ধ থাকলেও চা-বাগানগুলো বন্ধ রাখার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি সরকার। অনেক সরকারি কর্মকর্তা সে সময় বলেছিলেন, চা-বাগানের শ্রমিকরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠি হওয়ায় বা শহুরে মানুষের সাথে কম মেলামেশা থাকায় তাদের করোনা আক্রান্তের সম্ভাবনা কম। কিন্তু তাদের সে দাবী মিথ্যা প্রমাণ করে গত তিন মাসে অন্তত সাত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুইজন করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। এমন পরিস্থিতির পর যেখানে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিজ্ঞানীরা বলছেন করোনার ২য় প্রকোপ হবে ভয়াবহ তখন ন্যাশনাল টি কোম্পানির এমন সিদ্ধান্তে হতবাক হয়েছেন অনেকেই। কেননা, এই বদলি আদেশে সে সব কর্মকর্তা ও তাদের পরিবার নিজেদের পাশাপাশি অন্যদেরও ঝুঁকির মুখে ফেলবেন। তাছাড়া কোম্পানি চেয়ারম্যান স্বয়ং করোনা প্রকোপের ভয়াবহতায় গত পাঁচ মাস যাবত বাড়িতে অবস্থান করছেন। যাবতীয় অফিসিয়াল কার্যক্রম যেখানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে সেখানে এ ধরনের আদেশ কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেক কর্মকর্তা বদলি আদেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত পিছিয়ে দিতে দাবী জানান।
এ বিষয়ে কোম্পানি চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন জানান, করোনার বর্তমান অবস্থায় এ ধরণের সিদ্ধান্ত কিছুটা অসঙ্গত। হয়তো এমডি সাহেব বিষয়টি ভালো মনে করেই এমন আদেশ দিয়েছেন। তবে যাই হোক, এ নিয়ে আমি অন্যান্য পরিচালকদের সাথে কথা বলে বিষয়টি ক্লিয়ার করবো।
বিষয়টি নিয়ে এনটিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচএসএম জিয়াউল আহসানের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, বিগত ব্যবস্থাপনা পর্ষদের কিছু অনিয়মের কারনে কোম্পানি শুধু ২০১৯ সালেই ৩৭ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। বদলির আদেশ পাওয়া অনেকেই এ অনিয়মের সাথে জড়িত ছিলেন। তাই কোম্পানির উন্নয়নের স্বার্থে তাদের বদলি করার আদেশ দেয়া হয়েছে। করোনার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগেই কেন তাড়াহুড়ো করে এই আদেশ, এমন প্রশ্নে ইতস্তত করতে থাকেন তিনি।
Posted ৬:৪০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২০
bankbimaarthonity.com | motaleb hossen