নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট | 260 বার পঠিত
নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বীমা খাতের বহুল আলোচিত প্রতিষ্ঠান ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হেমায়েত উল্ল্যাহকে অপসারণ করেছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। সংস্থাটির পরিচালক শাহ আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ওই কোম্পানিতে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি মুখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত পরের পদের কর্মকর্তাকে সিইও’র চলতি দায়িত্ব প্রদান করে আগামী তিন মাসের মধ্যে সিইও নিয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অনিয়মে জড়িত থাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে মামলা এবং বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
কোম্পানি পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, আর্থিক অনিয়ম, বীমা পলিসি গ্রাহক ও বীমাকারীর স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড কর্তৃপক্ষের নজরে আসায় এ অপসারণ -বলে চিঠিতে জানানো হয়। তবে অপসারিত হলেও কোম্পানি পরিচালনায় আর্থিক অনিয়ম ও অন্যান্য দায় থেকে তিনি অব্যহতি পাবেন না বলেও এতে জানানো হয়।
ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে হেমায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে ভোগদখলে রাখা এবং মিথ্যা তথ্য সম্বলিত সম্পদ বিবরণী দাখিলের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে। একইসঙ্গে তার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বলে কর্তৃপক্ষের নিকট তথ্য রয়েছে।
ফলে বীমা আইন ২০১০ এর ৫০ ধারা মোতাবেক বীমা পলিসি গ্রাহকের স্বার্থ নিশ্চিত করতে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্লাহকে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখ থেকে কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে হেমায়েত উল্ল্যাহ সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাকে অপসারণ করা হয়েছে বিষয়টি সত্য। তবে চিঠি অফিসে থাকায় কোন কারণে অপসারণ তা এই মুহুর্তে বলতে পারছি না। বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার সত্যতা জানতে চাইলে বলেন- আমার ধানমন্ডির বাড়িতে আগুন লাগার কারণে পাসপোর্টসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি পুড়ে যায়, তাই বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই। এ সময় নিজে ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়িতে আগুন লাগানোর গুঞ্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন- বাড়ি নিজে পোড়াতে যাবো কেন? এটা তো সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্যার আমাকে পারফরম্যান্স বোনাস হিসেবে উপহার দিয়েছেন। এটা পুড়িয়ে তো কোন লাভ নেই।
হেমায়েত উল্ল্যাহকে অপসারণ এসইসির নতুন পর্ষদের কাজে মন্থরতা সৃষ্টি করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন- এখানে ব্যক্তি নয়, পেপারসই ভিত্তিতে তদন্ত হবে। তাকে দায় থেকে মুক্তি দেয়া হয়নি। ভবিষ্যতে আরো কোন বিষয় বেরিয়ে আসলে যেখানেই থাকুন না কেন তাকে জবাব দিতে হবে। এছাড়া অপসারণের আগে নতুন পর্ষদের সাথে আলোচনা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে বলেন- এটা আইডিআরএর এখতিয়ার। এ নিয়ে তাদের সাথে কথা বলার সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, ব্যাপক আর্থিক অনিয়মে সম্প্রতি ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পর্ষদ ভেঙ্গে নতুন পর্ষদ বসায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর আগে বিএসইসির অনুসন্ধানে ফারইস্টের সাবেক দুই চেয়ারম্যান এম এ খালেক ও নজরুল ইসলাম কর্তৃক হাজার কোটি টাকা লুটপাটের তথ্য উদঘাটিত হয়। এসবের সাথে কোম্পানির সিইও হেমায়েত উল্ল্যাহর সম্পৃক্ততাও তদন্তে উঠে আসে।
দুদক সূত্রে এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে হেমায়েত উল্ল্যাহর ধানমন্ডি, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, উত্তরা, বনশ্রী, বাসাবো, মেরাদিয়া, খিলগাঁও ও মালিবাগে একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি থাকার বিষয়ে জানা যায়। এর বাইরে তিনি ধানমন্ডিতে একটি প্যাকেজিং কারখানাসহ গাজিপুর বোর্ডবাজার, গাইবান্ধা, নোয়াখালী ও ভোলায় একাধিক কারখানার মালিক। হেমায়েত উল্ল্যাহ ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সিইও হিসেবে ২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পান।
Posted ১২:১৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
bankbimaarthonity.com | saed khan