নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট | 195 বার পঠিত
প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে মৌলভীবাজার জেলার প্রেমনগর চা বাগানের ৫ শতাধিক গাছ কাটার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গত ১ নভেম্বর দুপুরে মৌলভীবাজার ফরেস্ট রেঞ্জার (বন বিভাগ) অফিসের কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে প্রেমনগর চা বাগানের ১২ নং সেকশন থেকে ১৬৫ গাছের ৫৫০ টি বল্লী জব্দ করেন। জব্দকৃত গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে মূল্যবান একাশি, মনিপুল ও বেলজিয়াম জাতের। এই গাছের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা।
এনটিসিতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ভয়াবহ দুর্নীতি, লুটপাট, স্টোরের মালামাল চুরির পাশাপাশি এবার চা বাগানের শত শত গাছ কেটে পাচারের মহোৎসব চলছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বিভিন্ন দুর্নীতির তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) বিভিন্ন সংস্থায় অভিযোগের পাহাড় জমলেও টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের। সম্প্রতি প্রেমনগর চা বাগানের ৫১০ টি গাছ কাটার ঘটনা ওই এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। দায়িত্বরত বাগান ম্যানেজার মাহবুবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোন জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় প্রভাবশালী মালিক ও পরিচালকদের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ওই ঘটনায় গত ২ নভেম্বর বিকেলে বাগানের ম্যানেজার মৌলভীবাজার সদর থানায় একটি জিডি করেন। ঘটনার এক সপ্তাহ পর গত ৭ নভেম্বর মৌলভীবাজার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বন আদালতে ফরেস্ট রেঞ্জার (বন বিভাগ) মজনু প্রামানিক বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামী করে মামলা করলেও তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
মামলার বিষয়ে দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতির প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলে মজনু প্রামানিক জানান, এই মামলায় ন্যাশনাল টি কোম্পানির প্রেমনগর চা বাগানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাক্ষি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আদালত থেকে এখনো আদেশ জারি করা হয়নি। তিনি আরও জানান, গত ১ নভেম্বর দুপুরে বন বিভাগের কর্মকর্তারা প্রেমনগর চা বাগানের ১২ নং সেকশনে অভিযান চালিয়ে ১৬৫ গাছের ৫৫০ টি বল্লী বা গোলকাঠ জব্দ করে। ২ নভেম্বর গাছগুলো বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তিনি জানান, আদালতের নির্দেশে গাছ কাটার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত এবং আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হুমায়ুন কবির নামে স্থানীয় সাংবাদিকের তথ্য মতে, প্রেমনগর চা বাগানের ১২ নং সেকশন থেকে ৫৫০ টি বল্লী জব্দের ছবিসহ সংবাদটি এনটিসির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেনকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করা হয়। পরে এ ঘটনায় এনটিসির পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে প্রেমনগর চা বাগানের ম্যানেজার মাহবুবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোম্পানির পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে এনটিসির সাতছড়ি বাগান থেকে ৬টি গাছ চুরির অভিযোগে বাগানের সহকারী ম্যানেজার আনোয়ার হোসেনকে (আনা মিয়া) চাকুিরচ্যুত করা হয়েছিল। কিন্তু প্রেমনগর চা বাগানের ১৬৫ টি গাছ কাটার দায়ে বাগানের ম্যানেজার মাহবুবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে স্থানীয় সাংবাদিক হুমায়ুন কবির জানান। বরং গাছ কাটার ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার নানা চেষ্টা করা হচ্ছে।
এসব বিষয়ে দৈনিক ব্যাংক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পক্ষ থেকে বাগান ম্যানেজার মাহবুবুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে একাধিবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরে কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মুসার সাথে চেষ্টা করা হয়, তিনিও ফোন ধরেননি। কোম্পানির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেনকে ফোন করা হলে তিনিও কল রিসিভ করেননি।
Posted ৭:৫৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৩
bankbimaarthonity.com | rina sristy