নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪ | প্রিন্ট | 101 বার পঠিত
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বরখাস্তকৃত শীর্ষ পাঁচ কর্মকর্তাকে স্বপদে পুনর্বহালের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছেন কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসময় তারা সোনালী লাইফের প্রশাসকের পদত্যাগও দাবি করেন। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সকাল থেকে তারা কর্মবিরতি শুরু করে। এতে স্থবির হয়ে পড়ে কোম্পানির স্বাভাবিক কার্যক্রম।
কর্মবিরতিপালনকারীরা বলেছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এর আগে, গত রোববার কোম্পানির শীর্ষ পাঁচ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেন প্রশাসক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফেরদৌস। তাদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, শৃঙ্খলা ভঙ্গ, সনদ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়।
তবে বরখাস্তকৃতরা এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করে বলেন, প্রশাসক প্রতিহিংসামূলকভাবে তাদের বিরুদ্ধে বরখাস্তের আদেশ জারি করেছেন।
বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন- অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহিল কাফী, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা, সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মো. আজিম এবং সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মঞ্জুর মোর্শেদ।
এর আগে গত ২১ এপ্রিল সোনালী লাইফের ১৮৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে সাসপেন্ড করে প্রশাসক নিয়োগ করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
এদিন আন্দোলনকারী কর্মকর্তারা প্রশাসককে একটি স্মারকলিপি দিয়েছে। ওই স্মারকলিপিতে গত ২ মাসে প্রশাসকের নেয়া নানান পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। বলা হয়, অনৈতিক, অনভিপ্রেত, দূরভীসন্ধিমূলক পদক্ষেপের কারণে সোনালী লাইফ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তারা ৬টি দাবি জানান।
দাবিগুলো হলো- ১. সব এফএ, ইউএম ও বিএমদের বকেয়া পাওনা দ্রুত পরিশোধ করতে হবে। ২. নিরপেক্ষ অডিট কোম্পানি দিয়ে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ অডিট সম্পন্ন করে রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে। ৩. স্যালারি পলিসি কার্যকর করার ক্ষেত্রে অন্যান্য জীবন বীমা কোম্পানির প্রচলিত সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় রেখে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিয়ম যথাযথ প্রতি পালনের সাপেক্ষে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। ৪. মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত উদ্যোগ বাস্তবায়নের লক্ষে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহিল কাফী, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা, সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মো. আজিম এবং সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মঞ্জুর মোর্শেদকে দ্রুত পদে বহাল করতে হবে। ৫. হেড অফিসের স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিশেষ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিয়োগকৃত অস্ত্রধারী আনসার সদস্যদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে এবং ৬. আইডিআরএর’র প্রশাসক নিয়োগপত্রের ৯৫(১) ধারার বাইরে স্বেচ্ছাচারী কোনো পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা যাবে না। ইচ্ছামত নিয়োগ ও বরখান্ত বন্ধ করতে হবে।
সোনালী লাইফের এএমডি সাহেল রহমান বলেন, সোনালী লাইফের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত গ্রাহকের কোনো অভিযোগ নেই। সঠিক সময়ে গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ গ্রাহক স্বার্থ ক্ষুন্ন করার অভিযোগে সোনালী লাইফে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে আইডিআরএ। এই নিয়োগটাই ছিল অবৈধ।
তিনি আরো বলেন, হাইকোর্ট যেখানে প্রশাসককে তদন্তের জন্য সময় দিয়েছিলো ২ মাস সেখানে ৩ মাস হয়ে গেলেও এখনো তদন্ত শেষ হয়নি। এ ছাড়াও সোনালী লাইফকে ধংস করার জন্য কর্মীদের বেতন-ভাতা বন্ধ করা হয়েছে, সেলস পলিসি বন্ধ করা হয়েছে। প্রশাসকের অদক্ষতার কারণে গত ৩ মাসে সোনালী লাইফের ব্যবসা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এই সমাবেশ করছি। প্রশাসককে অমান্য করার এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের যে অভিযোগ আনা হয়েছে সে আইন প্রশাসক নিজেই তৈরি করেছেন। তিনি আইডিআরএ’র আইনের বাইরে গিয়ে আমাদেরকে ছাঁটাই করছেন। তিনি (প্রশাসক) নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ করেছেন, সেলস পলিসি বন্ধ করেছেন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই করছেন। এটা করা তার কোনো এখতিয়ার নেই।
কোম্পানির এএমডি আরেফিন বাদল রনি বলেন, ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। সেলস পলিসি ও বেতন-ভাতাও বন্ধ করা হয়েছে অবৈধভাবে। জুলাই মাসে এসে তিনি (প্রশাসক) মার্চ মাসে জারি করা সার্কুলার বাতিল করেছেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
কর্মবিরতি প্রসঙ্গে প্রশাসক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফেরদৌস বলেন, কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে তার আন্দোলনে গেছে। তাদের বেতন-ভাতা বকেয়া নেই। আমাকে কিছু না জানিয়েই তারা কর্মবিরতিতে গেছে। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে যাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাদের প্ররোচনায়ই আজকের এই কর্মবিরতি। আমি বিশ্বাস করি অচিরেই তারা নিজ নিজ দায়িত্বে ফিরে আসবেন। সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীদের আন্দোলনে যাওয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। তাদের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা বহাল রয়েছে।
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, শুধু আইডিআরএ নয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকেও তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটিতে এত বড় বড় দুর্নীতি হয়েছে যে সঠিকভাবে সেগুলো তদন্ত করা না হলে সমগ্র বীমা খাত প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আইডিআরএ’র অনুমোদন সাপেক্ষে তদন্ত কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে কিছুটা সময় লাগছে।
Posted ১০:২৪ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪
bankbimaarthonity.com | rina sristy