বিবিএনিউজ.নেট | বৃহস্পতিবার, ০৪ এপ্রিল ২০১৯ | প্রিন্ট | 567 বার পঠিত
প্রতারণা, জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের মাধ্যমে ২৫৮ কোটি ৫৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুই ব্যবসায়ী ও অগ্রণী ব্যাংকের তিন ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানায় মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক নেয়ামুল আহসান গাজী। দুদকের জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য এ তথ্য জানিয়েছেন।
মামলার আসামিরা হলেন মাররীন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ডিজিএম ও আগ্রাবাদ শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক বেলায়েত হোসেন, সাবেক সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার রমিজ উদ্দিন ও সাবেক সিনিয়র অফিসার ত্রিপদ চাকমা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, অগ্রণী ব্যাংকের আগ্রাবাদ (জাহান ভবন) শাখা থেকে চট্টগ্রামের নূরজাহান গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মাররীন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ ২০১১ সালের ১০ মার্চ ঋণের আবেদন করেন। আবেদনে মালয়েশিয়া অথবা ইন্দোনেশিয়া থেকে ৩৫ হাজার টন ‘ক্রুড পামওলিন’ আমদানির জন্য ২০ শতাংশ মার্জিনে ১২০ দিন মেয়াদে প্রায় ৩ হাজার ২৭০ কোটি ৪ লাখ টাকার ঋণপত্র এবং মার্জিন অবশিষ্ট ২৬১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার টিআর ঋণ মঞ্জুরের কথা বলা হয়। ওই শাখার তত্কালীন সিনিয়র অফিসার ত্রিপদ চাকমা ও সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার রমিজ উদ্দিন এ-সংক্রান্ত ঋণ প্রস্তাব তৈরি করেন। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ক্রেডিট কমিটির মতামতের আলোকে ওই ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন দিলে অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে মঞ্জুরিপত্র দেয়া হয়।
মাররীন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেডের অনুকূলে ২০১১ সালের ১৩ অক্টোবর থেকে ২০১২ সালের ২৩ মার্চ পর্যন্ত আটটি টিআর (ট্রাস্ট রিসিপ্ট) ও তিনটি পিএডি (পেমেন্ট এগেইনস্ট ডকুমেন্ট) ঋণ বাবদ মোট ২৮০ কোটি ৭২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৭৩ টাকা বিতরণ করে অগ্রণী ব্যাংক। ঋণপত্রের বিপরীতে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান আটটি আমদানি দলিলের প্রয়োজনীয় মার্জিন ব্যাংকের শাখায় জমা করে মূল দলিল দিয়ে আমদানিকৃত মালপত্র খালাস করে। কিন্তু তিনটি আমদানি বিলের মূল দলিল ব্যাংকে থাকা অবস্থায় মাররীন ভেজিটেবল প্রতারণার মাধ্যমে জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে ৯৮ কোটি ২৭ লাখ টাকার মালপত্র চট্টগ্রাম কাস্টমস থেকে ছাড় করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি মার্জিন ও অন্যান্য খাতে মোট ২২ কোটি ১৬ লাখ ২২ হাজার টাকা জমা দেয়। বাকি ২৫৮ কোটি ৫৬ লাখ ১৬ হাজার ৩৭৩ টাকা আত্মসাৎ করে।
দুদক বলছে, নূরজাহান গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মাররীন ও জাসমীর ভেজিটেবল অয়েলসের কাছে অগ্রণী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় ২০১১ সালের ১ মে পর্যন্ত ২৩৩ কোটি ৫১ লাখ টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ অনাদায়ী ছিল। নতুন ঋণের মঞ্জুরিপত্রে ঋণ সুবিধা কার্যকরের আগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় টিআর ঋণের মেয়াদোত্তীর্ণ দায় পরিশোধের শর্ত ছিল। কিন্তু তা প্রতিপালন না করেই মাররীন ভেজিটেবল অয়েলসকে ২৮০ কোটি ৭২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৭৩ টাকা ঋণ দেয়া হয়।
ঋণ বিতরণে আরো অনিয়মের উল্লেখ করে সংস্থাটি জানিয়েছে, ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় সহজে নগদায়নযোগ্য তরল সম্পদ অথবা কেবল শহর এলাকায় ঋণের অর্থের দ্বিগুণ মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি জামানত রাখার নির্দেশনা থাকলেও তা অনুসরণ করা হয়নি। জামানত হিসেবে শুধু টিআরের সমপরিমাণ চেক (অগ্রিম তারিখসংবলিত) গ্রহণ করেই ওই ঋণ দেয়া হয়। কিন্তু গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে প্রয়োজনীয় টাকা না থাকায় চেক নগদায়ন করে ঋণের টাকা আদায় করা সম্ভব হয়নি। ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের কাছে কোনো সহায়ক জামানত না থাকা এবং ওই ঋণের টাকা আদায় করতে না পারায় সরকারের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের কর্মকর্তারা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে অথবা অন্যকে আর্থিকভাবে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশ্যে কাজ করেছেন।
Posted ৩:০১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ এপ্রিল ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed