নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪ | প্রিন্ট | 64 বার পঠিত
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই ‘বিপাকে’ পড়েছেন সাবেক ব্যাংকার খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
গত ১৮ আগস্ট তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ‘তড়িঘড়ি’ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন; যা নানাভাবে সমালোচিত হচ্ছে। এরমধ্যে কমিশনার এটিএম তারিকুজ্জামানকে পদত্যাগে ‘বাধ্য’ করা ও শেয়ার কারসাজিসহ বিভিন্ন কারণে জরিমানা অন্যতম। এছাড়া হুট করে তালিকাভুক্ত ২৭ কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেওয়ায় বিপদ বেড়েছে রাশেদ মাকসুদ কমিশনের।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, খন্দকার রাশেদ মাকসুদ দায়িত্ব নেওয়ার পর গত দেড় মাসে কমিশন ৩৩ কোম্পানি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। ৬০টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) জব্দসহ বিভিন্ন কারণে ৪৩১ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বিশাল পরিমাণের এই জরিমানার ফলে বাজারে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে। কারণ হিসেবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই জরিমানা করা হয়েছে ‘অসময়ে’। এতে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে পুঁজিবাজারে। ফলে পতন আরও দীর্ঘ হচ্ছে।
দীর্ঘ পতনের কারণে গত দেড় মাসে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারিয়েছে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। এতে ফুঁসে উঠেছে তারা। এ জন্য বিএসইসি চেয়ারম্যানসহ পুরো কমিশনের পদত্যাগ চেয়ে বৃহস্পতিবার বিএসইসি ভবনে তালা দেয় বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে অর্থপাচারে অভিযুক্ত সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খানের সঙ্গে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেড়িয়েছে। এতে নতুন করে চাপে পড়েছেন তিনি।
তবে এসব বিষয় নিয়ে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে কল দেওয়া হলেও রিসিভ করেননি। সামিটের আজিজ খানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি জানতে চেয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো উত্তর মেলেনি।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার ৫ দিন পর ১০ আগস্ট বিএসইসির চেয়ারম্যান পদ থেকে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম পদত্যাগ করেন। এর দুদিন পরে ১২ আগস্ট পদত্যাগ করেন কমিশনার অধ্যাপক ড. শামসুদ্দিন আহমেদ ও ড. রুমানা ইসলাম। তারপর গত ১৮ আগস্ট খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে চেয়ারম্যান এবং ২৮ আগস্ট মো. আলী আকবরকে ও ৩ সেপ্টেম্বর ফারজানা লালারুখকে বিএসইসির কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশেদ মাকসুদের কমিশন দেড় মাসে ২৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে। এছাড়া ৬০টি বিও হিসাব জব্দ, পুরাতন ইস্যুতে ২৭ কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে প্রেরণ, ৯ কোম্পানির আইপিও/আরপিও ফান্ড ব্যবহার নিয়ে তদন্ত, ২৪ কোম্পানির অনিয়ম ও দর বৃদ্ধি নিয়ে তদন্ত এবং সালমান এফ রহমান, এস আলম ও তাদের পরিবারের মালিকানাধীন কোম্পানি নিয়ে তদন্ত করার যে সিদ্ধান্ত কমিশন নিয়েছে তা সময়োপযোগী হয়নি।
তাদের ভাষ্য, এই সিদ্ধান্তগুলো আরও কিছুটা সময় নিয়ে করলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তো না।
তারা বলেন, নতুন কমিশনের নিয়োগের দিন থেকে আজ (৩ অক্টোবর) পর্যন্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে প্রায় সাড়ে চারশ পয়েন্ট। এর প্রভাবে বাজার মূলধন কমেছে বা বিনিয়োগকারীরা ৩৬ হাজার ৯১৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ হারিয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা মাঠে নেমে চেয়ারম্যানসহ কমিশনের পদত্যাগ দাবি করছে।
তবে বিনিয়োগকারীদের নামে যারা বিএসইসির ভবন ঘেরাও করেছে, বা সামাজিক যোগাযোগ মাধমে লেখালেখি করছে তারা প্রকৃত বিনিয়োগকারী নয় বলে দাবি করেছেন বিএসইসির একাধিক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করা প্রায় সবাই ট্রেডার, তাদের বিনিয়োগকারী বলা ঠিক হবে না। এরা মূলত স্বল্প সময়ে গেইন করার জন্য মার্কেটে এসেছেন। পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন থাকবেই- এই সত্য কেউ না মানতে পারলে তাকে বিনিয়োগকারী কীভাবে বলা যায়?
পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ দেখা গেছে ব্রোকার হাউজ সংশ্লিষ্টদেরও। তাদের অনেকেই খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে ‘অদূরদর্শী’ ও ‘অনভিজ্ঞ’ দাবি করে বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ সরাসরি কখনো কাজ করেননি। তিনি পুরোদস্তুর একজন ব্যাংকার। ফলে তিনি পুঁজিবাজারে পালস বুঝতে পারছেন না। যতদ্রুত তিনি পুঁজিবাজার বুঝবেন ততো তাড়াতাড়ি তার এবং আমাদের বিপদ কাটবে।
Posted ৮:৫৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪
bankbimaarthonity.com | rina sristy