নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪ | প্রিন্ট | 57 বার পঠিত
ন্যাশনাল টি কোম্পানিতে দীর্ঘ দিন ধরে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবীর হোসেনের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট। চৌধুরী নাফিজ সরাফত, মোহাম্মদ আতিফ খালেদ, সৈয়দ মাহমুদ হাসান, মোল্লা গোলাম মোহাম্মদের সমন্বয়ে গঠিত এ সিন্ডিকেটের বিপক্ষে কথা বলতে গেলেই হারাতে হতো চাকরি। বাগান থেকে শুরু করে হেড অফিসের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী এই সিন্ডিকেটের ভয়ে টু শব্দ করতে পারতো না।
এ সুযোগে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহমুদ হাসান ও কোম্পানি সচিব মোল্লা গোলাম মোহাম্মদ গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা বাইরে পাচার করে এনটিসিকে লোকসানি কোম্পানিতে পরিণত করেছেন। শুধু তাই নয় পরস্পর যোগসাজশে কোম্পানির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তাদের আজ্ঞাবহ একটি প্রতিষ্ঠানকে দিতে চেয়েছিলেন। গত ২৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত বোর্ডের ৬৭৬তম সভার কার্যবিবরনীতে বিষয়টি নজরে আসে।
চৌধুরী নাফিজ সরাফতের নেতৃত্বে ফিনলের পরিচালক শওকত আলী চৌধুরী ও নাদের খানের সমন্বয়ে আরো একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠে। সৈয়দ মাহমুদ হাসান ও মোল্লা গোলাম মোহাম্মদের সহযোগিতায় এই সিন্ডিকেট কোম্পানির প্রায় ১৫ শতাংশ শেয়ার ক্রয় করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় প্রদানকারী বিচারক গোলাম রাসুলের আপন শ্যালক কোম্পানি সচিব মোল্লা গোলাম মোহাম্মদ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পিএস, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের দোসর ও ছাত্রলীগ নেত্রী নিশাত রাসুল মোল্লা গোলাম মোহাম্মদের আপন ভাগ্নী। আর এ সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে মোল্লা গোলাম মোহাম্মদ এনটিসিতে এক দানবীয় রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠত করেন। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতো না। গত ৫ আগস্ট দেশের পট পরিবর্তনের পর শেখ কবীর হোসেন, চৌধুরী নাফিজ সারাফাত, মোহাম্মদ আতিফ খালেদ কোম্পানির পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করে পালিয়ে যান।
পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত এমডি সৈয়দ মাহমুদ হাসান ও কোম্পানি সচিব মোল্লা গোলাম মোহাম্মদ- চৌধুরী নাফিজ সরাফত, শওকত আলী চৌধুরী ও নাদের খানের সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেটে যোগদান করেন এবং নিজেদের দুর্নীতি আড়াল করার উদ্দেশ্যে নাদের খান গংকে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে নিয়ে আসার তোড়জোড় করেন।
এ সিন্ডিকেটকে খুশি করার জন্য তারা পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন না নিয়ে কোনো রকম আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে গত ২ অক্টোবর তাদের বিও অ্যাকাউন্টে প্লেসমেন্ট শেয়ার বন্টন করে দেন। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, সৈয়দ মাহমুদ হাসান ও মোল্লা গোলাম মোহাম্মদ বিশাল অঙ্কের নগদ অর্থের বিনিময়ে শওকত আলী চৌধুরী গংকে অনৈতিক পন্থায় বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন। ইতিমধ্যে যুগান্তর, প্রথম আলোসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ন্যাশনাল টি কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ার বন্টন সংক্রান্ত দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশিত হলে টনক নড়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশনের (বিএসইসি)। তৎপর সংস্থাটি তড়িঘড়ি করে তদন্ত কমিটি গঠন সহ প্লেসমেন্ট শেয়ার সাবস্ক্রিপশন সময়সীমা ৩১ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত বর্ধিত করে।
সৈয়দ মাহমুদ হাসান ও মোল্লা গোলাম মোহাম্মদের সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির ফলে কোম্পানির ১২টি চা বাগানে চলা ধর্মঘটে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে উৎপাদিত চায়ের মান এতো খারাপ যে নীলামেও তা বিক্রি হচ্ছেনা। বাগান সুত্রে জানা যায়, প্রায় ২৭ লাখ কেজি অবিক্রিত চা বাগানের গুদামে পড়ে রয়েছে। যেগুলোর গুণগত মান এতোটাই খারাপ যে পরবর্তী বছরে এই চা বিক্রি করাও কস্টসাধ্য হবে। সর্বনিম্ন মুল্য ১৬০ টাকা দরে গত কয়েকটি নিলামে কোম্পানির কিছু চা বিক্রি হয়েছে।
গত বছরের তুলনায় চট্টগ্রাম নীলামে প্রায় কোম্পানির চার লাখ কেজি চা কম বিক্রি হয়েছে। কোম্পানির বর্তমান আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। ঋণ প্রদানকারী কৃষি ব্যাংকের কাছে কোম্পানির দেনা প্রায় চারশো কোটি টাকা।
আবার শ্রমিকদের মজুরি ৭ সপ্তাহের দেনা প্রায় ১৭ কোটি টাকা, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন বকেয়া ১ কোটি টাকা, শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড দেনা ৯ কোটি টাকা, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গ্রাচুইটির দেনা ৫ কোটি টাকা, কেমিক্যালসহ পার্টির দেনা ৫ কোটি টাকা। এছাড়া জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৫ মাসের বিদ্যুৎ-গ্যাস বিল বকেয়া রয়েছে। পক্ষান্তরে নিম্নমানের চা উৎপাদনের কারণে কোম্পানির গড় বিক্রয় মুল্য জাতীয় গড়ের চেয়ে ৩৩ টাকা কম।
এদিকে সৈয়দ মাহমুদ হাসান ও মোল্লা গোলাম মোহাম্মদের বিরুদ্ধে প্লেসমেন্ট শেয়ার কেলেঙ্কারির শতভাগ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও পরিচালনা পর্ষদ কেনো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছেন বিনিয়োগকারীরা।
Posted ৮:৩৮ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪
bankbimaarthonity.com | rina sristy