সোমবার ১০ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫ কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

Ad
x
আইডিআরএ’র প্রতিবেদন

গ্রাহকদের বকেয়া দাবির পরিমাণ কমেছে লাইফ বীমায়

  |   সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   79 বার পঠিত

গ্রাহকদের বকেয়া দাবির পরিমাণ কমেছে লাইফ বীমায়

২০২৪ সাল শেষে দেশের লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর কাছে গ্রাহকদের বকেয়া দাবির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৩৭৫ কোটি ৬ লাখ টাকা। ২০২৫ সালের জুন শেষে এই বকেয়া দাবির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬২৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত ৬ মাসে গ্রাহকদের বকেয়া দাবির পরিমাণ ৭৪৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বা ১৭.০৭ শতাংশ কমেছে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র প্রকাশিত অনিরীক্ষিত বার্ষিক ও ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় উঠে এসেছে এই চিত্র। ৩৬টি লাইফ বীমা কোম্পানির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কোন তথ্য নেই।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বকেয়া বীমা দাবির পরিমাণ কমে আসাটা অবশ্যই ইতিবাচক। তবে এক্ষেত্রে আইডিআরএ’র আরো কার্যকর ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। প্রতি কোয়ার্টারে যদি দাবি পরিশোধ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় তাহলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয় এবং সে অনুসারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কোম্পানিগুলো যদি নিয়মিত দাবি পরিশোধ করে তাহলে গ্রাহকদের আস্থা আরো বাড়বে।

আইডিআরএ’র তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর কাছে গ্রাহকদের উত্থাপিত দাবির পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৯৪৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে গত ৬ মাসে কোম্পানিগুলো ৪ হাজার ৩১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা দাবি পরিশোধ করেছে। এই হিসাবে লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর কাছে এখনো গ্রাহকদের পাওনা বীমা দাবির পরিমাণ ৩ হাজার ৬২৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

লাইফ বীমা খাতের মোট বকেয়া দাবির ৭৫ শতাংশই ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির, যার পরিমাণ ২ হাজার ৭৪২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর পরের অবস্থানে রয়েছে পদ্মা ইসলামী লাইফ; কোম্পানিটির কাছে গ্রাহকদের পাওনা দাবির পরিমাণ ২৪৬ কোটি ২ লাখ টাকা। আর প্রোগ্রেসিভ লাইফের কাছে গ্রাহকদের পাওনা বীমা দাবি বকেয়া রয়েছে ১৫৫ কোটি ২ লাখ টাকা।

২০২৫ সালের প্রথমার্ধে সর্বোচ্চ বীমা দাবি পরিশোধ করেছে মেটলাইফ বাংলাদেশ, ৬৩২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ন্যাশনাল লাইফ, ৩৩৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। বীমা দাবি পরিশোধে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ডেল্টা লাইফ, ১৮৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে জীবন বীমা করপোরেশন, ১৬৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে গার্ডিয়ান লাইফ, ১১৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক তথা জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ এই ৩ মাসে লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো মোট ২ হাজার ৩৬৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা দাবি পরিশোধ করেছে। আর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক তথা এপ্রিল-জুন এই ৩ মাসে পরিশোধ করেছে ১ হাজার ৯৪৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকার বীমা দাবি।

অপরদিকে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে নতুন বীমা দাবি উত্থাপন হয় ৩ হাজার ৫৬৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রথম ত্রৈমাসিকে ২ হাজার কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ১ হাজার ৫৬৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকার নতুন বীমা দাবি উত্থাপন করে লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর গ্রাহকরা।

এর আগে ২০২৪ সালে দেশের লাইফ বীমা খাতে পুঞ্জীভূত বকেয়া দাবির পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৯৬৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে পরিশোধ করা হয় ৮ হাজার ৫৯০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। সেই হিসাবে ২০২৫ সালের শুরুতে ৪ হাজার ৩৭৫ কোটি ৬ লাখ টাকার বীমা দাবি বকেয়া ছিল। গেলো বছর লাইফ বীমা খাতে দাবি পরিশোধের হার ছিল ৬৬.২৬%।

এ বিষয়ে মুখ্য নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম (বিআইএফ)’র জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও জেনিথ ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান বলেন, বীমা কোম্পানিগুলো প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ায় দ্রুত দাবি পরিশোধ হচ্ছে এবং দাবি পরিশোধের হারও বাড়ছে। কিছু কোম্পানি অনলাইন মাধ্যমে (মোবাইল ব্যাংকিং, বিইএফটিএন) দাবি পরিশোধ করায় এখন গ্রাহক হয়রানিও কমেছে আগের চেয়ে।

তিনি আরো বলেন, লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর অনেক টাকা ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানিতে আটকে রয়েছে, বিশেষ করে এস আলম নিয়ন্তিত ব্যাংকগুলোতে। এক্সিম ব্যাংকসহ একীভূত হতে যাওয়া দুর্বল ৫ ব্যাংকে বেশিরভাগ টাকা আটকে রয়েছে। এ ছাড়াও রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করে লোকসানে রয়েছে অনেক কোম্পানি। জমি বিক্রি হচ্ছে না, আবার সঠিক দামও পাচ্ছে না বলে অনেক কোম্পানি দাবি পরিশোধ করতে পারছে না।

বিশিষ্ট বীমা ব্যক্তিত্ব চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জিয়াউল হক বলেন, বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। তবে এক্ষেত্রে আইডিআরএ’র আরো কার্যকরী ভূমিকা আসা উচিত। প্রতি কোয়ার্টারে যদি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় তাহলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয় এবং সে অনুসারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

তিনি আরো বলেন, বীমা দাবি পরিশোধ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এবং এটি একটি নিয়মিত সেবার অংশ। কোম্পানিগুলো যদি নিয়মিত দাবি পরিশোধ করে তাহলে গ্রাহকদের আস্থা বাড়বে। এক্ষেত্রে দ্রুত বীমা দাবি পরিশোধ ও গ্রাহকেসেবার মান আরো বাড়াতে হবে।

এস এম জিয়াউল হক বলেন, আসিয়ান দেশগুলোতে বীমা সম্প্রসারণের ওপর নির্ভর করছে তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। অথচ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বীমার বিষয়টি মাথায় রাখা হয় না। এখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিটা ব্যাংক ও শিল্প নির্ভর। তবে সময় এসেছে বীমা খাতের প্রবৃদ্ধির ওপর নজর দেয়ার।

 

Facebook Comments Box

Posted ২:২৪ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Page 1

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।